ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

উৎপাদন নয়, ইউরিয়া আমদানিতেই বেশি ঝোঁক

মফিজুল সাদিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২০৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৩, ২০১৬
উৎপাদন নয়, ইউরিয়া আমদানিতেই বেশি ঝোঁক

ঢাকা: চীনের সঙ্গে জি-টু-জি ভিত্তিতে শিগগিরই আরও ৭৫ হাজার মেট্রিক টন ইউরিয়া সার আমদানি করতে যাচ্ছে সরকার। তবে দেশে ইউরিয়া সারের উৎপাদন দিন দিন কমে যাচ্ছে।

অন্যদিকে বাড়ছে আমদানি।

 

আমদানির তুলনায় বর্তমানে দেশে ইউরিয়া সার উৎপাদিত হয় না বলা চলে। উৎপাদন কমিয়ে দিয়ে এ সার ব্যবহারে কৃষকদের নিরুৎসাহিত করাও হচ্ছে।
 
বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশন(বিসিআইসি) সূত্র জানায়, ছয়টি সরকারি কারখানার উৎপাদন ক্ষমতা ২৩ দশমিক ১৫ লাখ মেট্রিক টন হলেও প্রয়োজনীয় গ্যাস সরবরাহ না করার কারণে উৎপাদন হ্রাস পেয়ে ২০১৪ সালে ১০ লাখ টনে নেমে আসে। ২০১৫ সালে ইউরিয়া উপাদিত হয়েছে মাত্র ৯ লাখ টন। ২০১৬ সালে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রাও কমিয়ে নির্ধারণ করা হয়েছে ৭ দশমিক ৫০ লাখ মেট্রিক টন।

 

বিসিআইসি’র পরিচালক(উৎপাদন ও গবেষণা) আলতাফ উদ্দিন শেখ বাংলানিউজকে বলেন, ‘ইউরিয়া সার কারখানাগুলো পুরনো হয়ে গেছে। যে কারণে সঠিকভাবে উৎপাদন করতে পারছি না। এর ফলে প্রতি বছরই ইউরিয়া উৎপাদন কমে যাচ্ছে। কারখানাগুলোতে ছয়মাস গ্যাস পাই, ছয় মাস বন্ধ থাকে। তাহলে কিভাবে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ইউরিয়া সার উৎপাদন করবো? বিদ্যুত উৎপাদনে বেশি গুরুত্ব দেওয়ায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। সার কারখানার গ্যাস নিয়ে গিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে’।
 
বিসিআইসি’র আশঙ্কা, কারখানায় প্রয়োজনীয় গ্যাস না পাওয়া গেলে ইউরিয়া সার উৎপাদন ক্ষমতা শূন্যের কোঠায় নেমে আসবে। পুরনো যেসব কারখানার উৎপাদন ক্ষমতা হ্রাস পেয়েছে, সেগুলোর সংস্কার এবং প্রয়োজনীয় প্রাকৃতিক গ্যাস সরবরাহ করে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি জরুরি বলেও জানায় বিসিআইসি।

কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ইউরিয়া সারের চাহিদা নির্ধারণ করা হয়েছে ২৮ লাখ মেট্রিক টন। এ চাহিদার বিপরীতে চলতি বছরে ইউরিয়া সারের মজুদ রয়েছে মাত্র ১ লাখ ১৫ হাজার মেট্রিক টন। বাকি ২৬ দশমিক ০৫ লাখ মেট্রিক টন ইউরিয়া আমদানি করতে হবে। এর মধ্যে ১৪ দশমিক ৫৫ লাখ মেট্রিক টন জি-টু-জি চুক্তির মাধ্যমে এবং ৪ লাখ মেট্রিক টন আন্তর্জাতিক দরপত্রের মাধ্যমে আমদানি করা হবে। বাকি সাড়ে ৭ লাখ মেট্রিক টন দেশে উৎপাদন করা হবে।  
 
দেশে নিরাপদ ইউরিয়া সারের মজুদ গড়ে তোলার লক্ষ্যে রাষ্ট্রীয় চুক্তির আওতায় সৌদি আরব, কাতার ও সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে আমদানি করা হচ্ছে। অথচ দেশি উৎপাদন বাড়ানোর কোনো উদ্যোগ নেই।   এ দেশগুলোর পাশাপাশি এবার চীনের সঙ্গে জি-টু-জি ভিত্তিতে আরও ৭৫ হাজার মেট্রিক টন ইউরিয়া সার আমদানির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।
 
চীনের সরকারি প্রতিষ্ঠান Shanxi Yangmei Fengxi Fertilizer Industry গ্রুপ কোম্পানির কাছ থেকে ইউরিয়া সার নেওয়া হবে। এ বিষয়ে চীনের সঙ্গে একটি খসড়া চুক্তি হয়েছে। চুক্তির কারিগরি নির্দেশ অনুযায়ী এফওবি’র(ফ্রি অন বোর্ড) ভিত্তিতে ইউরিয়া সার আমদানি করতে হবে। সারের দর আন্তর্জাতিক বুলেটিন অনুযায়ী দাম নির্ধারণ করা হবে। এফওবি দরপত্রের সঙ্গে ব্যাগিং চার্জ ১০ মার্কিন ডলার যুক্ত করে সারের দর নির্ধারণ করা হবে এবং বাংলাদেশকে সে মূল্য পরিশোধ করতে হবে।
 
চুক্তি মূল্যের ওপরে বাংলাদেশের কোনো সিডিউল ব্যাংকের মাধ্যমে সরবরাহকারীর কাছ থেকে ১০ শতাংশ পারফরমেন্স গ্যারান্টি(পিজি) নেওয়া হবে। চীনের সঙ্গে নানা শর্ত মেনে নিয়ে কেনা হবে ওই ৭৫ হাজার মেট্রিক টন ইউরিয়া।
 
অন্যদিকে কৃষি মন্ত্রণালয় জানায়, চীনের ইউরিয়া সার ব্যবহার করতে চান না কৃষকরা। আগামীতে যেন তারা কম ইউরিয়া ব্যবহার করেন, সে লক্ষ্যে নানা উদ্যোগ নেওয়া হবে। যে কারণে সামনে ২৮ লাখ মেট্রিক টন থেকে কমিয়ে ইউরিয়া সার ব্যবহারের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২৫ লাখ মেট্রিক টন।
 
কৃষি মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (সার ব্যবস্থাপনা ও মনিটরিং) পুলক রঞ্জন সাহা বলেন, ‘প্রতি বছর ইউরিয়া সারের উৎপাদন কমে যাচ্ছে। যে কারণে এ সারের ব্যবহার যেন কম হয়, সে লক্ষ্যে বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ করতে যাচ্ছি। তবে এ বিষয়ে চাষিদের বোঝাতে সময় লাগবে। চীন থেকে ইউরিয়া আমদানি করা হচ্ছে কেন জানি না। চাষিরা চীনের ইউরিয়া ব্যবহার করতে চান না। তারা যেন পরিমিত পরিমাণে ইউরিয়া ব্যবহার করেন, সে প্রশিক্ষণও দিচ্ছি। যে কারণে সামনে ইউরিয়া সার ব্যবহারের লক্ষ্যমাত্রা তিন লাখ মেট্রিক টন কমিয়ে আনা হয়েছে’।
 
বাংলাদেশ সময়: ১২০০  ঘণ্টা, এপ্রিল ১৩, ২০১৬
এমআইএস/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।