খুচরা ও পাইকারি বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রমজান আসছে বলে চাহিদা বেড়ে গেছে। তাই ক্রেতার চাহিদাকে কেন্দ্র করেই বেড়েছে পেঁয়াজের দাম।
অর্থনীতি শাস্ত্রে চাহিদা ও দামের গ্রাফ বলে- চাহিদা বাড়লে দাম বাড়ে। আবার দাম বেড়ে গেলেও চাহিদা কমে যায়। অন্যদিকে যোগান ও চাহিদার সম্পর্ক বলে- যোগান কম হলে চাহিদা ও দাম বাড়ে। বাজার অর্থনীতিতে এই যে চাহিদা, যোগান ও দামের সম্পর্ক, এটা কে নির্ধারণ করে তা বলতে পারেননি অর্থনীতিবিদরা। তারা পুরো প্রক্রিয়াটির নাম দিয়েছেন ‘অদৃশ্য হাত’। যে ‘অদৃশ্য হাত’ বাজার নিয়ন্ত্রণ করে।
বিক্রেতারা বলছেন, এবার পেঁয়াজের উৎপাদন ভালো হয়েছে। দেশীয় পেঁয়াজে আরো ছয় থেকে সাত মাস নির্বিঘ্নেই চলবে। তার অর্থ যোগানের কোনো ঘাটতি নেই। অর্থনীতির সূত্র অনুযায়ী, যোগান বাড়ায় দাম কমার কথা। কিন্তু তারপরও বাড়লো।
রাজধানীর শ্যামবাজারসহ বেশকিছু খুচরা বাজার ঘুরে জানা গেছে, অর্থনীতির ‘অদৃশ্য হাত’ এর ওপর ভর করেছে কিছু কারসাজিও। চাহিদার কারণে দাম বাড়াটা স্বাভাবিক। তবে হঠাৎ করে অধিকহারে দাম বাড়াটা অস্বাভাবিক। যা কারসাজির কারণেই হয়ে থাকে।
রমজান উপলক্ষে ক্রেতারা বেশি করে পেঁয়াজ ক্রয় করছেন। ফলে পেঁয়াজের চাহিদা বেড়েছে। আর এ সুযোগটি নিচ্ছেন আমদানিকারকরা। ভারতীয় পেঁয়াজের একটি বিশাল বাজার রয়েছে। আমদানিকারকরা চাহিদা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভারতীয় পেঁয়াজের দর কেজিতে ৫ থেকে ১০ টাকা বাড়িয়ে দিয়েছেন। এর সঙ্গে তাল মিলিয়ে দেশি পেঁয়াজের দামও বাড়ানো হয়েছে কেজিতে ৮ থেকে ১২ টাকা পর্যন্ত।
বিক্রেতারা বলছেন, বাজার নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে আমদানিকারকদের ওপর। তারা ভারতীয় পেঁয়াজের দাম বাড়ালে যোগান থাকা সত্ত্বেও বেশি মুনাফার লোভে বাড়ানো হয়েছে দেশি পেঁয়াজের দামও।
শ্যামবাজারের পাইকারি বিক্রেতা মো. সেলিম বাংলানিউজকে বলেন, দেশি পেঁয়াজ সবচেয়ে বেশি হয় পাবনা, রাজশাহী আর ফরিদপুরে। আমরা সেখান থেকে সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে ক্রয় করি। সেখান থেকে ৩৫ টাকা থেকে ৩৬ টাকা কেজি দরে কেনা হয়। আর বিক্রি হচ্ছে ৩৯ থেকে ৪০ টাকা প্রতি কেজি।
গত সপ্তাহের বিক্রি হয়েছে কেজিতে ৩২ থেকে ৩৩ টাকা দরে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে দেশি পেঁয়াজের পাইকারি বাজারে দাম বেড়েছে ৭ থেকে ৮ টাকা।
রাজধানীর হাতিরপুল, মগবাজার খুচরা বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫০ হচ্ছে ৫৫ টাকা দরে।
ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রিতে মো. জামালের ব্যবসা ৩০ বছরের। বর্তমানে ২৫ থেকে ২৬ টাকা দরে ক্রয় করে তারা পাইকারি বিক্রি করছে ২৭ থেকে ২৮ টাকা। এক সপ্তাহ আগে যেটা বিক্রি হয়েছে ১৮ থেকে ১৯ টাকা দরে। অর্থাৎ ভারতীয় পেঁয়াজও এক সপ্তাহের ব্যবধানে ১১ টাকার মতো বেড়েছে।
খুচরা বাজারে ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা কেজি দরে।
সেলিম বলেন, প্রথমে ভারতীয় পেঁয়াজের দামই বেড়েছে। তার দেখাদেখি, দেশি পেঁয়াজের দামও বাড়িয়েছে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। তবে এটা রমজানের প্রথম সপ্তাহেই কমে যাবে। কারণ, এবার দেশি পেঁয়াজের ফলন বেশ ভালো হয়েছে। অন্তত আরো ছয় থেকে সাত মাস চলবে।
বাংলাদেশ সময়: ২০১০ ঘণ্টা, মে ০৫, ২০১৮
ইইউডি/এমজেএফ