সাগরে মাছ আহরণের পর জেলেরা সেগুলো দুবলার চরে নিয়ে আসে। তখন মাছ বাছাইয়ের সময় অনেক সামুদ্রিক প্রাণী বাদ পড়ে যা শুঁটকি হিসেবে বিক্রি করা যায় না।
তবে সেসব বর্জ্য ফেলে দেয় না জেলেরা। বরং যত্নের সঙ্গে সংরক্ষণ করে তা ফরিয়াদের কাছে বিক্রি করেন। ফরিয়ারা এগুলো নিয়ে রাবিশ ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করেন। রাবিশ ব্যবসায়ীরা তা আবার বিভিন্ন মৎস্য খাবার উৎপাদন কোম্পানির কাছে বিক্রি করে। এ থেকে জেলেদের অতিরিক্ত আয় হয়। বনবিভাগও পায় রাজস্ব।
দুবলার চর ঘুরে দেখা যায়, পুরো চর জুড়ে রয়েছে জেলেদের ছোট ছোট ঘর, মাছ শুকানো মাচা, চাতাল এবং মাছ শুকানোর জন্য মাটিতে নেট বিছানো। সমুদ্র থেকে মাছ আহরণ করে শুঁটকি প্রক্রিয়ার কাজে ব্যস্ত হাজার হাজার জেলে। ব্যবসায়ীরা তাদের পণ্য ক্রয়-বিক্রয়ের জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছেন।
সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের হিসাব মতে, ২০১৫-১৬ অর্থ বছরে দুবলার চরে শুধু ২০ হাজার ৬৩০ মণ বর্জ্য উৎপাদন হয়েছে। যেখান থেকে এক লাখ ৭৯ হাজার ৫০ টাকা রাজস্ব পেয়েছে সরকার। ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে ২২ হাজার ৩১২ মণ বর্জ্যে এক লাখ ৮১ হাজার ৬৮৫ টাকা এবং ১৭-১৮ অর্থ বছরে ২১ হাজার ৭৮০ মণ বর্জ্যে এক লাখ ৭৪ হাজার ২৫৬ টাকা রাজস্ব পেয়েছে সরকার। চলতি মৌসুমের ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত ২ হাজার ৯৩০ মণ বর্জ্যে ২৩ হাজার ৭৭৫ টাকা রাজস্ব আদায় করেছে বন বিভাগ।
এনিয়ে রামপালের আব্দুল গনি শেখ, মিফজুল ইসলাম, মোহাম্মাদ আলী ও মোংলার আক্কাস আলী বাংলানিউজকে বলেন, মাছ চরে নিয়ে এসে প্রথমে শুঁটকির জন্য ভালো মাছ বাছাই করি। বাছাইয়ের সময় কিছু প্রজাতির সামুদ্রিক প্রাণী ফেলে দিতে হয়। যা শুঁটকি হিসেবে বিক্রি করা যায় না। তবে এগুলোকে আমরা না ফেলে মাটিতে নেট বিছিয়ে শুকিয়ে ঘরের মধ্যে স্তুপ করে রাখি। এরপর দুই থেকে তিন মণ হলে তখন সেগুলো রাবিশ ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করি।
বর্জ্য ব্যবসায়ী আনছার ফকির ও মৌলভী হানিফ বাংলানিউজকে বলেন, দুবলার চর থেকে আমরা ১৪ থেকে ১৬শ’ টাকা দামে রাবিশ ক্রয় করি। যখন রাবিশ কম থাকে তখন দাম কমে যায়। মাছ বৃদ্ধি পেলে দাম বৃদ্ধি পায়। এগুলো খুলনার লবন চোরা, বগুড়া, পাথরঘাটাসহ বিভিন্ন অঞ্চলের ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করি।
দুবলা ফিসারম্যান গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক মো. কামাল উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, জেলেরা শুঁটকির জন্য মাছ বাছাই করেন। বাছাইয়ের সময় অব্যবহৃত বর্জ্য জেলেরা সংরক্ষণ করেন। এ বর্জ্য বিক্রি করে জেলেদের অতিরিক্ত আয় হয়।
বাগেরহাট সদর উপজেলার সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা এ এস এম রাসেল বাংলানিউজকে বলেন, শুঁটকির বর্জ্য মৎস্য খাবার তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। এ বর্জ্যে খাবারে প্রোটিনের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়, এরফলে মাছ উৎপাদনও ভাল হয়। দেশে মাছ উৎপাদনে এ বর্জ্যের ভূমিকা রয়েছে।
সুন্দরবন পূর্ব বনবিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. মাহমুদুল হাসান বাংলানিউজকে বলেন, শুঁটকির পাশাপাশি দুবলার চরে প্রতি মৌসুমে ২০ হাজার মণের অধিক বর্জ্য উৎপাদন হয়। এগুলো থেকে জেলেদের অতিরিক্ত আয় হয় এবং বনবিভাগ প্রতি কুইন্টালে ২০ টাকা করে রাজস্ব আদায় করে।
বাংলাদেশ সময়: ০৭৪০ ঘণ্টা, মার্চ ০২, ২০১৯
এনটি