প্রস্তাবিত বাজেট বাস্তবায়ন হলে তা স্থানীয় পর্যায়ে মোবাইল ফোনের মাদারবোর্ড, ডিসপ্লে, হাউজিং অ্যান্ড কেসিং, ব্যাটারি, চার্জার, এয়ারফোনসহ সব প্রকার অ্যাক্সেসরিজ উৎপাদন শিল্পের জন্য সহায়ক হবে। এর ফলে এ খাতে দেশীয় বিনিয়োগ বাড়বে, বিদেশ নির্ভরতা হ্রাস পাবে এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।
বৃহস্পতিবার (৭ জুন) অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত তার বাজেট বক্তৃতায় দেশীয় মোবাইল ফোন উৎপাদন কার্যক্রমকে উৎসাহিত করতে বেশকিছু প্রস্তাবনা উপস্থাপন করেন।
এর মধ্যে মোবাইল ফোন উৎপাদনের ওপর সারচার্জ অব্যাহতি দিয়ে ফোনসেট আমদানিতে ২ শতাংশ সারচার্জ আরোপ, ব্যাটারি ও চার্জার আমদানিতে ১৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ এবং দেশে মোবাইল ফোনসেট উৎপাদন পর্যায়ে মূসক অব্যাহতি সুবিধা দিয়ে একটি আলাদা প্রজ্ঞাপন জারির কথা বলা হয়েছে।
অর্থমন্ত্রীর প্রস্তাবিত বাজেট স্বাগত জানিয়েছেন দেশীয় মোবাইল ফোন উৎপাদন শিল্পের উদ্যেক্তারা। তারা প্রস্তাবিত বাজেট দেশীয় প্রযুক্তিপণ্য উৎপাদন শিল্পের জন্য সহায়ক বলে বিবেচনা করছেন। তাদের মতে, দেরিতে হলেও সরকার এ বিষয়ে উপযুক্ত নীতি গ্রহণ করেছে। প্রযুক্তি খাতে অগ্রাধিকার এখন সময়ের দাবি। এর ফলে দেশে হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার শিল্পের বিকাশ ঘটবে।
কম্পিউটার অ্যান্ড মোবাইল ম্যানুফ্যাকচারার অ্যান্ড এক্সপোটার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (প্রস্তাবিত)- এর মহাসচিব মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন (এসিএস) বলেন, তথ্যপ্রযুক্তির বিকাশে মোবাইল ফোনের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। প্রস্তাবিত বাজেট দেশীয় মোবাইল ফোন উৎপাদন শিল্পের জন্য খুবই সহায়ক হবে, হাই-টেক শিল্প বিকাশের পথ সুগম হবে। দেশে মোবাইল হ্যান্ডসেট উৎপাদন পর্যায়ে মূসক অব্যাহতির সুবিধা দিয়ে অর্থমন্ত্রী যে আলাদা প্রজ্ঞাপন জারির প্রস্তাব করেছেন, তা বাস্তবায়িত হলে স্থানীয় পর্যায়ে মাদারবোর্ড, ডিসপ্লে, হাউজিং অ্যান্ড কেসিং, ব্যাটারি, চার্জার, এয়ারফোনসহ সব প্রকার অ্যাক্সেসরিজ উৎপাদন শিল্পের জন্য সহায়ক হবে।
এদিকে, সংশ্লিষ্টদের মতে মোবাইল ফোন উৎপাদকদের জন্য এটি প্রণোদনা হিসেবে কাজ করবে। এর ফলে দেশীয় তথ্যপ্রযুক্তি পণ্য উৎপাদন খাতে দেশি-বিদেশি উদ্যোক্তারা বিনিয়োগে আগ্রহী হবেন। দেশে ডিজিটালাইজেশনের গতি বাড়বে। দেশেই তথ্যপ্রযুক্তি পণ্য তৈরি হলে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হবে। কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। দক্ষ কর্মী তৈরি হবে। যা প্রকৃতপক্ষে দেশ ও জাতির সামগ্রিক কল্যাণ বয়ে আনবে।
উদ্যোক্তারা বলছেন, প্রস্তাবিত বাজেট বাস্তবায়ন হলে সুরক্ষা পাবে বিনিয়োগ। এ খাতে প্রকৃত উৎপাদক সৃষ্টি হবে। দেশেই নিজস্ব তত্ত্বাবধানে কঠোর মান নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে মোবাইল ফোন ও এর খুচরা যন্ত্রাংশ তৈরি সম্ভব হবে। দেশে আরো বেশি হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার শিল্প গড়ে উঠবে। কমে আসবে উৎপাদিত প্রযুক্তিপণ্যের প্রান্তিক উৎপাদন খরচ। যার সুফল পাবেন ক্রেতারা। শিল্পায়নের ক্ষেত্রে উৎপাদনমুখী শিল্পের বিকাশ তরান্বিত হবে। বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে প্রযুক্তিখাতে এগিয়ে যাবে দেশ। সরকারের ‘ভিশন ২০২১’ রূপকল্প বাস্তবায়নে মোবাইল ফোন ও আইসিটি ডিভাইসের মতো দেশীয় হাই-টেক ম্যানুফ্যাকচারিং শিল্পের বিকাশ এখন সময়ের দাবি।
এ বিষয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় অর্থনীতি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. কেবিএম মাহবুবুর রহমান বলেন, মোবাইল ফোন সেট আমদানিতে সারচার্জ আরোপ এবং ব্যাটারি ও চার্জার আমদানিতে ১৫ শতাংশ শুল্ক বাড়ানো দেশে মোবাইল ফোনসেট উৎপাদনে সহায়ক হবে। আর এ শিল্পের বিকাশ হলে দেশে বেকারত্ব কমবে। যুবকের কর্মসংস্থান হবে। মোবাইল ফোন সেট আমদানি না হলে এটি আমাদের অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। এর ফলে প্রযুক্তি খাতে উন্নয়নের জন্য প্রশিক্ষিত জনবল তৈরি হবে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আলাউদ্দিন মজুমদার প্রস্তাবিত বাজেটকে দেশীয় মোবাইল ফোন উৎপাদন শিল্পের জন্য ইতিবাচক বলে মনে করছেন।
তিনি বলেন, বাজেট প্রস্তাবনায় মোবাইল ফোন আমদানিকে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। পাশাপাশি, দেশেই প্রকৃত মোবাইল ফোন উৎপাদন শিল্পের বিনিয়োগকে উৎসাহিত করা হয়েছে। এটা দেশের জন্যই মঙ্গল।
বাংলাদেশ সময়: ১১৪৫ ঘণ্টা, জুন ১০, ২০১৮
আরআইএস/