ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

চামড়া সংরক্ষণে প্রস্তুত ঢাকা, আশঙ্কা দরপতনের

গৌতম ঘোষ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১৫৮ ঘণ্টা, আগস্ট ১২, ২০১৯
চামড়া সংরক্ষণে প্রস্তুত ঢাকা, আশঙ্কা দরপতনের চামড়া সংরক্ষণ করা হচ্ছে/ফাইল ফটো

ঢাকা: আসন্ন ঈদের কোরবানির পশুর চামড়া সংগ্রহে প্রস্তুত পোস্তা ও আমিনবাজার। তবে চমড়ার দরপতন ও নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে ব্যবসায়ীদের। ট্যানারি মালিকদের কাছ থেকে নির্ধারিত ১০ থেকে ২০ শতাংশ নগদ ও বকেয়া টাকা না পাওয়ায় তারা কম চমড়া কিনতে পারবে। ফলে মৌসুমী ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে চামড়ার দাম কমিয়ে দেবে বলে আশঙ্কা তাদের।

সারা বছরে যত চামড়া আহরিত হয় তার প্রায় অর্ধেক হয় কোরবানির সময়। এই সময়টাতে তাই ব্যবসায়ীদের প্রস্তুতি থাকে অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি।

এবছর গরু, ছাগল ও ভেড়া মিলিয়ে কোরবানিযোগ্য পশু রয়েছে ১ কোটি ১৮ লাখের মতো। এর পুরোটাই প্রায় কোরবানি হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছে মৎস্য ও পশুসম্পদ মন্ত্রণালয়।  

হাজারীবাগে কোনো কাঁচা বা লবণজাত চামড়া সংরক্ষণ এবং প্রক্রিয়াজাত না করায় মাঠপর্যায় থেকে সংগ্রহের পর তা চলে যাবে পোস্তা ও আমিনবাজারে। পড়ে সেখান থেকে যাবে সাভার চামড়াশিল্প নগরীতে।

জানা যায়, ঈদের দিন মাঠপর্যায় থেকে কাঁচা চামড়া কেনার পর তা লবণজাতকরণের জন্য রাজধানীর পোস্তা ও আমিনবাজারের আড়তে যাবে। এছাড়া রাজধানীর বাড্ডার বেরাইদ ও টঙ্গীর চামড়ার আড়তেও সংরক্ষণ করা যাবে। অন্যদিকে ঢাকার বাইরে জেলা শহরসহ প্রত্যন্ত অঞ্চলে যেসব কাঁচা চামড়া পাওয়া যাবে, তা স্থানীয়ভাবে বা জেলার কেন্দ্রীয় গুদামে অথবা আশপাশের মোকামগুলোয় সংরক্ষণ ও বেচাকেনা করা যাবে। এজন্য নগদ টাকার যোগান বাড়ানোর পাশাপাশি পর্যাপ্ত লবণ সংগ্রহ করছে ট্যানারিগুলো।  

এবছর কাঁচা চামড়া থেকে ওয়েট ব্লু ও ফিনিশড চামড়া উৎপাদন করতে সাভার চামড়াশিল্প নগরীর ১৫৫ শিল্পের মধ্যে প্রস্তুত ১২৩টি। চামড়া রপ্তানি করে এবার ৪৫ হাজার কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। চামড়াশিল্পের উন্নয়নে আরও কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

বিএইচএসএমএ সভাপতি দেলোয়ার হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, সব মিলিয়ে এখন চামড়াখাতে ভয়াবহ পরিস্থিতি চলছে। ট্যানারি মালিকরা সাড়ে তিনশ কোটি টাকার বেশি বকেয়া রেখেছেন। অন্য ঈদের সময় ১০ থেকে ২০ শতাংশ নগদ টাকা দিলেও এবার সেখানেও টানাটানি চলছে। ফলে এ খাত দিন দিন নিম্নমুখী হচ্ছে। এরজন্য একটি সুনির্দিষ্ট নীতিমালাসহ ট্যানারি মালিকদের জমি দ্রুত রেজিস্ট্রি করে দিতে হবে। ব্যবসায়ীরা টাকা না পেলে চামড়া কিনবে কীভাবে। ফলে অনেক চামড়া নষ্ট হয়ে যাবে। এ সুযোগে মৌসুমি চমড়ার ব্যবসায়ীরা কম দামে চামড়া কিনে মজুদ করবে।  

এতে চামড়ার দরপতন হবে বলে আশঙ্কা করছেন তিনি।

বিটিএ সভাপতি শাহীন আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে চামড়ার চাহিদা কমার সঙ্গে সঙ্গে এ শিল্পে ধস নেমেছে। আমাদের দেশেও এর প্রভাব পড়েছে। কারণ আমরা দ্রুত কারখানা স্থানান্তর করে এখনও গুছিয়ে উঠতে পারিনি। সাভারে চামড়াশিল্প নগরীতে এখনও বর্জ্য শোধনাগার (সিইটিপি) সম্পন্ন হয়নি। এছাড়া চামড়া সঠিকভাবে সংরক্ষণ না করায় প্রতিবছর ৩০ শতাংশ চামড়া নষ্ট হয়। তবে এবছর আমাদের পর্যাপ্ত লবণ রয়েছে। ফলে চামড়া সংরক্ষণে সমস্যা হবে না।  

