ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

পেপারলেস ট্রেড চুক্তিতে প্রথম স্বাক্ষরকারী বাংলাদেশ

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২০৪ ঘণ্টা, আগস্ট ২৯, ২০১৭
পেপারলেস ট্রেড চুক্তিতে প্রথম স্বাক্ষরকারী বাংলাদেশ

ঢাকা: প্রথম দেশ হিসেবে পেপারলেস ট্রেড চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে বাংলাদেশ। ব্যাংককে সফররত বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ নিজ দেশের পক্ষে চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। বাংলাদেশ ছাড়াও চীন ও কম্বোডিয়া এ চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে।

জাতিসংঘের ইকোনমিক অ্যান্ড সোস্যাল কমিশন ফর এশিয়া অ্যান্ড দ্য প্যাসিফিক (ইউএনএসকাপ)-এর সিদ্ধান্ত মোতাবেক ‘ফ্রেমওয়ার্ক অ্যাগ্রিমেন্ট অন ফেসিলিটেশন অফ ক্রস-বর্ডার পেপারলেস ট্রেড ইন এশিয়া অ্যান্ড দ্য প্যাসিফিক’ নামের এ কাঠামো চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় ইউএনএসকাপ-এর সদর দপ্তরে।  

মঙ্গলবার (২৯ আগস্ট) ব্যাংককের স্থানীয় সময় দুপুরে বাংলাদেশের পক্ষে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ মঙ্গলবার আনুষ্ঠানিকভাবে চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন।

চুক্তি স্বাক্ষরের পর তোফায়েল আহমেদ কম্বোডিয়ার বাণিজ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে বসেন। থাইল্যান্ডে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত সাইদা মুনা তাসনীম বাণিজ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে ‘হাইলেভেল ডায়ালগ অন এনহানসিং রিজিওন্যাল ট্রেড থ্রো ইফেকটিভ পার্টিসিপেশন ইন দ্য ডিজিটাল ইকোনমি’ শীর্ষক ডায়ালগে প্রথম প্যানেলিস্ট হিসেবে বক্তৃতা করেন তোফায়েল আহমেদ।  

এসকাপ-এর আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল অ্যান্ড এক্সিকিউটিভ সেক্রেটারি ড. শামসাদ আক্তারের সভাপতিত্বে ডায়ালগে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন থাইল্যান্ডের অর্থ মন্ত্রণালয়ের ভাইস মিনিস্টার কিয়েটচাই সোফাসটিনফং, কম্বোডিয়ার কমার্স মিনিস্টার পান এবং থাইল্যান্ডে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত।
 
ডায়ালগে তোফায়েল আহমেদ বলেন, পেপারলেস ট্রেড এর সুবিধা গ্রহণের জন্য বাংলাদেশ এ চুক্তিতে স্বাক্ষরের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বাণিজ্যে জটিলতা দূর এবং দ্রুত কাজ সম্পাদন করতে বাংলাদেশ ইতোমধ্যে ব্যাপক কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। বাংলাদেশের আমদানি রপ্তানি অফিস, জয়েন্ট স্টক কোম্পানি অফিস, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোসহ গুরুত্বপূর্ণ অফিসগুলোকে অটোমেশনের আওতায় আনা হয়েছে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশে এখন এসব কাজ অনলাইনে সম্পন্ন করা হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা এখন অতি অল্প সময়েই ব্যবসায়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করতে পারছেন। আমদানি ও রপ্তানি সহজ করতে বিমানবন্দর, সমুদ্রবন্দর ও স্থলবন্দর, কাস্টমস, ভ্যাট ব্যবস্থাপনা ডিজিটাল পদ্ধতিতে সম্পন্ন করা হচ্ছে। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ৫ হাজারের বেশি ডিজিটাল সেন্টার চালু করা হয়েছে।

বাণিজ্যমন্ত্রী জানান, মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১১ কোটি ৯ লাখ এবং ৬ কোটি ৭ লাখ মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করছে। ই-গভর্ন্যান্স, ই-কমার্স, ই-ব্যাংকিং সুবিধা দেশের মানুষ ভোগ করছে। ডিজিটাল পদ্ধতিতে স্বাস্থ্য সেবা, শিক্ষা, ল্যান্ড রেজিস্ট্রেশন সুবিধা নিশ্চিত করা হয়েছে।  

