ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

ঘরে ঘরে দুধেল গরু

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১২৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৭, ২০১৭
ঘরে ঘরে দুধেল গরু বয়ারভাঙ্গা গ্রামের একটির বাড়ির গোয়াল ঘর/ ছবি: মাহবুবুর রহমান মুন্না

খুলনার বটিয়াঘাটার বয়ারভাঙ্গা থেকে ফিরে: পূর্বে খরস্রোতা পশুর আর পশ্চিমে যৌবন হারানো শালতা নদী। দুই নদীর মাঝে সবুজ গ্রামটি খুলনার বটিয়াঘাটার বয়ারভাঙ্গা। গ্রামটিতে এমন বাড়ি নেই যেখানে সকাল হলে দুধেল গরুর দুধ দোয়ানোর দৃশ্য চোখে পড়বে না। গ্রামবাসী নিজেদের দুধের চাহিদা মেটানোর পর বাড়তি দুধ বিক্রি করেন। কেউ কেউ বাণিজ্যিকভাবে দেশি জাতের গরুর খামার গড়ে ঘুরিয়েছেন ভাগ্যের চাকা।

সরেজমিনে বয়ারভাঙ্গা গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, বাড়িতে বাড়িতে শারীরিক বৃদ্ধিহার কম, আকারে অপেক্ষাকৃত ছোট জাতের দেশি গরু রয়েছে। এর অধিকাংশই গাভী।

ভোরেই গরু নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন গ্রামবাসী। গাভীগুলোকে উঠোনে জড়ো করা, দুধ দোয়ানো, গোবর সরিয়ে গোয়াল পরিষ্কার করা, দোয়ানো দুধ ছোট-বড় সিলভারের কলসিতে ভর্তি করে বিক্রি করা। এসব কাজের বেশির ভাগই করেন গৃহিণীরা।

তারা জানান, বাড়িতে স্বল্প জায়গায় অনেকটা ঝুঁকিবিহীন সফল ব্যবসা গাভী পালন। ধান, তিল ও পাট চাষের চেয়ে এটি বেশ লাভজনক। সকাল হলেই দলে দলে সাইকেল ও ভ্যানে কলস নিয়ে দুধ সংগ্রহ করতে বয়ারভাঙ্গা গ্রামে আসেন দুধ সংগ্রহকারীরা।
বয়ারভাঙ্গা গ্রামের একটি বাড়িবয়ারভাঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা চরখালি মাছালিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক সুনীল মন্ডল বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের গ্রামের পূর্ব, পশ্চিম আর মধ্য পাড়ায় প্রায় ১ হাজার পরিবার বাস করে। এসব পরিবারের প্রায় প্রতিটি বাড়িতে দুধেল গরু আছে। একটা দুইটা থেকে শুরু করে অনেকের ১৫-২০টি পর্যন্ত গরু আছে।

তিনি জানান, ভোর থেকে প্রতিটি ঘরে শুরু হয় গাভীর দুধ দোয়ানোর কাজ। সেই দুধ নিতে আসেন খুচরা বিক্রেতা ও ডেইরি ফার্মের প্রতিনিধিরা। এভাবেই নিত্যদিনের কর্মযজ্ঞ চলে এ গ্রামে।

সুনীল মন্ডল বলেন, বহু আগ থেকেই এ গ্রাম দুধের গ্রাম বলে পরিচিতি পেয়েছে। সরকারিভাবে পৃষ্ঠপোষকতায় এখানে গাভী লালন-পালনের কোনো ব্যবস্থা নেই। সবই ব্যক্তিকেন্দ্রিক।

একই গ্রামের বাসিন্দা অধীর মন্ডল বলেন, গাভী পালন ও দুধ উৎপাদনে এ গ্রামের খ্যাতি আছে। আমার মোট চারটি গরু আছে। এর মধ্যে দুটি গাভী দুধ দিচ্ছে।

তিনি জানান, গ্রামের অনেকের একমাত্র পেশা গরু পালন। প্রত্যেকের ঘরেই দুই থেকে ৮টি পর্যন্ত গাভী আছে। দুধ বিক্রি করে এখানকার মানুষ সুখের মুখ দেখছেন। দুধ ও গরু বিক্রি করে কর্মসংস্থানের পাশাপাশি পরিবারের ভরণ-পোষণ ও জীবন-জীবিকায় স্বাবলম্বী হয়েছেন তারা।

গ্রাম থেকে দুধ সংগ্রহকারী গুরুচরণ জানান, প্রতিদিন ২০ বাড়ি থেকে দুধ কিনে খুলনা শহরে নিয়ে যান তিনি। প্রতি কেজি দুধ ৪০টাকা দরে কেনেন গুরুচরণ।
বয়ারভাঙ্গা গ্রামে দুধ সংগ্রহে এসেছেন এক ব্যবসাযীতিনি আরও জানান, তার মতো অনেকে এ গ্রাম থেকে দুধ কিনে খুলনার বিভিন্ন ডেইরি ফার্ম, মিষ্টির দোকান ও বাসা বাড়িতে সরবরাহ করেন। নির্ভেজাল ও ফরমালিনমুক্ত খাঁটি এ দুধের চাহিদা অনেক।

স্বামীর রোজগারে সংসার চালাতে হিমশিম খেতেন সবিতা নামে এক গৃহিণী। এখন গরুর দুধ বেচে সংসারের দুর্দশা ঘুচেছে। সবিতা বলেন, সংসারে সুখ বলতে কিছুই ছিল না। এখন সংসার চালিয়ে ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়ার খরচ চালাচ্ছি দুধ বিক্রির টাকায়।

তবে একই সঙ্গে তার অভিযোগ করে বলেন, দীর্ঘ সময় দুধ সংরক্ষণেরও কোনো ব্যবস্থা নেই এখানে। এছাড়া আমরা দুধের ন্যায্য দামও পাই না!

বাংলাদেশ সময়: ১৭১৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৭, ২০১৭
এমআরএম/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।