ঢাকার জুরাইন থেকে মাওয়া এবং শরীয়তপুরের পাচ্চর থেকে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত এক্সপ্রেসওয়ে খুলে দেওয়া হবে। এটি হবে এশিয়ান হাইওয়ের করিডোর-১ এর অংশ।
৮ লেনের এক্সপ্রেসওয়েটি সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের তত্ত্বাবধানে নির্মাণ করছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর স্পেশাল ওয়ার্কস অর্গানাইজেশন-এসডব্লিউও (পশ্চিম)। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর স্পেশাল ওয়ার্কস অর্গানাইজেশনের সঠিক তত্ত্বাবধানে নির্দিষ্ট সময়ের আগে সম্পূর্ণ হতে যাচ্ছে এক্সপ্রেসওয়ের কাজ।
এক্সপ্রেসওয়ে প্রসঙ্গে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের কারণে জুরাইনের মানুষের অনেক ভোগান্তি হয়েছে। অনেকে আমাদের অভিযোগও করেছেন। বিষয়টি নিয়ে আমরা কনসার্ন ছিলাম। সবার সহযোগিতায় এক্সপ্রেসওয়ের কাজ শেষ পর্যায়ে। এই এক্সপ্রেসওয়েটি বাংলাদেশের প্রথম। এটা জুরাইন থেকে মাওয়া, এরপরে পদ্মাসেতুর পরে জাজিরা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত আরও একটা পার্ট হবে। পদ্মাসেতু হয়ে গেলে তখন দুটি পার্ট এক হয়ে যাবে। সেই লক্ষ্যকে সামনে রেখে বাংলাদেশে প্রথম এক্সপ্রেসওয়ে আমরা নির্মাণ করতে যাচ্ছি।
তিনি আরও বলেন, এটা নির্মাণের দায়িত্ব পালন করছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর স্পেশাল ওয়ার্কস অর্গানাইজেশন-এসডব্লিউও (পশ্চিম)। জুরাইনে বিকল্প রুট হচ্ছে। ফলে এখানের মানুষের ভোগান্তি আর থাকবে না। সেনাবাহিনী খুবই চমৎকারভাবে কাজ করছে। আগামী সেপ্টেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহে জুরাইন থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত এক্সপ্রেসওয়ের কাজ সম্পন্ন হবে।
পদ্মাসেতু উদ্বোধনের পরে এক্সপ্রেসওয়ের মাধ্যমে রাজধানী ঢাকার যাত্রাবাড়ী থেকে মাত্র ৪২ মিনিটে ফরিদপুরের ভাঙ্গায় পৌঁছানো যাবে। এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহারের জন্য টোল দিতে হবে যানবাহনগুলোকে। এটি চালু হলে ঢাকার যাত্রাবাড়ী থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত ৫৫ কিলোমিটার নন-স্টপ গাড়ি চালিয়ে যাওয়া যাবে।
ছয় হাজার ২৫২ কোটি ২৮ লাখ টাকায় নির্মাণাধীন এ প্রকল্পের কাজ শেষ করার মেয়াদ ছিলো ২০১৯ সালের এপ্রিলে। সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের অধীনে ঢাকা-খুলনা (এন-৮) মহাসড়কের যাত্রাবাড়ী ইন্টারসেকশন থেকে মাওয়া হয়ে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত ৫৫ কিলোমিটার ছয় লেনের এই এক্সপ্রেসওয়ের মূল সড়কটি হবে চার লেনের। এক্সপ্রেসওয়ের দুই পাশে দুই লেন করে থাকবে পৃথক সড়ক। যাতে ধীরগতির যানবাহন চলাচল করতে পারে। নির্দিষ্ট কয়েকটি পয়েন্ট ছাড়া এক্সপ্রেসওয়েতে ওঠা এবং এক্সপ্রেসওয়েতে নামা যাবে না। এক্সপ্রেসওয়েতে থাকবে না কোনো ট্রাফিক ক্রসিং।
এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণ কাজ হবে দুটি প্যাকেজে। প্রথম প্যাকেজে যাত্রাবাড়ী ইন্টারসেকশন থেকে মাওয়া পর্যন্ত ৩৫ কিলোমিটার এবং দ্বিতীয় প্যাকেজে শরীয়তপুরের পাচ্চর থেকে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার।
এক্সপ্রেসওয়েতে মোট সেতুর সংখ্যা হবে ৩১টি। এগুলোর মধ্যে পিসি গার্ডারের সেতু হবে ২০টি ও আরসিসির ১১টি। এছাড়া ধলেশ্বরী-১ ও ধলেশ্বরী-২ এবং আড়িয়াল খাঁ নদীর উপর তিনটি বড় সেতু নির্মাণ করা হবে।
এর বাইরে ৪৫টি কালভার্ট, আবদুল্লাহপুর, হাঁসারা, শ্রীনগর, কদমতলী, পুলিয়া বাজার ও সদরপুরে থাকবে ৬টি ফ্লাইওভার। জুরাইন, কুচিয়ামোড়া, শ্রীনগর ও আতাদিতে থাকবে ৪টি রেলওয়ে ওভারপাস। গ্রেট সেপারেটর হিসেবে ১৫টি আন্ডারপাস ও ৩টি ইন্টারচেঞ্জ নির্মাণ করা হবে। এগুলো হবে যাত্রাবাড়ী, দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের তেঘরিয়া এবং ভাঙ্গায়।
এক্সপ্রেসওয়ের দুই প্রান্তে দুটি টোলপ্লাজা নির্মাণ করা হবে। এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণ কাজ শেষ হলে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বিশেষ করে ফরিদপুর, মাদারীপুর, বরিশাল, শরীয়তপুর, বাগেরহাট, গোপালগঞ্জ, খুলনা জেলাসহ আশপাশের সব জেলার সঙ্গে রাজধানীর সড়ক যোগাযোগে নিরাপদ ও আরামদায়ক হবে।
বাংলাদেশ সময়: ০৬০৯ ঘণ্টা, জুন ৬, ২০১৮
এমআইএস/এমজেএফ