বাজার সূত্রে জানা যায়, দক্ষিণাঞ্চলের সর্ববৃহৎ এ অবতরণ কেন্দ্র থেকে প্রতিদিন শত শত মণ ইলিশ বিকিকিনি হয়। কিন্তু সাগর ও নদীতে ইলিশ শিকারে নিষেধাজ্ঞা থাকায় সেই ইলিশ মোকামে এখন প্রতিদিন মৌসুমী ফল তরমুজ ও বাঙ্গির হাট বসেছে।
সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত হাজার হাজার পিস এসব মৌসুমী ফল বিকিকিনি হচ্ছে মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র থেকে।
মৎস্য আড়তদাররাও কিছুদিনের জন্য ব্যবসার পরিবর্তন ঘটিয়ে অর্থ উপার্জন করছেন। তবে ইলিশ শিকারে নিষেধাজ্ঞা থাকায় বেশ অলস সময় পার করছেন বরিশালের সর্ববৃহৎ ইলিশের মোকাম পোর্ট রোডের বেশিরভাগ শ্রমিক। বাজার ঘুরে দেখা যায়, জাটকা নিধনে নিষেধাজ্ঞার ফলে নগরের পোর্ট রোডে কীর্তনখোলা নদীর তীর ঘেঁষা বেসরকারি মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে মাছ নেই বললেই চলে। সকালে অবতরণ কেন্দ্রের একপাশে স্বল্প পরিমাণে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ উঠছে। বাইরে অবতরণ কেন্দ্রের বাকি জায়গা খালি, নয়তো তরমুজে ঠাসা। কোথাও কোথাও বাঙ্গির দেখা মিলছে।
মৎস্য ব্যবসায়ীরা লোকসানের হাত থেকে বাঁচতে বর্তমান সময়টা তরমুজ সংরক্ষণ করে কিছুটা আয়ের পথ করে নিলেও তাদের দাবি, তরমুজের ফলন ও আবহাওয়ার কারণে এবার আমদানি তেমন একটা ভালো নয়। তাই তরমুজ দিয়ে লাভবান হওয়া নিয়েও রয়েছে শঙ্কা।
শ্রমিক ও ব্যবসায়ীরা জানান, বর্তমানে প্রতিদিন প্রায় ৫০টির মতো ছোট-বড় ট্রলার ও ফিশিং বোটে করে তরমুজ আসে বরিশাল পোর্ট রোডে। যা ভোলা, লালমোহন, চর কলমী, চর বিশ্বাস, চালিতাবুনিয়া, দশমিনা, ঘোষের হাট, বেলুচর, রাঙ্গাবলীসহ দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা থেকে নিয়ে আসা হচ্ছে। এতে মাত্র দুইশ শ্রমিক কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। যেখানে ইলিশের সিজনে এখানে প্রায় তিন থেকে পাঁচ হাজার শ্রমিক কাজ করেন। ফলে বেশিরভাগ শ্রমিকই বর্তমানে কষ্টের মধ্য দিয়ে জীবনযাপন করছেন।
ষাটোর্ধ্ব বয়সের রহমতুল খান নামে পোর্ট রোডের এক শ্রমিক বাংলানিউজকে বলেন, ইলিশের সময়ে প্রচুর টাকা আয় করা গেলেও এখন ঘটছে উল্টো। তরমুজে আড়ত ঠাসা থাকলেও কাজের খোঁজে পোর্ট রোডে এসে বসে থাকতে হয় এখন। যেদিন কাজ পাই সেদিন দুই থেকে তিনশ টাকা ইনকাম করতেই কষ্ট হয়ে যায়। এতে সংসার চালানো তো দূরের কথা, নিজের হাত খরচ চালাতেই হিমশিম খেতে হয়। সরকার জেলেদের অনেক সাহায্য সহযোগিতা করলেও আমাদের দিকে নজর দেয়নি। মনসুর আলী আরেক শ্রমিক বলেন, অনেক শ্রমিক জমানো টাকা ভেঙে খাচ্ছে, নয়তো সুদের টাকায় চলছে। আবার অনেকে গ্রামের বাড়ি, নয়তো ভিন্ন জায়গায় গিয়ে মাটি কাটা থেকে শুরু করে বিভিন্ন কাজ করছেন। তবে বেশিরভাগ শ্রমিক কাজ না পেয়ে অলস সময় পার করছেন।
এদিকে বাচ্চু নামে এক আড়তদার বলেন, ইলিশ নেই তাই আমার আড়তের শ্রমিকরা তরমুজের পেছনে ছুটছেন। এতে লোকসানের মুখ থেকে ফিরতে না পারলেও লোকসান কিছুটা কমিয়ে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে। এছাড়া তরমুজের ফলনও বেশি একটা ভালো নয়।
মাছ ব্যবসায়ী আব্দুল কুদ্দুস বাংলানিউজকে বলেন, জাটকা সংরক্ষণের জন্য নদী ও সাগরে মাছ শিকার বন্ধ ঘোষণা করেছে সরকার। ফলে মার্চ ও এপ্রিল মাসে অভয়াশ্রমে মাছ ধরা নিষিদ্ধের পাশাপাশি জাটকা ইলিশ সংরক্ষণে টানা আট মাসের অভিযান চলছে। তাই বর্তমানে পোর্ট রোডের মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে ইলিশ বিকিকিনি এককথায় বন্ধ থাকবে। বিশেষ করে মার্চ ও এপ্রিল দুই মাস ইলিশ শিকার পুরোপুরি বন্ধ থাকায় আড়তদার, পাইকার এমনকি শ্রমিকদের কষ্টে জীবনযাপন করতে হচ্ছে। এজন্যই বিকল্প ব্যবসা হিসেবে দু’মাস পোর্ট রোডের মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র থাকে মৌসুমী ফলের দখলে।
মাছ ব্যবসায়ী কামাল হোসেন বলেন, শ’ হিসেবে তরমুজ ও বাঙ্গি বিক্রি হয়। আর আকার অনুযায়ী তরমুজের পাইকারি মূল্য সর্বনিম্ন ৫ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ১২ হাজার টাকা পর্যন্ত উঠছে।
এই ব্যবসায়ীর মতে, হঠাৎ বৃষ্টির কারণে উপকূলীয় অঞ্চলের তরমুজ নষ্ট হয়ে গেছে। তাই গতবার থেকে এবছর তরমুজের মূল্য কিছুটা বেশি।
এদিকে দক্ষিণাঞ্চল থেকে আসা এসব তরমুজ সড়ক ও নৌপথে যাচ্ছে ঢাকাসহ উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা-উপজেলায়। বিশেষ করে রাজধানী ঢাকা, নাটোর, সিলেট, বগুড়া ও যশোরে তরমুজ যাচ্ছে বেশি।
পোর্ট রোডের মৎস্য পাইকারি ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. আলী আশরাফ বলেন, আমাদের এখানে ৩শ’র বেশি আড়তদার রয়েছেন। এর বেশিরভাগই ইলিশ না থাকায় এ সময়টায় মৌসুমী ফলের পেছনে বিনিয়োগ করেন। তবে সব সময় যে মৌসুমী ফল তরমুজ বিক্রি করে ভালো থাকছেন তাও নয়। তাই ইলিশের সঙ্গে সম্পৃক্ত জেলেদের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি সরকারের দৃষ্টি দেওয়া উচিত।
বাংলাদেশ সময়: ১২২১ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৪, ২০১৯
এমএস/এএ