ভুয়া ট্রেড লাইসেন্স ও কর সনদে সদস্য পদ দেওয়ার অভিযোগে এরই মধ্যে স্থগিত করা হয়েছে সিলেট চেম্বার অব কমার্সের নির্বাচন। এদিকে অভিযোগ খতিয়ে দেখতে এক সদস্যের তদন্ত কমিটিও গঠন করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
আগামী ২৭ এপ্রিল নির্বাচনকে সামনে রেখে সংশ্লিষ্ট নির্বাচন কমিশনের বাছাই বাছাইয়ে ভুয়া কর সনদে ৮৮ জনের ভোটার হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। এদের মধ্যে সাতজন আদালতে আপিল করে ছয়জন সদস্যপদ ফিরে পেয়েছেন। সদস্য তালিকা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে খতিয়ে দেখলে ভুয়া ভোটারের সংখ্যা আরও বেরিয়ে আসবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট নির্বাচন কমিশনার অ্যাডভোকেট মোহামম্মদ মনির উদ্দিন।
এদিকে নির্বাচনকে সামনে রেখে সিলেট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের বিগত তিনটি অধিবেশনে (১০, ১১ ও ১২তম সভায়) এক হাজার ৪০৩ জন সদস্য নেওয়া হয়েছে।
সদস্য পদে আবেদনপত্র্রের অনুমোদনসহ বিভিন্ন বিষয়ে শনিবার (২৩ মার্চ) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় ১৩তম সভার আয়োজন করে সিলেট চেম্বার অব কমার্স কর্তৃপক্ষ। ওই সভায় সদস্যদের আবেদনপত্র অনুমোদন করা হবে বলে চেম্বারের একটি সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এর আগে বোর্ড সভাগুলোতে মাত্র ২০ থেকে ২৫ জন করে সদস্য নেওয়া হয় যাচাই বাছাইয়ের করে। একইভাবে অষ্টম সভায় ৫৬ জন এবং নবম সভায় মাত্র ৮৬ জন সদস্যের আবেদন জমা নেওয়া হয়। আর নির্বাচনকে সামনে রেখে সদস্য পদে সহস্রাধিক আবেদনপত্র জমা নেওয়া হয়েছে, যেগুলো অনুমোদনের অপেক্ষায়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যবসায়ী নেতা অভিযোগ করেন, প্রতিবার নির্বাচন ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গেই ভোটার বাড়ানোর প্রক্রিয়া শুরু করেন চেম্বার নেতারা । বিগত নির্বাচন গুলোতে একই রকম হয়েছে বলেও নিশ্চিত করেন ওই ব্যবসায়ী নেতা।
জানা যায়, ২০১৯-২০২১ মেয়াদী কার্য নির্বাহী কমিটি নির্বাচনকে সামনে রেখে দশম সভায় সদস্য করা হয়েছে ২৭৬ জনকে, ১১তম সভায় ৪৭৭ জন এবং ১২তম বোর্ড সভায় ৬৫০ জনের আবেদনপত্র গ্রহণ করা হয়েছে। কিন্তু এসব সদস্যের বিপরীতে কাগজপত্র তেমন যাচাই বাছাই করা হয় নাই। এতে ত্রুটিপূর্ণ কাগজপত্র দিয়েই চেম্বারের সদস্য করা হয়। এ কারণে অনিয়মের অভিযোগ এনে এক ব্যবসায়ী নেতা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ করেছেন। এ অনিয়ম প্রমাণিত হলে ৩১/৭/২০০২ সালের বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনের (এফবিসিসিআই) টিআর রুল অনুযায়ী ছয় বছরের জন্য বরখাস্ত হতে পারে চেম্বারের সদস্য পদ।
এ বিষয়ে সিলেট চেম্বার অব কমার্স ইন্ডাস্ট্রিজের সিনিয়র সহ-সভাপতি মাসুদ আহমদ চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, ভুয়া সার্টিফিকেটে সদস্য হওয়ার বিষয়ে অভিযোগের প্রেক্ষিতে নির্বাচন স্থগিত হয়েছে। যে কারণে নির্বাচন কমিশনের যাচাই বাছাইয়ে ভুয়া সার্টিফিকেট ধরা পড়ে। এক্ষেত্রে এফবিসিসিআই’র আইনানুযায়ী অনুমোদন দেওয়া ব্যক্তির অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। অসুবিধা হলে যিনি কাগজপত্র জাল করেছেন তার হওয়ার কথা।
ভুয়া সনদে ভোটার হওয়ার সত্যতা স্বীকার করে সিলেট চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি খন্দকার শিপার আহমদ বলেন, নির্বাচন পরিচালনা পর্ষদ সদস্যদের ভুয়া সনদ শনাক্ত করেছে। এছাড়া ভোটার বাড়ানোর প্রক্রিয়া প্রতি বছর হয়ে থাকে। এটা ঐতিহ্য। গত ২০ বছর ধরে এমনটি হয়ে আসছে। যদিও আগে মাসে ১৫ থেকে ২০ জন সদস্য হতেন, সেখানে এখন ১০০ থেকে ১৫০ সদস্য হচ্ছে।
তিনি বলেন, সদস্যের আবেদনপত্রে ভুয়া কাগজপত্র যাচাই সম্ভব হয় না। প্রথমে সদস্য দেওয়া হয়। পরে যাচাই বাছাইয়ে কোনো ত্রুটি ধরা পড়লে সদস্যপদ বাতিল করে দেওয়া হয়। সিলেট চেম্বারে বর্তমানে প্রায় চার হাজার ভোটার রয়েছেন।
সিলেট চেম্বার অব কমার্সের আপিল বোর্ডের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট এমাদ উল্লাহ শহীদুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, আপিলে যাদের কাগজপত্র ঠিক পাওয়া গেছে, কেবল তাদের সদস্য হিসেবে অন্তভূক্ত করার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ২১৪৫ ঘণ্টা, মার্চ ২৩, ২০১৯
এনইউ/আরআইএস