ঢাকা: ম্যাগি নুডলসে সীসাকাণ্ডের পর দুগ্ধজাত পণ্য নিয়ে নতুন করে বিপাকে পড়েছে নেসলে। সুইস ফুড জায়ান্ট নেসলের বাংলাদেশ শাখায় তৈরি সর্বশেষ বাজারজাত করা ৬০২৬০১৮৯২ সিরিয়ালের দুধ খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ছে শিশু।
এ লটের গুঁড়ো দুধে মেয়াদ থাকলেও কুসুম গরম পানিতে মেশানোর পর নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এমনকি তা পানির সঙ্গেও ভালোভাবে মিশছে না।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ২০১৬ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৭ সালের ডিসেম্বর পযর্ন্ত এ ব্যাচের দুধের মেয়াদ থাকা সত্ত্বেও তা খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ছে শিশুরা। এতে ক্রেতা অভিযোগের মুখে নগরীর বিভিন্ন চেইনশপ ও সুপারশপ নেসলের ন্যান-১ গুঁড়ো দুধ রাখছে না। অনেকে বেচাকেনাও বন্ধ করে দিয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে।
বৃহস্পতিবার (১২ মে) রাজধানীর মোহাম্মদপুর জাপান গার্ডেন সিটি এলাকায় সুপারশপ আগোরা’র আউটলেট ঘুরে ন্যান-১ এর কোনো দুধ পাওয়া যায়নি।
একই অবস্থা মোহাম্মদপুর রিং রোডের ‘আজমিরী বাজার’ সুপারশপে। ক্রেতাদের বিভিন্ন অভিযোগের মুখে নতুন করে নেসলের ন্যান-১ গুঁড়ো দুধ রাখছে না কর্তৃপক্ষ। অথচ ৪০০ গ্রাম ওজনের ন্যান-১ কিনতে ক্রেতাদের গুণতে হয় ৮৩০ টাকা।
ন্যান-১ না রাখা প্রসঙ্গে আজমিরী বাজার সুপারশপের সহকারী ম্যানেজার (প্রশাসন) মামুনুর রশিদ জানান, একের পর এক ক্রেতা অভিযোগের কারণে ন্যান-১ রাখা হচ্ছে না। ইনস্ট্যান্ট এ গুঁড়ো দুধের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ উঠেছে তার সুরাহা না হওয়া পযর্ন্ত আমরা এ শিশু খাদ্য রাখবো না।
তবে আগের লটের দু’একটা ন্যান-১ থাকতে পারে। গত একমাসে নতুন করে পণ্যটির অর্ডার দেওয়া হয়নি। নেসলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে দুধ পরীক্ষা করাতে ল্যাবে পাঠানো হয়েছে। এ বিষয়ে রিপোর্ট না আসা পযর্ন্ত কোনো দুধ নেওয়া হবে না বলেও জানান মামুনুর রশিদ।
তিনি বলেন, সব থেকে ছোট বাচ্চাদের জন্য ন্যান-১। অথচ দুধটি নষ্ট হওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। নেসলের পক্ষ থেকে বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে নেওয়ার কথা জানানো হয়েছে।
‘পুষ্টিবিদ থেকে শুরু করে নেসলেসহ সরকারি খাদ্য নিয়ন্ত্রক সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ন্যান-১ এর বিষয়ে খোঁজ-খবর নিয়ে গেছেন। ’
অনেক ক্রেতা ক্ষুব্ধ হয়ে গুঁড়ো দুধটির বিরুদ্ধে মামলা করার কথাও বলেছেন বলে জানান মামুনুর রশীদ।
সংশ্লিস্ট সূত্র জানান, ন্যান-১ খাওয়ানোর পর অসুস্থ হয়ে পড়েছে নগরীর মোহাম্মদপুরের রুমানা শারমিনের শিশু।
বাংলানিউজকে ক্ষুব্ধ এ মা বলেন, ‘আমার বাচ্চার বয়স সাড়ে চারমাস। ন্যান-১ খাওয়ানোর পর সে ব্যাপক অসুস্থ হয়ে পড়ে। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী দুধ পাল্টে দিয়েছি। এখন আল্লাহর রহমতে সে সুস্থ। ’
তিনি বলেন, আমার কাছে সব ধরনের কাগজপত্র আছে। ডাক্তারের প্রেসক্রিপশনে যাবতীয় তথ্য আছে। ক্ষতিপূরণের জন্য প্রয়োজনে মামলা করবো।
সচেতন এ অভিভাবক মনে করেন, ভেজাল পণ্য বিক্রির দায়ে ‘জে অ্যান্ড জে’র বিরুদ্ধে ১ হাজার ২৭৭টি মামলা হয়েছে। এজন্য প্রায় ১২ কোটি ৭০ লাখ ডলার জরিমানা করা হয়েছে কোম্পানিটিকে। নষ্ট দুধ বিক্রির দায়ে নেসলের বিরুদ্ধেও একই ধরনের মামলা হওয়া উচিত।
‘তা না হলে পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই কোম্পানিটি বাজারে নষ্ট দুধ বিক্রি করে যাবে। ছবি দেখলেই বোঝা যাবে আমার বাচ্চার আগের অবস্থা এবং বর্তমান অবস্থা। এসব কিছুর জন্য দায়ী নেসলের নষ্ট গুঁড়ো দুধ। ’
এ বিষয়ে নেসলে কর্তৃপক্ষ বলছে, অভিযোগ ওঠায় সবচেয়ে সংবেদনশীল ছোট বাচ্চার জন্য দুধটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে নদী নামে নেসলে বাংলাদেশের এক কর্মকর্তা জানান, অভিযোগের ভিত্তিতে দুধের স্যাম্পল সংগ্রহ করা হয়েছে। এগুলো আমাদের নিজস্ব ল্যাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। এ বিষয়ে যেকোনো তথ্য পরবর্তীতে জানানো হবে।
ইতোমধ্যে ভেজাল ন্যান-১ এর খোঁজে মাঠে নেমেছে বিএসটিআই, ভোক্তা অধিকার, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন ও বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের পরিচালক আমিরুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, নেসলের ন্যান-১ এর বিরুদ্ধে আমাদের কাছে অভিযোগ আসছে। সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নিচ্ছি। ইতোমধ্যেই ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকেও চিঠি দিয়ে বিষয়টি জানানো হয়েছে। তারাও বিষয়টি নিয়ে তদন্তে নেমেছে।
‘আমরা নিয়মিতভাবে বাজার মনিটরিং করছি। কিন্তু কয়েকটি চেইনশপে ঘুরে ন্যান-১ পাওয়া যায়নি, পেলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থাও নেওয়া হতো,’ বলেন তিনি।
**নেসলের ন্যানে শিশুদের স্বাস্থ্যহানি!
বাংলাদেশ সময়: ০৭৪২ ঘণ্টা, মে ১৫, ২০১৬
এমআইএস/ জেডএস