ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

রাজস্ব-ফাঁকি কমাতে ভ্যাট অনলাইন প্রকল্পে পরিবর্তন আসছে

শেখ জাহিদুজ্জামান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩১৬ ঘণ্টা, মার্চ ১০, ২০১৭
রাজস্ব-ফাঁকি কমাতে ভ্যাট অনলাইন প্রকল্পে পরিবর্তন আসছে

ঢাকা: আগামী পহেলা জুলাই থেকে শুরু হচ্ছে ভ্যাট অনলাইন প্রকল্পের কার‌্যক্রম। ফলে প্রযুক্তির ছোঁয়ায় রাজস্বআয় বাড়াতে ও রাজস্ব-ফাঁকি কমাতে ভ্যাট অনলাইন প্রকল্পের ব্যয় ও মেয়াদকাল বাড়ছে।

এরই মধ্যে জাতীয় রাজস্ব রোর্ড (এনবিআর) থেকে ভ্যাট অনলাইন প্রকল্পটির মেয়াদ ও ব্যয়বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে। এনবিআর-সূত্রে জানা যায়, ভ্যাট অনলাইন প্রকল্পে ৫৫১ কোটি টাকা বরাদ্দ করার পরও নতুন করে আরও ১৩৮ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে।

বর্তমানে প্রস্তাবটি পরিকল্পনা কমিশনে অনুমোদনের অপেক্ষায়। পাশাপাশি প্রকল্পটির মেয়াদ ২০১৮ সাল থেকে বাড়িয়ে ২০২০ সাল করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

ভ্যাট অনলাইন প্রকল্প প্রস্তুতি কাজ এরই মধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। এ-মুহূর্তে সিস্টেমের পরীক্ষা নিরীক্ষার কাজ চলছে। খুব শিগগিরই পরিকল্পনা কমিশন প্রকল্পটির ব্যয়বৃদ্ধির প্রস্তাবটি অনুমোদন করবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা ।

প্রসঙ্গত, কয়েকটি উদ্দেশ্যে নিয়ে নতুন ভ্যাট আইনটি প্রণয়ন করা হয়। এগুলো হচ্ছে, সরকারি-বেসরকারি খাতে রাজস্ব আদায় বাড়ানো ও ভ্যাট আইন ব্যবসাবান্ধব করা, রাজস্ব ফাঁকি চিহ্নিতকরণে এনবিআরের সক্ষমতা বাড়ানো, ভ্যাট-প্রশাসনকে আরও আধুনিক সুশৃঙ্খল ও সেবাধর্মী করা, জ্ঞানভিত্তিক ভ্যাট প্রশাসন প্রতিষ্ঠা, শিল্পায়নের প্রসারে সহায়তা করা, সরকারি-বেসরকারি খাতে ব্যবসা-বাণিজ্যের সার্বিক দক্ষতা বাড়ানো এবং বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ উৎসাহিত করার মাধ্যমে রাজস্ব আয় বাড়ানো।

জানা যায়, জাতীয় সংসদে ২০১২ সালের ২৭ নভেম্বর নতুন মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট)ও সম্পূরক শুল্ক আইন পাস করা হয়। এরপর নতুন আইনটি বাস্তবায়নে ২০১৩ সালের ৮ অক্টোবর একনেক-এ (জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি) ভ্যাট অনলাইন প্রকল্পের অনুমোদন পাশ হয়। ওই সময় প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় ৫৫১ কোটি টাকা। এর মধ্যে ১০১ কোটি টাকা সরকারি তহবিল থেকে এবং বাকি ৪৪৯ কোটি টাকার জোগান দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক। আর মেয়াদের সময়সীমা করা হয় ২০১৮ সাল পর্যন্ত। কিন্তু ভ্যাট অনলাইন প্রকল্প বাস্তবায়নে বরাদ্দ আরও ১৩৮ কোটি টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব করে পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছে।

এতে প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৬৯০ কোটি টাকা। সেই সঙ্গে প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয়েছে ২০২০ সাল পর্যন্ত। আর বর্ধিত ১৩৮ কোটি টাকা জোগানের প্রস্তাব দেয়া হয়েছে এডিপি থেকে। যা এখনও আলোচনাধীন। তবে প্রকল্পের ব্যয় বাড়ানোর প্রস্তাবের মধ্যে রয়েছে পরামর্শক সেবা, স্টাফ বেতন, অফিস ভাড়া, গাড়ি ভাড়া, বিজ্ঞাপন ও বিদেশে প্রশিক্ষণ-ব্যয়।

এদিকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের তথ্য অনুসারে, আগামী ১ জুলাই থেকে অনলাইনে ভ্যাট নিবন্ধন করা যাবে। এ জন্যে পুরোদমে চলছে ভ্যাট অনলাইন প্রকল্পের কাজ। করদাতাদের বিআইএন রি-রেজিস্ট্রেশনের সুবিধার্থে প্রতিটি ভ্যাট কমিশনারেটে তৈরি করা হচ্ছে সাপোর্ট সেন্টার। যাদের কম্পিউটার নেই তারা এসব সাপোর্ট সেন্টারে এসেও রি-রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করতে পারবেন। আবার যে কোনো করদাতা এনবিআরের ওয়েবসাইটে (nbr.gov.bd) গিয়েও ভ্যাট অনলাইন ড্যাশবোর্ডে ক্লিক করে তথ্যের ফরম পূরণ করে অনলাইনেই রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করতে পারবেন।

ভ্যাট অনলাইন প্রকল্পের পরিচালক রেজাউল হাসান বাংলানিউজকে বলেন, ভ্যাট অনলাইন প্রকল্পের প্রস্তুতির কাজ শেষ। চলতি মাসের ১৬ তারিখ প্রথম ধাপের রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রম শুরু হচ্ছে। আর এটা শুরু হলে জনগণ নির্বিঘ্নে অনলাইনের মাধ্যমে ভ্যাটের যাবতীয় কার্যক্রম সম্পন্ন করতে পারবেন।

জাতীয় রাজস্ব রোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো.নজিবুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন,সবার কথা বিবেচনা করে ভ্যাট অনলাইন কার‌্যক্রম সহজতর করা হয়েছে। সরকারের রাজস্ব আহরণে  প্রকল্পের মেয়াদ ও অর্থ বাড়ানো প্রয়োজন। কেননা প্রকল্পটি রাজস্বের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল করবে। বর্তমানে প্রকল্পটির মেয়াদ ও অর্থ বাড়ানোর প্রস্তাবটি পরিকল্পনা কমিশনে অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। আশা করি, কিছুদিনের মধ্যে কমিশন প্রস্তাবটির অনুমোদন দেবে। কেননা ভ্যাট অনলাইনের মাধ্যমে সরকারের রাজস্ব যেমন বাড়বে, তেমনি রাজস্ব ফাঁকিও বন্ধ হবে।

বাংলাদেশ সময়: ০৯১৫ ঘণ্টা, মার্চ ১০, ২০১৭
এসজে /জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।