ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

বাণিজ্যমেলার স্থায়ী কেন্দ্র হস্তান্তর চলতি মাসেই

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৪৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৬, ২০১৯
বাণিজ্যমেলার স্থায়ী কেন্দ্র হস্তান্তর চলতি মাসেই

ঢাকা: নানা চড়াই-উতরাইয়ের পর নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের পূর্বাচল উপশহর এলাকায় ২০ একর জমির ওপর ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলার স্থায়ী প্রদর্শনী কেন্দ্রের নির্মাণ কাজ শেষে হয়েছে।

চলতি ডিসেম্বর মাসেই বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টার  নামে স্থায়ী বাণিজ্যমেলা কেন্দ্রটি চীনের নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোকে (ইপিবিকে) বুঝিয়ে দেবে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আগামী ২০২১ সালে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে সেখানে স্থায়ীভাবে ২৬ তম ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা অনুষ্ঠিত হবে।

ইপিবির মহাপরিচালক অভিজিৎ চৌধুরী বাংলানিউজকে জানান, পূর্বাচল উপশহর এলাকায় ২০ একর জমির উপর বাংলাদেশ -চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টার নামে স্থায়ী বাণিজ্যমেলা কেন্দ্রটির নির্মাণ কাজ শেষে হয়েছে।

‘চলতি মাসেই চীনের নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান ইপিবিকে তা বুঝিয়ে দেবে। পূর্বাচলে স্থায়ীভাবে বাণিজ্যমেলা করার জন্য আমরা সরকারের কাছে ৩৮ একর জমি চেয়েছি। এর মধ্যে আমাদের ২৬ একর জমি পেয়েছি। আরো ১২ একর জমি আমরা শিগগির পেয়ে যাবো। ’ 

তিনি বলেন, ২০ জমির উপর এক্সিবিশন সেন্টার নির্মাণ কাজ শেষ। ৬ একর জমিতে এখনও কিছু স্থাপনা নির্মাণ করা হয়নি। তবে হবে। সেগুলো চায়নিজ কোম্পানি করে দেবে না, আমাদেরই করতে হবে। যেমন- ওয়্যার হাউজ, পাওয়ার প্ল্যান্ট, স্থায়ী ফুড সেন্টার ও অংশগ্রহণকারীদের জন্য আবাসিক ব্যবস্থাসহ প্রশাসনিক ভবন নির্মাণ করতে হবে।

‘যা আগামী একবছরের মধ্যে নির্মাণ করা সম্ভব হবে। ফলে আশা করা যাচ্ছে আগামী ২০২১ সালে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে সেখানে স্থায়ীভাবে ২৬ তম ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা অনুষ্ঠিত করতে পারবো। এখনও পূর্বাচলের স্থায়ী জায়গা পুরোপুরি  প্রস্তুত না হওয়ায় ২৫ তম ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা আগারগাঁওয়ে অনুষ্ঠিত হবে। ’

প্রসঙ্গত, প্রতিবছর ইংরেজি বছরের প্রথমদিন শুরু হয় ঢাকা আর্ন্তজাতিক বাণিজ্য মেলা। সে সময় দেশ ও দেশের বাইরে থেকে ক্রেতারা সমবেত হন মাসব্যাপী এই পণ্য মেলায়।

মূলত ব্যবসা-বাণিজ্যকে কেন্দ্র করে এ মেলার আয়োজন করা হলেও সব শ্রেণীর মানুষের সমাগমে এটি পরিণত হয় মিলনমেলায়। বছর ধরে মানুষ এ মেলার অপেক্ষায় থাকে রাজধানীবাসী। এতদিন স্বল্প পরিসরে অস্থায়ীভাবে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে এ মেলার আয়োজন করা হতো।

