ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

পদ্মা ঘিরে মহাপরিকল্পনা

রহমান মাসুদ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৫৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৩, ২০১৯
পদ্মা ঘিরে মহাপরিকল্পনা

ঢাকা: পদ্মা ঘিরে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ। বর্ষায় যে নদীর উন্মত্ততায় দিশেহারা হতে হয় লাখো মানুষকে, সেই পদ্মাকে ঘিরেই এখন নদীপাড়ের মানুষ ভাসছে ঝলমলে এক সমৃদ্ধ ও সচ্ছল জীবনের স্বপ্নে। এই স্বপ্নের কেন্দ্রবিন্দু পদ্মাসেতু।

কেবল পদ্মাসেতুই নয়, পদ্মা নদীর পাশেই বঙ্গবন্ধু আর্ন্তজাতিক বিমানবন্দর, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত হংকংয়ের আদলে নতুন শহর, অলিম্পিক ভিলেজ, কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, নৌ-বন্দর, অভ্যন্তরীণ কন্টেইনার টার্মিনাল, বিশেষ অর্থনৈতিক জোন, ইকোনমিক করিডোর, আধুনিক রেল, সড়ক ও নৌ যোগাযোগ ব্যবস্থার হাতছানিও মানুষকে এই স্বপ্নের পথে এগিয়ে দিচ্ছে।
 
সরকারের উন্নয়ন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ২০১৯ সালের জুনের মধ্যে দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষের স্বপ্নের পদ্মাসেতুর কাজ শেষ হওয়ার কথা।

এই সেতু হয়ে গেলে, পাশাপাশি পটুয়াখালীর পায়রায় গভীর সমুদ্রবন্দর ও দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম ‘এনার্জি হাব’ তৈরির কাজ শেষ হয়ে গেলে পাল্টে যাবে দক্ষিণাঞ্চলের আর্থসামাজিক চিত্র। আর ফরিদপুরের ভাঙ্গা থেকে যশোর হয়ে মোংলা বন্দর এবং বরিশাল হয়ে পায়রা পর্যন্ত রেল লাইনের কাজও চলছে, এই কাজ শেষ হয়ে গেলে বরিশাল অঞ্চল রূপ নেবে সিঙ্গাপুরের মতো এবং পদ্মার দুইপাড়, বিশেষ করে দক্ষিণ পাড় পরিণত হবে হংকংয়ের মতো উন্নত ও সমৃদ্ধ জনপদে।
 
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৪ সালের ৬ জুলাই পদ্মাসেতুর কাজ শুরু হওয়ার পর প্রথমে পদ্মার পাড়ে ‘হংকং’র আদলে নতুন শহর তৈরির পরিকল্পনা নিতে কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেন।
 
এই শহরে আর্ন্তজাতিক মানের সম্মেলন কেন্দ্র, অ্যামিউজমেন্ট পার্ক, এন্টারটেইনমেন্ট পার্ক, কালচালারাল ভিলেজ, বিনোদন কেন্দ্র, ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার, স্থায়ী বাণিজ্যমেলা কেন্দ্র বা এক্সিবিশন সেন্টার রাখার কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। ওই দিন তিনি বলেছিলেন, ঢাকার কাছের এই এলাকাকে ‘আধুনিক নগরী’তে রূপ দিতে কাজ করছে সরকার। ঢাকার জিরো পয়েন্ট থেকে পদ্মাসেতু এলাকার দূরত্ব মাত্র ২৫ কিলোমিটার। বিজয়নগর থেকে ঢাকা-মাওয়া সড়কে ১৩ কিলোমিটার দৈর্ঘের একটি উড়ালসেতু করে পদ্মাসেতু এলাকার সঙ্গে রাজধানীবাসীর যাতায়াত আরও সহজ করা হচ্ছে।
 
কেবল হংকংয়ের আদলে আধুনিক শহরই নয়, পদ্মার পাড়ে একটি অলিম্পিক ভিলেজ তৈরির নির্দেশনাও দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এরইমধ্যে এই ভিলেজের জন্য ১২শ’ একরের বেশি জমি চিহ্নিত করা হয়েছে মাদারীপুরের শিবচরে। এখানে ৩০ হাজার একরের খাস জমিও আছে সরকারের।
 
এরপাশেই হচ্ছে বঙ্গবন্ধু আর্ন্তজাতিক বিমানবন্দর। সেখানে এরইমধ্যে ১২ হাজার একর জমি চিহ্নিত করেছে জাপানি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিপ্পন কোই লিমিটেড। বাংলাদেশ সরকারের নতুন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী এ বিষয়ে বাংলানিউজকে বলেন, এই বিমানবন্দরটি হবে প্রাচ্য এবং পাশ্চাত্যের মিলনকেন্দ্র। পদ্মাসেতুর ওপারে এবং সেতুর পাশেই নতুন এই বিমানবন্দর গড়ে তোলা হবে।
 
