ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

মজুতদার-আড়তদার-চালকল মালিকদের 'শেষ সুযোগ' মন্ত্রীর

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৪৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৪, ২০১৭
মজুতদার-আড়তদার-চালকল মালিকদের 'শেষ সুযোগ' মন্ত্রীর

ঢাকা: মজুতদার, আড়তদার এবং চালকল মালিকেরা চালবাজি করে চালের দাম বাড়াচ্ছে দাবি করে খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম বলেছেন তাদের শেষ সুযোগ দিয়েছেন। অন্যথায় তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন খাদ্যমন্ত্রী।

বৃহস্পতিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) সচিবালয়ে চালের দাম নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের সতর্ক করে তিনি এ হুঁশিয়ারি দেন।

মন্ত্রী বলেন, দেশে এক কোটি মেট্রিকটন চাল মজুত আছে।

আরও আমদানির প্রক্রিয়ায় রয়েছে। কিন্তু সিন্ডিকেট করে চালের দাম বাড়ানো হচ্ছে। চাল নিয়ে সমস্ত দেশকে একটা বিভ্রাটের মধ্যে ফেলার চেষ্টা করা হচ্ছে। উদ্দেশ্যমূলকভাবে চাল নিয়ে চালবাজি

মজুতদার, আড়তদার এবং চালকল মালিকদের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, এখনও সময় আছে আপনারা এখনও ভালো হয়ে যান। আপনারা যেভাবে সিন্ডিকেট করে দেশে চালবাজি শুরু করেছেন, চাল নিয়ে রাজনীতি শুরু করেছেন তা কোনো অবস্থায়ই মেনে নেওয়া হবে না। এখনও শেষ সুযোগ, আপনারা ভালো হয়ে যান।

মন্ত্রী বলেন, নির্বাহ করার জন্য আমাদের যথেষ্ট পরিমাণ চাল মজুদ আছে। আরও আমদানি হচ্ছে, কোনো রকম অভাব নেই।

চাল আমদানি এবং সরকারের উদ্যোগের মধ্যে চালের দাম নিয়ন্ত্রণে আসবে এবং আসতে হবে বলেও মনে করেন মন্ত্রী।

পত্রপত্রিকায় লেখালেখির মাধ্যমে সাধারণ মানুষের মধ্যে একটা ভীতিকর পরিস্থিতির চেষ্টা করা হচ্ছে বলে মনে করেন মন্ত্রী।

চালের দাম বৃদ্ধি হয় এমন কোনো সংবাদ পরিবেশন না করতে সাংবাদিকদের আহ্বান জানিয়ে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, সর্বান্তকরণে আপনাদের সহযোগিতা চাই।

হাওরে আগাম বন্যা এবং সারা দেশে ব্লাস্ট রোগের কারণে ২০ লাখ মেট্রিকটন চাল নষ্ট হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, বোরো ফসল নষ্ট হওয়ার পর থেকেই চালের বাজারে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এক শ্রেণির মিল মালিক ও আড়তদাররা চালবাজি শুরু করেছে।

মন্ত্রী জানান, বোরো নষ্ট হওয়ার পরেও এক কোটি ৭০ লাখ মেট্রিকটন ফসল ঘরে এসেছে। ২৩ লাখ মেট্রিকটনের জায়গায় আউশ ধানে ২২ লাখ মেট্রিকটন ধান পেয়েছি। মোট এক কোটি ৯২ লাখ মেট্রিকটন ধান এসেছে। আমরা প্রতিদিন ৮৫ হাজার মেট্রিকটন চাল খেয়ে থাকি। চারমাসে এক কোটি দুই লাখ মেট্রিকটন খেয়েছি। তারপরেও এক কোটি মেট্রিকটন চাল আমাদের আছে। এ চালগুলো মিল মালিক, আড়তদার এবং ব্যবসায়ীদের কাছে বা আমার বাড়ির মটকায়ও আছে।

দামের ঊর্ধগতির কারণে ট্যাক্স কমিয়ে ২ শতাংশ করার পরে ভারত থেকে এ পর্যন্ত বেসরকারিভাবে ছয় লাখ মেট্রিকটন চাল আনা হয়েছে। এগুলোও বিভিন্নস্থানে রয়েছে।

‘এরপরও এ অবস্থা কেন, প্রশ্ন তুলে মন্ত্রী বলেন, আমি বলছি চাল নিয়ে চালবাজি চলছে। চাল নিয়ে রাজনীতি চলছে। জনমনে বিভ্রান্ত সৃষ্টি চলছে। সরকারকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলার সুক্ষ্ম ষড়যন্ত্র চলছে। চালের দাম বাড়ার কি কারণ থাকতে পারে?’