অপ্রতুল জায়গার কারণে স্থায়ী ভেন্যুর প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার পূর্বাচলে বিশাল পরিসরে কেন্দ্র নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয়। প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে ব্যবসা-বাণিজ্যে টিকে থাকতে হলে ক্রেতার চাহিদা অনুযায়ী নতুন পণ্য উৎপাদন এবং তা যথাযথভাবে প্রদর্শনে এ মেলার প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।

এদিকে আগারগাঁওয়ে এবার ২৫ তম ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আগামী ০১ জানুয়ারি বিকেল ৩টায় রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে মেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হবে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন নবনিযুক্ত বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি।

বাণিজ্যমেলাকে আরও দৃষ্টি নন্দন করতে প্রধান গেটটি বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর ছোঁয়া থাকবে। এবারের বাণিজ্য মেলায় প্যাভিলিয়ন, মিনি-প্যাভিলিয়ন, রেস্তোরাঁ ও স্টলের মোট সংখ্যা ৪৪১ টি। গতবছর স্টল সংখ্যা ছিল ৫৫০ টি। সে হিসেবে এবছর শতাধিক স্টল কমেছে।

গতবছর আমাদের ২৫০ টি সাধারণ স্টল থাকলেও এবার সেখানে ৫০ টি স্টল করা হয়েছে। এ পর্যন্ত ২৩৩ টি স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। তবে বিদেশি ২৬ টি প্যাভিলিয়নের বিপরীতে আবেদন পড়েছে ৫৫ টি। এখনও যাচাই-বাছাই চলছে। এপর্যন্ত চারটি ব্যাংক মেলাতে বুথ ও ব্যাংকিং কার্যক্রম চালুর আগ্রহ প্রকাশ করেছে।

জানা যায়, পূর্বাচলে প্রায় ৭৯৬ কোটি টাকা ব্যয়ে এ কেন্দ্র নির্মাণের কাজ হাতে নেওয়া হয়। কিন্তু প্রকল্পের জন্য নির্ধারিত ৩ বছর মেয়াদ পার হয়ে যায়, অর্ধেক কাজও শেষ হয়নি। নতুন করে প্রকল্পের মেয়াদ ও ব্যয় বাড়ানো হয়। ব্যয় বাড়ানো হয় ১৭০ কোটি টাকা। ২০০৯ সালে নেওয়া এ উদ্যোগটি বাস্তবায়নে সময় গিয়ে দাঁড়ায় ১১ বছরে।

সূত্র জানায়, চীনের অনুদান ৬২৫ কোটি ৭০ লাখ এবং সরকারি তহবিলের ১৭০ কোটি ৩১ লাখ টাকা নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়। পরে বাস্তবতার নীরিখে অতিরিক্ত ১৫ একর ভূমি অধিগ্রহণ, নতুন স্থাপনা নির্মাণ, সেন্টারের পরিসর বৃদ্ধি, রক্ষণাবেক্ষণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাসহ বিভিন্ন কারণে ১৭০ কোটি ৬৭ লাখ টাকা বাড়িয়ে মোট ব্যয় ধরা হচ্ছে ১ হাজার ৩০৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা। সেই সঙ্গে মেয়াদ ২০২০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে দেশে বিশেষায়িত বাণিজ্যমেলা আয়োজন করার জন্য একটি স্থায়ী কেন্দ্র হবে। একই সঙ্গে বিদেশে দেশের ভাবমূর্তিও উজ্জ্বল হবে।

এই সেন্টার নির্মাণের  মাধ্যমে স্থানীয় পণ্যের ‘ইন্ডাস্ট্রিয়াল কোম্পটিটিভনেস’ বৃদ্ধি পাবে। উন্নত হবে বাণিজ্যিক ও প্রাতিষ্ঠিনিক পরিবেশের। এতে দেশের বিনিয়োগ বাড়বে। পাশাপাশি জোরদার হবে অর্থনৈতিক উন্নয়ন।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৫ ঘন্টা, ডিসেম্বর ০৬, ২০১৯
জিসিজি/এমএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।