ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

৯ বিমা কোম্পানির ১১০ কোটি টাকার ভ্যাট ফাঁকি

শেখ জাহিদুজ্জামান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪৫৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৮, ২০১৭
৯ বিমা কোম্পানির ১১০ কোটি টাকার ভ্যাট ফাঁকি

ঢাকা: দেশের নাম করা বিমা প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিত ‘প্রগতি ইন্স্যুরেন্স’, ‘গ্রীন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্স’, ‘রিলায়েন্স ইন্স্যুরেন্স’, পাইওনিয়ার ইন্স্যুরেন্স’, ‘ফিনিক্স ইন্স্যুরেন্স’, ‘ইস্টল্যান্ড ইন্স্যুরেন্স’, ‘রূপালী ইন্স্যুরেন্স’, ‘পূবালী ইন্স্যুরেন্স’ ও ‘সাধারণ বীমা করপোরেশন’ রি-ইন্স্যুরেন্সের (পুনঃবিমা) উপর কমিশন ও এজেন্ট কমিশনের উপর ভ্যাট পরিশোধ না করে সরক‍ারের বিপুল পরিমাণ রাজস্ব ফাঁকি দিয়েছে।

ফাঁকি দেয়া সেই রাজস্বের পরিমাণ ১১০ কোটি ১৬ লাখ টাকা।
 
এর মধ্যে পুনঃবিমার কমিশন বাবদ এই নয় বিমা কোম্পানি ২০১৩ থেকে ২০১৬ পর্যন্ত ৬৬ কোটি ৭৩ লাখ ও এজেন্ট কমিশন বাবদ ২০১৫ থেকে ২০১৬ পর্যন্ত ৪৩ কোটি ৪৩ লাখ টাকা ফাঁকি দিয়েছে বলে জানা গেছে।

 
 
সম্প্রতি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) বৃহৎ করদাতা ইউনিট (এলটিইউ) বিমা কোম্পানিগুলোর বার্ষিক প্রতিবেদন পরীক্ষা করে এই ফাঁকি উদঘাটন করেছে।
 
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড সূত্রে জানা যায়, ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিগুলো গ্রাহকদের কাছ থেকে ভ্যাট আদায় করলেও সেই টাকা সরকারের কোষাগারে জমা দেয়নি। এমন গুরুতর অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় একাধিকবার ভ্যাট আইনে অর্থ দণ্ড আরোপ করা হলেও এই প্রবণতা বন্ধ হচ্ছে না।
 
এদিকে বিমা কোম্পানিগুলোর ফাঁকি দেয়া রাজস্ব সরকারের কোষাগারে জমা দিতে কোম্পানিগুলোকে ১৫ দিনের সময় দিয়ে প্রাথমিক দাবিনামা জারি করেছে এনবিআর এর বৃহৎ করদাতা ইউনিট (এলটিইউ)। আর ১৫ দিনের মধ্যে সরকারের কোষাগারে টাকা জমা না দিলে তাদের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত দাবিনামা জারি করা হবে বলে এলটিইউ সূত্র জানিয়েছে।
 
জানা গেছে, মূল্য সংযোজন কর আইন, ১৯৯১-এর ২(ভ) ধারা অনুযায়ী করযোগ্য সেবা প্রদানকারী কর্তৃক প্রদত্ত সেবার বিনিময়ে ভ্যাট ব্যতীত কমিশন ও চার্জ কোম্পানির সর্বমোট প্রাপ্তি বা আয় হিসেবে গণ্য। একই আইনের ৫ ধারার ৪ উপধারা অনুযায়ী উক্ত সেবায় মোট প্রাপ্তির ওপর ভ্যাট ধার্য হবে।
 
অন্যদিকে রি-ইন্স্যুরেন্স বাবদ প্রাপ্ত কমিশন মূল্য সংযোজন কর আইন ১৯৯১ এর দ্বিতীয় তফসিলের অন্তর্ভুক্ত নয় এবং উক্ত আইনের ধারা ১৪ অনুযায়ী অব্যাহতি প্রাপ্ত নয়। সুতরাং বিমা কোম্পানি কর্তৃক রি-ইন্স্যুরেন্সের উপর কমিশন বাবদ সমুদয় প্রাপ্তির ওপর ১৫ শতাংশ হারে মূসক (ভ্যাট) প্রযোজ্য।
 
এলটিইউ সূত্রে জানা যায়, ২০১৩ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত পুনঃবিমার কমিশন বাবদ প্রগতি ইন্স্যুরেন্স ৫ কোটি ৭৩ লাখ, গ্রীন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্স ১৭ কোটি ৫৯ লাখ, রিলায়েন্স ১১ কোটি ৫২ লাখ, পাইওনিয়ার ৩ কোটি ৭০ লাখ, ফিনিক্স ৪ কোটি ১৭ লাখ, ইস্টল্যান্ড ৪ কোটি ৬৬ লাখ, পূবালী ইন্স্যুরেন্স ১ কোটি ৯৪ লাখ ও সাধারণ বীমা করপোরেশন ১৭ কোটি ৪২ লাখ টাকার ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে।
 
পাশাপাশি এজেন্ট কমিশনের উপর প্রগতি ইন্স্যুরেন্স ৬ কোটি ৬৩ লাখ, গ্রীন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্স ১৩ কোটি ২৯ লাখ, রিলায়েন্স ১০ কোটি ৫৩ লাখ, পাইওনিয়ার ৫ কোটি ৩২ লাখ, ইস্টল্যান্ড ৩ কোটি ৬০ লাখ, ফিনিক্স ২ কোটি ৭৩ লাখ, রূপালী ইন্স্যুরেন্স ১ কোটি ৩৩ লাখ টাকার ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে।
 
এ বিষয়ে বৃহৎ করদাতা ইউনিটের (এলটিইউ) সহকারী কমিশনার মো.বদরুজ্জামান মুন্সি বাংলানিউজকে বলেন, নয়টি কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদন ও রিটার্ন পর্যালোচনা করে এই ভ্যাট ফাঁকি উদঘাটন করা হয়েছে। বিমা কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে প্রাথমিক দাবিনামা জারি করে ১৫ দিনের মধ্যে এ টাকা পরিশোধের সময় দেয়া হয়েছে। এরপর চূড়ান্ত দাবিনামা জারি করে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
 
বাংলাদেশ সময়: ১০৩৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৮,২০১৭
এসজে/আরএ/আরআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।