র‌্যাব চাল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি রশিদ সাহেবের গুদামে অভিযান চালিয়ে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, মনিটরিং টিম সারা দেশে কাজ করছে।

বেসরকারিভাবে এ পর্যন্ত ১৯ লাখ মেট্রিকটনের এলসি খুলে ছয় লাখ মেট্রিকটন এসেছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, উচ্চমূল্যের এবার বোরো ধান ১২ লাখ মেট্রিকটনের জায়গায় মাত্র আড়াই লাখ মেট্রিকটন সংগ্রহ করেছি।

সরকারিভাবে ভিয়েতনাম থেকে আড়াই লাখ মেট্রিকটন চাল এসেছে। কম্বোডিয়া থেকে আড়াই লাখ মেট্রিকটনের এলসি খোলা হয়েছে, সেই চাল তিন মাসের মধ্যে চলে আসবে।

প্রধানমন্ত্রীর অনুমতি নিয়ে মায়ানমারে গিয়েছিলেন জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, যাওয়ার একদিন আগে আমি প্রধানমন্ত্রীকে বললাম এ অবস্থায় মায়ানমার যাওয়াটা কি ঠিক হবে? তিনি বললেন কূটনৈতিক কাজ এবং ট্রেড একসঙ্গে চলতে পারে। মায়ানমার টিম ১৭ সেপ্টেম্বর ঢাকায় আসবে। আশা করি দুই লাখ মেট্রিকটন চাল পাবো। ভিয়েতনাম থেকে ১৫-২০ দিন লাগলেও মায়ানমার থেকে সময় লাগবে দুই থেকে তিন দিনে। দামও কম পড়বে।

সাতটি আন্তর্জাতিক দফতরের মাধ্যমে এ পর্যন্ত টেন্ডারের চাল সাড়ে তিন লাখ মেট্রিকটন পেয়েছি। সাড়ে তিন লাখ মেট্রিকটন এলসি হয়েছে, অক্টোবরের মধ্যে চলে আসবে। তবে দুটি জাহাজের চাল অত্যন্ত নিম্নমানের হওয়ায় ফিরে গেছে। সরকারি কাজে পুলিশ-বিজিবির এবং খোলাবাজারে চাল বিক্রির (ওএমএস) জন্য ১৫-১৭ লাখ মেট্রিকটন চাল প্রয়োজন বলে জানান মন্ত্রী।

ভারত থেকে চাল আমদানি তিন মাস বন্ধ রাখার কোনো সত্যতা নেই বলেও জানান মন্ত্রী।

মন্ত্রী বলেন, ভয়ের কোনো কারণ নেই। আমার কাছে যা মজুত আছে তাতে করে ব্যয় করতে কোনো রকম অসুবিধা হবে না। আমন উঠলে গুদাম ফুলে ফেপে উঠবে।

ঊর্ধগতির কারণে রোববার থেকে ওএমএস এবং ২০ সেপ্টেম্বর থেকে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি চালু হচ্ছে বলে জানান মন্ত্রী। আগের মত ওএমএসের চাল ১৫ টাকা কেজি এবং ১৭ টাকা কেজিতে আটা বিতরণ করা হবে।

সংবাদ মাধ্যমের সমালোচনা করে মন্ত্রী বলেন, একটি বহুল প্রচারিত পত্রিকায় যে সংবাদ এসেছে তাতে ৫ টাকা করে দাম বেড়ে যাওয়া উচিত আজ। পত্রপত্রিকায় সংবাদ আসায় ব্যবসায়ীদের পোয়াবারো! দেশটা আমার, আপনার, সবার…।

বাংলাদেশ সময়: ১৪২০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৪, ২০১৭
এমআইএইচ/ওএইচ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।