ঠাঁই নেন পুরান ঢাকার চকবাজারের ওয়াটার ওয়ার্কার্স রোডের ডালপট্টিতে। সেখানে ঘুরতে ঘুরতে কয়েকজন শ্রমিকের সঙ্গে কথা হয়।
প্রথমে কোনও টাকা-পয়সা পেতেন না। খাওয়া ও থাকার বিনিময়ে শ্রমিক হিসেবে কাজ শুরু করেন ডালপট্টির ‘সুমন ডাল মিলে’। চট্টগ্রাম থেকে আসা ডালবোঝাই ট্রাকের পণ্য খালাস করতেন এই মিলের হয়ে। এরপরে ঠেলাগাড়ি করে পণ্য ডাল নিয়ে যেতেন মিলে। সেখানে নিজের হাতে ছোলা, মশুরি ও খেসারি ডাল মিলিয়ে ডাল তৈরি করতেন। সেই ডাল বিক্রির জন্য আবারও গোডাউনে নিয়ে যেতেন।
সময় গড়িয়ে সে মিলেরই মালিক এখন নেসার। কঠোর পরিশ্রম আর বুদ্ধিমত্তা তাকে বানিয়ে দিয়েছে কোটি টাকার মালিক। অল্প অল্প করে সঞ্চিত টাকায় ঢাকায় গড়ে তুলেছেন নয়তলা বাড়ি। বর্তমানে ডালপট্টির সবচেয়ে বড় দোকানটি তার।
এরমধ্যে বাংলাদেশ ডাল ব্যবসায়ী সমিতির সহ-সভাপতির দায়িত্ব পেয়েছেন। কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিবিরে চাল, ডাল ও তেল সরবরাহও করছেন তিনি। সঠিক সময়ে খাদ্য সরবরাহ করায় জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (ডব্লিউএফপি) সুনামও কুড়িয়েছেন নেসার।
এই যে দীর্ঘ সংগ্রামের পথ পাড়ি দিয়ে এতোটা মজবুত ভিতে দাঁড়িয়ে গেলেন, তাতে কিন্তু অতীত ভুলে যাননি নেসার। গর্ব নিয়ে বলেন, শ্রমিক থেকে মালিক হয়ে ওঠার গল্প। শনিবার (৫ মে) সকালে চকবাজারের ডালপট্টিতে নিজের দোকানেই বাংলানিউজের সঙ্গে কথা হচ্ছিল ৬২ বছরের নেসার উদ্দিনের।
শ্রমিক জীবনের সংগ্রামী গল্প তুলে ধরে নেসার বলেন, আমি কাজ ভালোবাসি। যে মিলে শ্রম দিয়েছি, সে মিলের মালিক হয়েছি। আল্লাহ আমাকে অনেক সম্পদ দিয়েছেন। এখন আমার কিছু চাওয়া-পাওয়ার নেই।
শ্রম দিয়েই তার সব অর্জন জানিয়ে নেসার উদ্দিন বলেন, এক সময় নিঃস্ব অবস্থায় ঘর ছেড়ে ঢাকায় এসেছিলাম। এখন আল্লাহ আমাকে সবকিছুই দিয়েছে। টাকা, পয়সা ও সম্মানের কমতি নেই। পরিশ্রম ও সঠিক পথে চললে সৃষ্টিকর্তা সবকিছুই দেবেন বলে আমি মনে করি। প্রথম এ ঢাকায় ফুটপাতে ঘুমিয়েছি। এখন নিজস্ব জমিতে নয়তলা বাড়ি নির্মাণ করেছি।
নেসারের চার সন্তানেরও এখন দিন যাচ্ছে বেশ। বড় ছেলে আবু জাফর খান সুমন স্নাতক পাস করে বাবার ব্যবসা দেখভাল করছেন। বড় মেয়ে মরিয়ম বেগম লাভলী আইনজীবী। এছাড়া দুই মেয়ে রাবেয়া বসরী তানিয়া ও জুবায়দা খাতুন সুমনাকে স্বশিক্ষিত করে দিয়ে দিয়েছেন বিয়ে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯২৫ ঘণ্টা, মে ০৬, ২০১৮
এমআইএস/আরবি/এইচএ/