অন্যদিকে ভারতীয় কনসোর্টিয়াম অংশীদারিত্বের জন্য সব ধরনের লবিং চালাচ্ছে। বিএসইসি সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
বিএসইসি’র সূত্র মতে, কৌশলগত বিনিয়োগকারী ইস্যুতে চীনা কনসোর্টিয়াম বাংলাদেশের আইন পরিপন্থী অনেক শর্ত দিয়েছে। ডিএসইও যাচাই-বাছাই না করে কমিশনে এই প্রস্তাব জমা দিয়েছে। অন্যদিকে ভারতীয় কনসোর্টিয়ামকে অনুমোদন দিলে শেয়ারহোল্ডারদের অন্তত ৬০০ কোটি টাকা লোকসান হবে বলে জানিয়েছেন ডিএসইর সদস্যরা।
কমিশনের পর্যালোচনা কমিটির মতে, ডিএসই কৌশলগত বিনিয়োগকারীর চুক্তি যুক্তরাজ্যের (ইউনাইটেড কিংডম) পরিবর্তে বাংলাদেশের আইনে করবে। কিন্তু তা না করে যুক্তরাজ্যের আইনে করা হয়েছে। কমিশনের আপত্তির কারণে চীনা কনসোর্টিয়াম এখন যুক্তরাজ্যের আইনে চুক্তি বাতিল করতে প্রস্তুত।
অন্যদিকে ডিএসইর পরিচালকদের সংখ্যা পরিবর্তন, ১৫ শতাংশের অধিক যে কোনো স্থায়ী সম্পদের বিষয়, একক বা যৌথভাবে ১০ কোটি টাকার অধিক ঋণ গ্রহণ, ১০ কোটি টাকার উপরে চুক্তি, একক বা যৌথভাবে ১০ কোটি টাকার উপরে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের যে নিয়ম রয়েছে সেগুলোর মানতে রাজি চীনা কনসোর্টিয়াম।
এ ছাড়াও কৌশলগত বিনিয়োগকারীর স্বার্থ জড়িত যে কোন ইস্যু, যেকোন ধরনের ইনটেলেকচ্যুয়াল সম্পত্তি অর্জন, চীনের কৌশলগত বিনিয়োগকারী তার ইচ্ছা অনুযায়ী যে কাউকে পরিচালক হিসেবে নিয়োগ প্রদানের প্রস্তাব, সেটেলম্যান্ট গ্যারান্টি ফান্ড কন্টিবিউশন বাদ বা স্থগিত করতে হবে এবং ডিএসইর আইপিও সংক্রান্ত যে কোন ইস্যু যেমন, শেয়ারের দাম নির্ধারণ, স্পন্সর নির্ধারণ, অবলেখক নিয়োগ, প্রসপেক্টাস অনুমোদন ও ইস্যু মূল্য নির্ধারণের আগে চীনের কনসোর্টিয়াম লিখিত অনুমোদন নেওয়ার শর্তগুলোর বাতিল করতেও প্রস্তুত চীনা করসোর্টিয়াম। বিষয়টি ডিএসইকে জানিয়েছে চীনা কনসোর্টিয়াম। ডিএসইও কমিশনের ব্যাখ্যার জবাবে তা জানিয়ে দিয়েছে।
এর আগের চীনা কনসোর্টিয়া পক্ষ বাংলাদেশের নিযুক্ত চীনা দূতাবাস থেকে ডিএসইর অংশীদারিত্ব পেতে বিএসইসি, অর্থমন্ত্রণালয় এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়কেও চিঠি দিয়েছে। এরপর ডিএসই’র বোর্ড দর প্রস্তাবে শীর্ষে থাকা চীনা কনসোর্টিয়ামকে অনুমোদন দিয়ে গত ২২ ফেব্রুয়ারি এই প্রস্তাব জমা দিয়েছে। প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে কমিশন একটি পর্যালোচনা কমিটি গঠন করে। এই কমিটি প্রথম দফায় বেশ কিছু ব্যাখ্যা চেয়েছে। ডিএসই তার ব্যাখ্যা দিয়েছে। তারপরও দ্বিতীয় দফা ব্যাখ্যা চেয়ে তারও ব্যাখ্যার জবাব দিয়েছে ডিএসই। কিন্তু তাতেও সন্তুষ্ট নয় কমিশন।
চীনের কনসোর্টিয়াম ডিএসইর প্রতিটি শেয়ার ২২ টাকা দরে কেনাসহ একটি প্রস্তাব ডিএসইতে জমা দিয়েছে। যা ডিএসইর বোর্ড অনুমোদন করেছে।
অন্যদিকে ভারতীয় কনসোর্টিয়াম ডিএসইর শেয়ার ১৫ টাকা দরে কেনার প্রস্তাব দিয়েছে। ফলে প্রাথমিকভাবে ডিএসইর অনুমোদন থেকে বাদ এই কনসোর্টিয়ামটি কমিশনের সঙ্গে যোগসাজসে লবিং চালিয়ে যাচ্ছে। সর্বশেষ তারা যুক্তরাষ্ট্রের হাইকমিশনের একটি প্রতিনিধি দল দিয়ে কমিশনের তদবির চালাচ্ছে। এই প্রতিনিধি দল গত ০৬ মার্চ কমিশনের চেয়ারম্যান ও কমিশনারের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। অথচ ওই দিন কমিশন সভা ছিলো। কমিশন তাদের নিয়মিত সভায় বাদ দিয়ে ওই প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক করে। কমিশন যদি ভারতীয় কনসোর্টিয়ামকে চূড়ান্ত অনুমোদন দেয় তবে অন্তত ৬০০ কোটি টাকা লোকসান হবে বলে দাবি ডিএসইর শেয়ারহোল্ডারদের।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক সাইফুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, নিয়ম অনুসরণ করেই যোগ্য কনসোর্টিয়ামকে ডিএসইসির কৌশলগত বিনিয়োগকারী হিসেবে অনুমোদন দেওয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়: ০৬০১ ঘণ্টা, মার্চ ১১, ২০১৮
এমএফআই/এসএইচ