ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

অর্থনীতি-ব্যবসা

দেশে ২৩,৩১০ জন বৈধ কোটিপতি

সোহেল রহমান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩১৭ ঘণ্টা, আগস্ট ১৩, ২০১০
দেশে ২৩,৩১০ জন  বৈধ কোটিপতি

ঢাকা: দেশে কোটিপতির সংখ্যা কতো- এ নিয়ে বিতর্ক আছে। তবে বিতর্ক যা-ই থাকুক প্রতিবছর কোটিপতির সংখ্যা বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে।


 
১৯৭৫ সালে দেশে বৈধ কোটিপতির সংখ্যা যেখানে ছিল মাত্র ৪৭ জন, সেখানে গত ২০০৯ সাল শেষে বৈধ কোটিপতির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৩ হাজারেরও বেশি। সে হিসেবে গত প্রায় সাড়ে তিন দশকে কোটিপতির সংখ্যা বেড়েছে ৪৯২ গুণ। আর এ হিসেব কেবল বাংলাদেশ ব্যাংকের তালিকায় যারা স্থান পেয়েছেন তাদের। দেশের অনেক কোটিপতির নাম এ তালিকায়  স্থান পায় নি।
 
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রমতে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক সকল তফসিলি ব্যাংকের কাছ থেকে প্রাপ্ত হিসাবের ভিত্তিতে যে প্রতিবেদন তৈরি করে সেটাই কোটিপতির সংখ্যা নির্ধারণের নির্ভরযোগ্য ভিত্তি।

তবে অবৈধ বিত্তের মালিকরা স্বনামে-বেনামে একাধিক একাউন্টে টাকা রাখতে পারেন এবং রাখেন। এদের শনাক্ত করা কঠিন।
 
স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে গত প্রায় চার দশকের কোটিপতির সংখ্যা বৃদ্ধির চিত্র পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, প্রতিবার মতার পট পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে কোটিপতি আমানতকারীর সংখ্যা বেড়ে গেছে দুই থেকে তিনগুণ। আশির দশক পর্যন্ত ব্যাংকগুলোতে মাঝারি ও ক্ষুদ্র আমানতকারীদের একটা বিশেষ অবস্থান ছিল। নব্বইয়ের দশক থেকে ব্যাংকগুলোতে কোটিপতি আমানতকারীদের আধিপত্য বাড়তে থাকে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০০৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর ব্যাংকিং খাতে কোটিপতি আমানতকারীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৩ হাজার ১৩০ জন এবং এদের মোট আমানতের পরিমাণ হচ্ছে ১ লাখ ৫৪৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে চার রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে কোটিপতির সংখ্যা হচ্ছে ৫ হাজার ৬০১ জন, রাষ্ট্রায়ত্ত বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোতে ১ হাজার ৮৫৪ জন, বেসরকারি ব্যাংকগুলোতে ১৩ হাজার ৬৭৯ জন ও বিদেশি ব্যাংকগুলোতে  ১ হাজার ৯৯৬ জন। অন্যদিকে কোটিপতি গ্রাহকদের আমানতের পরিমাণ হচ্ছে রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে ৩১ হাজার ৬৫৬ কোটি টাকা, রাষ্ট্রায়ত্ত বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোতে ৬ হাজার ৯৯৭ কোটি টাকা, বেসরকারি ব্যাংকগুলোতে ৫১ হাজার ৬৩০ কোটি টাকা ও বিদেশি ব্যাংকগুলোতে ১০ হাজার ২৬০ কোটি টাকা রয়েছে।
শতকরা হিসাবে কোটিপতি আমানতকারীদের সংখ্যা হচ্ছে ব্যাংকিং খাতে মোট আমানতকারীর দশমিক ০৬ শতাংশ এবং আমানতের পরিমাণ হচ্ছে মোট আমানতের এক-তৃতীয়াংশ।
 
গত বছর (২০০৮) ব্যাংকিং খাতে কোটিপতি আমানতকারীর সংখ্যা ছিল ১৯ হাজার ১৬৩ জন এবং মোট আমানতের পরিমাণ ছিল ৭৭ হাজার ২৩৯ কোটি টাকা। শতকরা হিসাবে কোটিপতি আমানতকারীর সংখ্যা ছিল ব্যাংকিং খাতে মোট আমানতকারীর দশমিক ০৫ শতাংশ এবং আমানতের পরিমাণ ছিল মোট আমানতের প্রায় ৩১ শতাংশ। এ হিসেবে এক বছরের ব্যবধানে কোটিপতি আমানতকারীর সংখ্যা বেড়েছে প্রায় চার হাজার।

পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ১৯৭৫ সালে দেশে কোটিপতির সংখ্যা ছিল ৪৭ জন ও তাদের আমানতের পরিমাণ ছিল ব্যাংকিং খাতের মোট আমানতের ১০ শতাংশ। ’৯০ সালে আমানতকারীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৯৪৩ জন ও আমানতের পরিমাণ দাঁড়ায় ১২ শতাংশ। এই ধারাবাহিকতায় ’৯৬ সালের জুনে কোটিপতি আমানতকারীর সংখ্যা ছিল ২ হাজার ৫৯৪ জন  ও আমানতের পরিমাণ ছিল প্রায় সাড়ে ২০ শতাংশ, ২০০১ সালের শেষে কোটিপতি আমানতকারীর সংখ্যা ছিল ৫ হাজার ৭৯৯ জন  ও আমানতের পরিমাণ ছিল প্রায় সাড়ে ২২ শতাংশ, ২০০৬ সালের শেষে কোটিপতি আমানতকারীর সংখ্যা ছিল ১৪ হাজার ৪৯ জন  ও আমানতের পরিমাণ ছিল প্রায় সাড়ে ২৭ শতাংশ, ২০০৭ সালের শেষে কোটিপতি
আমানতকারীর সংখ্যা ছিল ১৬ হাজার ৬৩৩ জন।

বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে পাওয়া কোটিপতির পরিসংখ্যানটি এখানে তুলে ধরা হলো-

সাল

কোটিপতি আমানতকারীর সংখ্যা

আমানতের পরিমাণ
(কোটি টাকা)

ব্যাংকিং খাতে মোট আমানতের %

১৯৭৫

         ৪৭

 

     ১০%

১৯৯০

        ৯৪৩

 

     ১২%

১৯৯৬ (জুন)

      ২,৫৯৪

 

     ২০%

২০০১

      ৫,৭৯৯

 

     ২২.৫%

২০০৬

    ১৪,০৪৯

 

     ২৭.৫%

২০০৭

    ১৬,৬৩৩

        -----

     ----

২০০৮

    ১৯,১৬৩

      ৭৭,২৩৯

     ৩১%

২০০৯

    ২৩,১৩০

     ১,০০,৫৪৪

     ৩৩%

সূত্র : বাংলাদেশ ব্যাংক
 

বাংলাদেশ স্থানীয় সময় : ১৩৪০ ঘণ্টা, ১৩ আগস্ট ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।