বঙ্গবন্ধু আর্ন্তজাতিক বিমানবন্দরের প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, এই বিমানবন্দরে প্রতি মিনিটে একটি করে ফ্লাইট ওঠানামা করতে পারবে। বছরে কমপক্ষে এক কোটি ২০ লাখ যাত্রীর চেক ইন ও চেক আউটের সুযোগ থাকছে। বিমানবন্দর থেকে বের হয়ে ৩০ মিনিটে কোনো যানজট ছাড়াই ঢাকার জিরো পয়েন্টে পৌঁছানোর সুযোগ থাকছে যাত্রীদের। এই বিমানবন্দরে প্রতি চব্বিশ ঘণ্টায় ৪শ’ যাত্রীবাহী ফ্লাইট ও ২শ’ কার্গোবাহী ফ্লাইট অপারেশনের সুযোগ থাকছে। এখান থেকে এক ঘণ্টায় ঢাকার হযরত আন্তর্জাতিক শাহজালাল বিমানবন্দরে পৌঁছানোর জন্য থাকবে বিশেষ মেট্রোরেল।

সড়ক যোগাযোগ ও সেতু মন্ত্রণালয় বলছে, এরইমধ্যে ফরিদপুর থেকে ভাঙ্গা, টেকেরহাট, বরিশাল, পটুয়াখালী ও কুয়াকাটা সড়ক চার লেন করার জন্য প্রায় দুই হাজার কোটি টাকার ভূমি অধিগ্রহণ প্রকল্প পাশ করেছে একনেক।
 
রেলপথ মন্ত্রণালয়ের দেওয়া তথ্য মতে, চূড়ান্ত চুক্তি স্বাক্ষরের অপেক্ষায় ভাঙ্গা-বরিশাল-পায়রা রেললাইন প্রকল্পের কাজ নিয়ে। পদ্মাসেতু হয়ে যশোর পর্যন্ত রেললাইনের কাজ শুরু হয়েছে। চলছে যশোর থেকে খুলনা হয়ে মোংলা পর্যন্ত রেললাইনের কাজ।
 
অন্যদিকে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় এবং বিদ্যুৎ ও জ্বালানিসম্পদ মন্ত্রণালয় বলছে, পায়রায় গড়ে উঠছে দেশের দ্বিতীয় এনার্জি হাব। ২০২১ সালের মধ্যে পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দরের টার্মিনাল অপারেশন চালানোর জন্য উপযুক্ত হবে। রামনাবাদ চ্যানেল ড্রেজিংয়ের জন্য এরইমধ্যে চুক্তি হয়েছে বিশ্বখ্যাত ‘সুয়েজ খাল’ খননকারী বেলজিয়ামের ব্রাসেলসভিত্তিক ‘জান ডি লুল’ কোম্পানির সঙ্গে। ফলে দক্ষিণাঞ্চল হয়ে উঠবে উল্লেখযোগ্য বাণিজ্যিক কেন্দ্র। সারাদেশের সঙ্গে এর সম্পর্ক তৈরি হবে পদ্মাসেতু ও পদ্মাপাড়ের নতুন স্থাপনাকে কেন্দ্র করে। ফলে পদ্মার দক্ষিণ পাড় হয়ে উঠবে ‘কমার্শিয়াল ও বিজনেস হাব’। এর সবচেয়ে বড় কারণ, সড়ক, নৌ, আকাশপথের সঙ্গে সুলভ নেটওয়ার্ক ও হাজার হাজার একর খাস জমির সহজলভ্যতা।
 
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এ বিষয়ে বাংলানিউজকে বলেন, পদ্মার পাড়ে বিদ্যুৎকেন্দ্র, সেনানিবাস, পর্যটন কেন্দ্র, যাদুঘর, আধুনিক শহর, বিজনেস হাব, বিমানবন্দরসহ আধুনিক জীবন যাপনের সকল অনুষঙ্গ যোগ করা হবে। পদ্মাসেতুকে কেন্দ্র করে সড়কের দুই পাশে বিশেষ অর্থনৈতিক জোন ও আবাসিক এলাকা তৈরি হবে। পদ্মার চরকেও দেশের উন্নয়নের আওতায় নিয়ে আসা হচ্ছে।
 
বাংলাদেশ সময়: ০৯৪০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৩, ২০১৯
আরএম/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।