ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

বেনারশী পল্লীতে রাত জেগে শাড়ি বুনন

তাবারুল হক, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭১২ ঘণ্টা, জুন ২১, ২০১৬
বেনারশী পল্লীতে রাত জেগে শাড়ি বুনন ছবি:দীপু মালাকার- বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: সোমবার (২০ জুন) দিনগত রাত ২টা। রাজধানীর মিরপুরের বেনারশী পল্লীর সেকশন ১০ এর ব্লক-এ এলাকায় মুতাহারের মালিকানাধীন গদিঘরে (কারখানা) চলছে বেনারশী শাড়ি বোনার কাজ।

এই কারখানায় একসঙ্গে ১৮ জন শ্রমিক কাজ করতে পারেন। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত বেনারশী বোনার কাজ চলে এখানে। কারিগররা আপন মনে যত্ন করে বুনে যান এক একটি বেনারশী শাড়ি। শুধু এই গদিঘরেই নয়, মিরপুরের অন্যান্য কারখানাতেও রাতভর চলে শাড়ি বোনার কাজ।

ঈদ উপলক্ষে মুতাহারের গদিঘরে অনেকের সঙ্গে গভীর রাতে বেনারশী তৈরির কাজ করছিলেন মো. খোকন। জানতে চাইলে তিনি বলেন, রাত-দিন এক সপ্তাহ পরিশ্রম করলে একটি বেনারশী শাড়ি তৈরি করা যায়।
 
তিনি জানান, কারখানায় শাড়ি প্রস্তুত হলে তা বেনারশী পল্লীর শো রুমে ওঠানো হয়। সেখানে প্রতিটি বেনারশী শাড়ি সর্বনিম্ন ৮ ‍হাজার থেকে সর্বোচ্চ ১২ হাজার টাকায় বিক্রি হয়। আর কারিগর প্রতিটি শাড়ি প্রস্তুতের জন্য পারিশ্রমিক পেয়ে থাকেন মাত্র ১৫’শ থেকে ১৭’শ টাকা।
খোকন বলেন, সাত বছর বয়স থেকে এই কাজ শুরু করি, গত ১৫ বছর ধরে এই কাজ করে যাচ্ছি। এই সময়ের মধ্যে জীবন যাপনের ব্যয়ের পরিমাণ কয়েকগুণ বাড়লেও আমাদের শ্রমের দাম বাড়েনি। দৈনিক ১২-১৪ ঘণ্টা কাজ করে সপ্তাহ শেষে একটি শাড়ির কাজ শেষ করা যায়। এরপর মহাজন থেকে এক শাড়ি তৈরির জন্য দেড় হাজার টাকা পারিশ্রমিক পেয়ে থাকি। এই অর্থ দিয়ে সংসার চালানো দায়।

কারখানায় সুতো প্রক্রিয়াজাত করার কাজ করছিলেন মো. মোস্তফা। তিনি বলেন, এক সময় কম পারিশ্রমিক দিয়েও পরিবার-পরিজন নিয়ে জীবন-যাপন করা যেতো। কিন্তু এখন আর পারা যায় না। জীবনের ব্যয় বাড়লেও এই শিল্পের শ্রমের মূল্য বাড়েনি।
 
এজন্য কাজের ফাঁকে ফাঁকে পরিশ্রম করে প্রতি মাসে বাসায় একটি বেনারশী শাড়ি বুনে তা বাজারে বিক্রি করে বাড়তি আয় করে থাকেন বলেও জানান তিনি।
 
গভীর রাতেই ওই কারখানার পাশে দেখা হয় মিরপুর বেনারশী দোকান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. কাশেমের সঙ্গে।
 
তিনি বাংলানিউজকে জানান, এই পল্লীতে ১০৮টি বেনারশী শাড়ির শো’রুম রয়েছে। এসব শাড়ি এখন আর আগের মতো শুধুমাত্র মিরপুর পল্লীতেই তৈরি হয় না। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে গড়ে উঠেছে এসব শৈল্পিক কাজের কারখানা।

দেশের বিভিন্ন জেলা শহর থেকে এসব শাড়ি প্রস্তুত হয়ে মিরপুর পল্লীর বিভিন্ন শো’রুমে বিক্রি করা হয়। সিটি করপোরেশনের ট্যাক্স ও বিভিন্ন বিল, গ্যাস ও বিদ্যুৎ বাণিজ্যিকভাবে বিল পরিশোধ করাসহ বিভিন্ন কারণে ব্যয় বেড়ে গেছে। তারপরও তৈরি হওয়া এসব বেনারশীর চাহিদা ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে রয়েছে বলে জানান কাশেম।
 
বাংলাদেশ সময়: ০৬৫৫ ঘণ্টা, জুন ২১, ২০১৬
টিএইচ/এসআরএস/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।