ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

ধানের জমিতে শিম চাষে বেশি লাভের স্বপ্ন

নাসির উদ্দিন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৪৭ ঘণ্টা, আগস্ট ৩১, ২০১৬
ধানের জমিতে শিম চাষে বেশি লাভের স্বপ্ন ছবি: আবু বকর-বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

সিলেট: অঙ্কুর ভেদ করে জেগেছে সবুজ পাতা। সে নতুন পাতায় লুকিয়ে কৃষকের স্বপ্ন।

সেই স্বপ্নে বিভোর সিলেটের গোলাপগঞ্জের কৃষকরা। বাস্তব রূপ দিতে মাঠে ঘাম ঝরাচ্ছেন তারা।  

জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি শিম চাষের রেকর্ড এ গোলাপগঞ্জের। মাটির উর্বরতার জন্য এ অঞ্চলে শিমচাষ ভালো হয়। তাই গ্রামের লোকজন ভাদ্র মাসে ধান চাষের বদলে শিম চাষ করেন। এর মূল কারণ শিম চাষে অধিক মুনাফা।   

সরেজমিন গোলাপগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ধানের জমি, খেতের আইল বা রাস্তা সংলগ্ন খালি জায়গায় হচ্ছে শিম চাষ। মাঠের পর মাঠ মাচা বাধা। খালি নেই টিলার ঢালু স্থান। এমনকি বাড়ির আঙিনাও। সবখানেই রয়েছে চিরচেনা শীতের সবজি শিম খেত।  

কৃষকরা জানান, উপজেলার লক্ষণাবন্দের পুরকায়স্তবাজার, ধারাবহর, ঝাঁপা, রাখালগঞ্জ, লক্ষ্মীপাশা, নিমাধল, এলাহিগঞ্জসহ আশপাশের এলাকায় বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে কৃষি জমিতে হয় শিম খেত। শীতকালে স্থানীয় বাজারগুলো হয়ে ওঠে শিমের আড়ত। বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা পাইকাররা ওখানের জার থেকে ট্রাক ভর্তি করে শিম কেনেন।

 শীতের এই সবজি অনেকটা আগে বাজারে ওঠাতে ব্যস্ত কৃষকরা। এতে দাম বেশি মিলবে। তাই ফলনের অপেক্ষায় আশায় বুক বেঁধে তারা।

উপজেলার লক্ষণাবন্দ ইউনিয়নের উত্তরগাঁওয়ের কৃষক ফয়সল আহমদ বাংলানিউজকে বলেন, চারবছর ধরে ধানের জমিতে শিম খেত করছি। বেশি লাভ হয় এতে। এবার প্রায় আড়াই কেদার (৭৫ শতক) জমি খেত করতে ব্যয় হয়েছে ১০ হাজার টাকা।  

এখান থেকে অর্ধ লক্ষাধিক টাকার ফসল বিক্রি হবে বলে আশাবাদী তিনি।  অথচ এ পরিমাণ জায়গায় ধান খেত করলে মিলতো ১৮ থেকে ২০ হাজার টাকা।  

নিজের জমি না থাকায় বর্গা চাষ করে শিম খেত করেন একই গ্রামের জাহাঙ্গীর আলম। তিনি বাংলানিউজকে জানান, তাদের গ্রামে ৭০ থেকে ৮০ কেদার (প্রায় দুই হাজার ৪শ’ শতক) জমিতে শিম চাষ হয়।  প্রতি বছর শিম চাষ করে তিনি প্রায় দুই লক্ষাধিক টাকা আয় করেন।  

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, সিলেট অঞ্চলের মধ্যে সবচেয়ে বেশি শিম চাষ হয় গোলাপগঞ্জ, হবিগঞ্জের বাহুবল ও মাধবপুরে। বিভাগের চার জেলায় ৬ হাজার ৪শ’ ৯১ হেক্টর জমিতে শিম চাষ করা হয়েছে। এরমধ্যে সিলেটে ২ হাজার ৮শ’ ৪৫ হেক্টরে, মৌলভীবাজারে ৭শ’ ৯৪, হবিগঞ্জে ৯শ’ ২৫ ও  সুনামগঞ্জ জেলায় ১ হাজার ৯শ’২৭ হেক্টর জমিতে এবার শিম চাষ হচ্ছে।   
এসব অঞ্চলে উৎপাদিত শিমের মধ্যে রয়েছে স্থানীয় জাত বারি শিম-১ ও ২, আশ্বিনা, ইপসা, গোয়াল গাদ্দা, হাতির কানিসহ স্থানীয় নামে আরও কিছু শিম রয়েছে।  

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সিলেটের উপ-পরিচালক কৃষ্ণ চন্দ্র হোড় বাংলানিউজকে বলেন,  আগাম জাতের শিম উৎপাদনে প্যাকেটে, মাটির হাড়িতে চারা করার জন্য কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হয়। স্থানান্তর করার সময় সুসম সার দেওয়ার জন্য বলি। তাছাড়া অতিরিক্ত কীটনাশক যাতে না দেওয়া হয় এ জন্য হাতে বাছাই করে পোকা মেরে ফেলা বা শুধু পানি দিয়ে এফিড মারা ও কীটনাশক দেওয়া শিম ২৪ ঘণ্টা পর বাজারজাত করতে পরামর্শ দেই।

বাংলাদেশ সময়: ০৮৪৫ ঘণ্টা, আগস্ট ৩১, ২০১৬
এনইউ/এএ
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।