বিএফএলএলএফইএর সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ মাহিন বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে চামড়ার অবস্থা খারাপ। চামড়ার দাম কমেনি কিন্তু আমাদের ক্রেতা কমেছে। কারণ আমরা মানসম্মত চামড়া দিতে পারছি না। ফলে প্রতিযোগিতায়ও যেতে পারছি না। এ খাতে যথাযত কমপ্লান্স ও গরমে চামড়া সংরক্ষণ করা যাচ্ছে না।

তিনি বলেন, অস্বাভাবিক গরম পড়ায় ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ চামড়া নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সঠিকভাবে লবণ দিয়ে চামড়া সংরক্ষণ না করলে ভালোমানের ১৫ শতাংশ চামড়াও পাওয়া যাবে না। গতবছরও ২০ থেকে ২৫ শতাংশ চামড়া নষ্ট হয়েছে। তাই এ বিষয়ে জরুরিভিত্তিতে পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।  

সম্প্রতি কোরবানির পশুর চামড়া সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও পরিবহন বিষয়ে চামড়ার ব্যাপারী, আড়তদার ও ট্যানারি মালিকদের সঙ্গে তিন মন্ত্রণালয়ের যৌথ সভা হয়। সভায় ট্যানারি মালিকদের পক্ষ থেকে সলিড বর্জ্য ডাম্পিংয়ের ব্যবস্থাকরণ, ট্যানারি মালিকদের ক্ষতিপূরণের অর্থ পরিশোধ এবং লেদার ওয়ার্কিং গ্রুপের কমপ্লায়েন্স অনুসরণের জন্য প্রশিক্ষণের আয়োজনসহ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

সভা শেষে বাণিজ্যমন্ত্রী জানান, এবছর ঢাকায় প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত গরুর চামড়ার দাম ৪৫ থেকে ৫০ টাকা এবং ঢাকার বাইরে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।  

তিনি বলেন, আমাদের বাজার দিন দিন ছোট হয়ে যাচ্ছে। আন্তর্জাতিক বাজারে চাহিদাও কমে গেছে। কিন্তু চামড়াজাত পণ্যের দাম বেড়েছে। কোরবানির চামড়া বেচার টাকা কেউ পকেটে করে নিয়ে যায় না। এটা মাদ্রাসায় দেওয়া হয়। আমরা চাইছি চামড়ার দাম বাড়ুক।  

ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ থেকে বছরে মোটামুটি ২২ কোটি বর্গফুট চামড়া পাওয়া যায়। এর মধ্যে ৬৪ দশমিক ৮৩ শতাংশ গরুর, ৩১ দশমিক ৮২ শতাংশ ছাগলের, ২ দশমিক ২৫ শতাংশ মহিষের এবং ১ দশমিক ২ শতাংশ ভেড়ার চামড়া। মোট চামড়ার অর্ধেকের বেশি আসে কোরবানির ঈদের সময়।

এদিকে বাংলাদেশের ফিনিশড চামড়ার বড় বাজার ইতালি, জার্মানি, ফ্রান্সসহ ইউরোপের অন্যান্য দেশ। চামড়ার ব্যাগজাতীয় পণ্যের সবচেয়ে বড় বাজার চীন। বেলজিয়াম, হংকং, জার্মানি, যুক্তরাষ্ট্র, সংযুক্ত আরব আমিরাত, স্পেন ও ইতালিসহ বিভিন্ন দেশে বেশ ভালো রপ্তানি হয় ব্যাগজাতীয় পণ্য। আর চামড়ার জুতার সবচেয়ে বড় বাজার জার্মানি। এছাড়া কানাডা, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, ইতালি, নেদারল্যান্ডস, পোল্যান্ড ও যুক্তরাষ্ট্রে বিপুল পরিমাণে রপ্তানি হয় বাংলাদেশের চামড়ার জুতা।  

এমনকি জাপানেও বাংলাদেশি চামড়ার ব্যাগ ও জুতার চাহিদা রয়েছে। বাংলাদেশ থেকে পাকা চামড়া ও জুতার পাশাপাশি এখন ট্রাভেল ব্যাগ, বেল্ট, ওয়ালেট বা মানিব্যাগ বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে। বাংলাদেশে প্রচুর হস্তশিল্প প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যারা এসব পণ্য তৈরি করে বিশ্বের বাজারে পাঠাচ্ছে।

বাংলাদেশ সময়: ২১৫৫ ঘণ্টা, আগস্ট ১০, ২০১৯
জিসিজি/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।