ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

এক জমিতে বহু ফসলে দরিদ্রতা দূর

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৩১ ঘণ্টা, এপ্রিল ২, ২০১৯
এক জমিতে বহু ফসলে দরিদ্রতা দূর সুদৃশ্য মিষ্টি লাউ হাতে কৃষক ফয়সল। ছবি : বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন

মৌলভীবাজার: একই জমিতে হরেকরকম সবজি। কচি-কোমল সবুজ সবুজ সবজিতে মুখর চারদিক। রয়েছে দুপুররোদের তীব্রতা। কিন্তু এই তীব্রতার মধ্যেও রোদে ঘুরে ঘুরে নানা রকমের টাটকা সবজি দেখার আগ্রহ কমে যায়নি একটুও।  

শ্রীমঙ্গল উপজেলার নোয়াগাঁও গ্রাম। শহর থেকে দূরত্ব মাত্র পনেরো মিনিটের।

গ্রামের মাটির রাস্তায় অবর্ণনীয় পানি-কাদার দুর্ভোগ পেরিয়ে তবেই পৌঁছানো গেলো কৃষিপণ্যের ভাণ্ডারে। এ কৃষিপণ্যগুলোর উৎপাদনকারীর নাম বকুল মিয়া।  

তবে বকুল মিয়ার এই চমৎকার নানান কৃষিপণ্য উৎপাদনের বাগানটির কথা জানা নেই স্থানীয় উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তাদের। তারপরেও নানাদিক বিবেচনায় এলাকার এই সফল চাষি বকুল মিয়া অনেকেরই অনুকরণীয় হতে পারেন।  

সোমবার (১ এপ্রিল) দুপুরে সরেজমিনে নোয়াগাঁও এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সড়ক থেকে নানান ফসলের বাগানটি বেশ অপূর্ব লাগছে। লতানো সবজিগুলো যে যার মতো করে উপরে উঠে গেছে বাঁশের খুঁটি বেয়ে। জমির মালিকের খোঁজ-খবর করতে গিয়ে জানা গেলো তিনি বাড়িতে নেই। তার পরিবর্তে বাড়ি বের হলে এলেন তার সহযোগী ফয়সল আহমেদ।  

ফয়সল বাংলানিউজকে বলেন, এখানে আমরা নানান জাতের কৃষিপণ্য চাষ করেছি। এর মধ্যে রয়েছে ভেনডি (ঢেঁড়স), মিষ্টি কুমড়া, বরবটি, ডুগি, পানি লাউ, টমেটো, ঝিংগা, বেগুন এবং লাল শাক। তবে বেশি পরিমাণে রয়েছে মিষ্টি কুমড়া, ভেনডি ও বরবটি।  নানান ফসলে সমৃদ্ধ কৃষিবাগান।  ছবি : বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপনতিনি আরো বলেন, মিষ্টি কুমড়া এখন বাজারে বিক্রয় করা হচ্ছে। প্রতিটির পাইকারি মূল্য বিশ থেকে চল্লিশ টাকা। ভেনডি ও বরবটি এখনো পরিপূর্ণ হয়নি; আরো দু’ সপ্তাহ পর বাজারে বিক্রির উপযুক্ত হবে। তখন কেজিপ্রতি দাম পড়বে ত্রিশ থেকে চল্লিশ টাকা।  

বকুল মিয়ার ভাবি রোজিনা বেগম বলেন, গত রাতের (রোববার) বৃষ্টিতে সব ফসলের উপকৃত হলেও বরবটির কিছুটা ক্ষতি হবে।  

এখানে জমির পরিমাণ ৩ কেয়ার (৯০ শতাংশ)। এ পর্যন্ত প্রায় চল্লিশ হাজার টাকা জমিতে খবর হয়েছে। সময়মতো প্রয়োজনীয় বৃষ্টিপাতসহ নানা সুবিধা ঠিক থাকলে সব খরচ বাদ দিয়ে লাভের পরিমাণ দ্বিগুণ হবে বলে জমিতে খরচ প্রসঙ্গে জানান ফয়সল।  

স্থানীয় কৃষি অফিসের নজরদারি আছে কিনা?- এ প্রশ্নের উত্তরে ফয়সল আক্ষেপের সুরে বলেন, আমাদের এখানে স্থানীয় কৃষি অফিসের কোনো কর্মকর্তা একদিনও আসেননি। আমাদের সাহায্য করা তো দূরের কথা!   

তিনি আরো বলেন, আমাদের নোয়াগাঁও এলাকার কৃষিজমির সুবিধার জন্য তৈরি করা সুইসগেট বেশিভাগ সময় বন্ধ করে রাখা হয়; এতে আমরা কৃষিজমিতে প্রয়োজনীয় পানি পাই না। ফসল নষ্ট হয়ে পড়ে। পৌষ থেকে চৈত্রের মাঝামাঝি পর্যন্ত পানি বেশি প্রয়োজন পড়ে। তারপর বৃষ্টি শুরু হয়ে যায়। নানান ফসলে সমৃদ্ধ কৃষিবাগান।  ছবি : বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপনস্থানীয় এলাকার অবৈধ বালু উত্তোলনকারীরা তাদের সুবিধার জন্য সুইসগেটটি বন্ধ করে রাখেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়।

এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নিলুফার ইয়াসমিন মোনালিসা সুইটি বাংলানিউজকে বলেন, আমি তো ওই এলাকায় নিজেই যাই। আমার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা তো ওই এলাকার কৃষকদের কাছে গিয়ে পরামর্শসহ প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করার কথা। যদি তিনি না গিয়ে থাকেন তবে আমি তাকে আগামীকালই পাঠাচ্ছি।  

কৃষকদের সহযোগিতার বিষয়ে কৃষি অফিসের নিলুফার ইয়াসমিন আরো বলেন, কৃষকদের সমস্যা হলে তাদের ডেকে কথা বলবে। তারপর আমাদের বিভিন্ন গ্রুপ আছে। ওই সবগ্রুপ প্রতি সপ্তাহে তিনটা করে মিটিং করবে।

সুইসগেট প্রসঙ্গে এ কৃষি কর্মকর্তা বলেন, আমরা যখন এলাকায় তদন্ত করতে গিয়েছি তখন একজন কৃষকও সুইসগেট প্রসঙ্গে তাদের সমস্যার কথা আমাদের বলেনি। আমরা মাইকিং করিয়ে মিটিং ডেকেছিলাম। তাহলে আমরা কি করবো, বলেন? 

বাংলাদেশ সময়: ০৮৩১ ঘণ্টা, এপ্রিল ০২, ২০১৯ 
বিবিবি/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।