ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

২৪টি বিমার অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা ব্যয় ২৪১ কোটি টাকা

মাহফুজুল ইসলাম, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৩৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৭, ২০১৭
২৪টি বিমার অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা ব্যয় ২৪১ কোটি টাকা

ঢাকা: নিয়ম বহির্ভূতভাবে গ্রাহকদের কষ্টে উপার্জিত ও শেয়ারহোল্ডারদের প্রাপ্ত ২৪১ কোটি টাকা অবৈধ ব্যয় দেখিয়েছে ২৪টি জীবন কোম্পানি। বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) কঠোর নির্দেশনার পরও ২০১৬ সালে কোম্পানির এমডি-চেয়ারম্যান এবং পরিচালনা পরিষদের সমন্বয়ে এই টাকার খরচ দেখিয়েছে কোম্পানিগুলো। শুধু তাই নয়, এই অবৈধ ব্যয়কে বিমা কোম্পানিগুলো বলছে অতিরিক্ত ব্যয়।

বিমা কোম্পানিগুলো থেকে আইডিআরএ-তে পাঠানো তথ্য বিশ্লেষণে এ চিত্র উঠে আসে। তবে বাস্তবে এই চিত্র আরও ভয়াবহ বলে মনে করেন বিমা সংশ্লিষ্টরা।

অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা ব্যয় দেখানো কোম্পানিগুলো হলো- ফারইস্ট ইসলামী লাইফ, পপুলার, মেঘনা, জীবন বিমা করপোরেশন, সন্ধানী, পদ্মা ইসলামী, সানলাইফ, হোমল্যান্ডের, সানফ্লাওয়ার, প্রগ্রেসিভ, গোল্ডেন, ট্রাস্ট, সোনালী, রায়রা, জেনিথ লাইফের, বেষ্ট লাইফের, যমুনা, মাকেন্টাইল, প্রেটেক্টিভ লাইফ, চাটাস, ডায়মন্ড, আলফা ইসলামী, এনআরবি গ্লোবাল এবং স্বদেশ লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি।

বিমা বিধিমালা ১৯৫৮ এর ৩৯ বিধি মতে, বিমা কোম্পানিগুলো প্রথম বর্ষে ব্যবসার জন্য ব্যস্থাপনা ব্যয়ের সর্বোচ্চ ৯০ শতাংশ ব্যয় করতে পারবে। কিন্তু বিমা কোম্পানিগুলো এই আইন লঙ্ঘন করে অতিরিক্ত ২৪১ কোটি টাকা বেশি খরচ দেখিয়েছে।

কোম্পানির তথ্য অনুসারে, বিমা আইনের তোয়াক্কা না করে ২০১৬ সালে ফারইস্ট ইসলামী লাইফ অবৈধ ব্যয় করেছে ৪৫ কোটি ৫ লাখ, পপুলার ৩ কোটি ৯১ লাখ, মেঘনা লাইফ ২ কোটি ৭৪ লাখ, জীবন বিমা কোম্পানি ৬৯ কোটি ১০ লাখ, সন্ধানী ইন্স্যুরেন্স ৮ কোটি ৬৬ লাখ, পদ্মা ইসলামী ৮ কোটি ৪৩ লাখ, সানলাইফ ১৪ কোটি ৮৫ লাখ, হোমল্যান্ড ৪কোটি ৩২ লাখ, সানফ্লাওয়ার ১৩ কোটি ২৭ লাখ, প্রগ্রেসিভ ১২ কোটি ৫২ লাখ, গোল্ডেন ১০ কোটি ৯৬ লাখ টাকা।

এছাড়াও ট্রাস্ট লাইফের ৫ কোটি ০৯ লাখ, সোনালীর ৪ কোটি ৯৪ লাখ, রায়রা’র ৫ কোটি ৩লাখ, জেনিথের৫ কোটি ১৯ লাখ, বেষ্ট লাইফের৪ কোটি ৫২ লাখ, যমুনা’র ২ কোটি ৯৩ লাখ, মাকেন্টাইলের ২ কোটি ৮০ লাখ, প্রেটেক্টিবের ৫ কোটি ৪৫ লাখ, চাটাসের ২ কোটি ৯৮ লাখ, ডায়মন্ডের ১ কোটি ৩৯ লাখ, আলফা ইসলামী’র২ কোটি ১৪ লাখ, এনআরবী গ্লোবালের ২ কোটি ৫০ লাখ এবং স্বদেশ লাইফের ২ কোটি ২০ লাখ টাকার অতিরিক্ত খরচ হয়েছে।

নিয়ম বহির্ভূত ব্যবস্থাপনা ব্যয়ের কথা স্বীকার করেন সন্ধ্যানী লাইফের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের সিনিয়র সহ-সভাপতি আহসানুল ইসলাম টিটু।

তিনি বাংলানিউজকে বলেন, আইডিআরএ’র আইনের দুর্বলতার কারণে কোম্পানিগুলোতে অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা ব্যয় হচ্ছে। আইডিআরএ গঠন হয়েছে ২০১০ সালে কিন্তু বিমা কোম্পানিকে চলতে হচ্ছে ১৯৫৮ সালের আইন অনুসারে। ফলে বিমা কোম্পানিগুলো আগের নিয়ম কাভার করতে পারছে না। তাই আইডিআরএ’র উচিৎ যুগোপযোগী আইন প্রনয়ণ করা। যাতে এজেন্ট কমিশনের মতো খাতওয়ারি কষ্টগুলো নির্ধারণ করা হবে। একটি সুন্দর কাঠামো গঠন করলেই বিমা কোম্পানিগুলোর সমস্যা সমাধান হবে।

মেটলাইফ অ্যালিকো, ন্যাশনাল লাইফ, ডেলটা, প্রাইম ইসলামী, রূপালি, প্রগতি এবং গাডির্য়ান লাইফ কোম্পানি আইডিআরএ’ নির্ধারিত নিয়মে ব্যবস্থাপনা ব্যয় করতে পারলে আপনারা পারছে না কেন? উত্তরে তিনি বলেন, সন্ধ্যানী লাইফের পরিকল্পনার চেয়ে ব্যবসা কম হয়েছে। পাশাপাশি আমাদের বিমা দাবি পূরণ করায় খরচ বেশি হয়েছে ফলে আমাদের খরচ বেশি হয়েছে।

এ বিষয়ে আইডিআরএ’র সদস্য জুবের আহমেদ খানের কাছে জানতে চাইলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

সূত্র জানায়, এর আগের বছর ২০১৫ সালো কোম্পানিগুলোর অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা ব্যয় ছিলো ৩০৫ কোটি ৮ লাখ টাকা। আর ২০০৮ সাল থেকে ২০১৫ সার পর্যন্ত ব্যয় দেখিয়েছে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা। কোম্পানিগুলোর এই অনিয়ম খতিয়ে দেখতে বিশেষ অডিটর নিয়োগ করেছে আইডিআরএ। পাশাপাশি দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ১৭টি জীবন বিমা কোম্পানির ২ হাজার কোটি টাকা লোপাটের বিষয়টি খতিয়ে দেখছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৩০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৭, ২০১৭,
এমএফআই/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।