তোফায়েল আহমেদ আরও বলেন, গত অর্থবছরে বাংলাদেশ প্রায় ৩৪.৮৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের পণ্য রপ্তানি করেছে। এ বছর ৩৭.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের পণ্য রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। সার্ভিস সেক্টরসহ এ রপ্তানি আয়ের পরিমাণ হবে ৪১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০২১ সালে বাংলাদেশের রপ্তানি ৬০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে যাবে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্যের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বৈদেশিক বাণিজ্যে সক্ষমতা অর্জনে পেপারলেস ট্রেড সহায়ক ভূমিকা রাখবে। ২০২১ সালে বাংলাদেশের ৫০ বছর পূর্তিতে বাংলাদেশ হবে ডিজিটাল মধ্য আয়ের দেশ। ২০৪১ সালে বাংলাদেশ হবে উন্নত দেশ।

বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ জাতিসংঘ ঘোষিত এমডিজি অর্জন করে পুরস্কার লাভ করেছে। এখন ২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজি অর্জন করতে সফলভাবে কাজ করে যাচ্ছে। গত দশকে বাংলাদেশের জিডিপি ছিল গড়ে ৬ ভাগের বেশি, গত বছর অর্জিত হয়েছে ৭.১১ ভাগ। ফলে, বাংলাদেশে দরিদ্র মানুষের হার ২৪.৮ ভাগ এবং হত দরিদ্র মানুষের হার ১১.৯ ভাগে নেমে এসেছে। এসডিজি অর্জনের মধ্য দিয়ে অতিদরিদ্র মানুষের সংখ্যা ৩ শতাংশের নিচে নেমে আসবে।
 
তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশ পৃথিবীর মধ্যে দ্বিতীয়। বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের ওষুধ, আইসিটি, ফার্নিচার, পাট ও পাটজাত পণ্য, জাহাজ নির্মাণ, হালকা ইঞ্জিনিয়ারিং পণ্য এবং কৃষিজাতপণ্যের প্রচুর চাহিদা রয়েছে। এসব পণ্যের রপ্তানি বৃদ্ধির বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ। ২০২১ সালের মধ্যে ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের আইসিটি পণ্য রপ্তানি করা সম্ভব হবে বলে জানান বাণিজ্যমন্ত্রী।  

বিদেশি বিনিয়োগের জন্য বাংলাদেশ এখন খুবই আকর্ষণীয় স্থান জানিয়ে তোফায়েল আহমেদ বলেন, বর্তমান সরকারের বিনিয়োগবান্ধব নীতি ও পরিবেশের কারণে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ছে। ১৬ কোটি মানুষের বাংলাদেশ এখন একটি বড় বাজার। বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ সরকার আইন করে রক্ষা করেছে। এখন শিল্পে শতভাগ বিনিয়োগ ও বিনিয়োগকৃত অর্থ লাভসহ যেকোনো সময় ফেরত নেওয়ার সুবিধা পাচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা। প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত ১০০টি স্পেশাল ইকনোমিক জোনে বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ছে। ফরেন ডাইরেক্ট ইনভেস্টমেন্ট গত বছরের চেয়ে ৪৪ ভাগ বৃদ্ধি পেয়েছে।

সফরসূচি অনুযায়ী বাণিজ্যমন্ত্রী ৩০ আগস্ট ব্যাংকক থেকে শ্রীলংকা যাবেন। সেখানে শ্রীলংকার ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড এবং বাণিজ্য ও শিল্পমন্ত্রীর সঙ্গে বাণিজ্য, বিনিয়োগ এবং এফটিএ সম্পাদন বিষয়ে মতবিনিময় করবেন। এরপর তিনি ইন্ডিয়া ফাউন্ডেশনের আমন্ত্রণে ৩১ আগস্ট থেকে ২ সেপ্টেম্বর কলম্বোয় অনুষ্ঠিতব্য ‘সেকেন্ড ইন্ডিয়ান ওশান কনফারেন্স-২০১৭’-এ যোগ দেবেন।  

১ সেপ্টেম্বর মিনিস্টার প্যানেলে বক্তৃতা করবেন বাণিজ্যমন্ত্রী। এতে ২৯টি দেশের প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করবেন। এ কনফারেন্সের প্রতিপাদ্য বিষয় হলো- ‘পিস, প্রোগ্রেস অ্যান্ড প্রোসপারিটি’। কনফারেন্সে বাণিজ্যমন্ত্রী ভারত মহাসাগরের তীরবর্তী অঞ্চলের দেশসমূহের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী ও নীতিনির্ধারকদের সাথে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়ে আলোচনা করবেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৫৪ ঘণ্টা, আগস্ট ২৯, ২০১৭ 
আরএম/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।