ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

মাতারবাড়ী বন্দর উন্নয়ন প্রকল্পে ২ পরামর্শক নিয়োগ

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৫৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৩, ২০২০
মাতারবাড়ী বন্দর উন্নয়ন প্রকল্পে ২ পরামর্শক নিয়োগ মাতারবাড়ী বন্দর উন্নয়ন প্রকল্প

ঢাকা: কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার মাতারবাড়ীতে ১৮ দশমিক ৫ মিটার গভীরতার বন্দর নির্মাণে জাপানের নিপ্পন কোয়ে কোম্পানি এবং ওরিয়েন্টাল কনসালটেন্ট গ্লোবাল কোম্পানি লিমিটেডকে যৌথভাবে প্রকল্পের পরামর্শক হিসেবে চূড়ান্ত নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

বুধবার (২৩ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে এ সংক্রান্ত দুটি চুক্তিপত্র স্বাক্ষরিত হয়েছে বলে নৌ মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।

মাতারবাড়ী বন্দর উন্নয়ন প্রকল্প ও চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের (চবক) কার্যক্রম সংক্রান্ত প্রকল্প পরিচালক জাফর আলম এবং জাপানের নিপ্পন কোয়ের প্রতিনিধি নাওকি কুডো প্রকৌশলগত বিষয়ের চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করেছেন।

মাতারবাড়ী বন্দর উন্নয়ন প্রকল্পের (বন্দর সংযোগ সড়ক অংশ) সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগের (আরএইচডি) কার্যক্রম সংক্রান্ত প্রকল্প পরিচালক মো. সাদেকুল ইসলাম এবং জাপানের ওরিয়েন্টাল কনসালটেন্ট গ্লোবাল কোম্পানি লিমিটেডের প্রতিনিধি শুনজি ইউশিহারা সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগ সংক্রান্ত চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করেছেন।

অনুষ্ঠানে পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান এবং নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী ভার্চ্যুয়ালি সংযুক্ত ছিলেন। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল এসএম আবুল কালাম আজাদ, সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী কাজী শাহরিয়ার হোসেন, জাইকার চিফ রিপ্রেজেন্টেটিভ ইউহো হায়াকাওয়া ও বাংলাদেশের জাপানের রাষ্ট্রদূত হিরোইকি ইয়ামায়া উপস্থিত ছিলেন।

নৌ মন্ত্রণালয় জানায়, নিপ্পন কোয়ে পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে প্রকল্পের যাবতীয় ডিজাইন ব্যয় নির্ধারণ, টেন্ডার ডকুমেন্টস তৈরি এবং অবকাঠামোগত নির্মাণের বিষয়গুলো মনিটরিং এবং তদারকি করা হবে। পরবর্তীকালে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ইক্যুইপমেন্ট সংগ্রহ থেকে শুরু করে বন্দর চালু করে দেওয়ার বিষয়টি সমন্বয় করবে। বন্দর চালু হওয়ার এক বছর পর্যন্ত পরামর্শক প্রতিষ্ঠান প্রয়োজনীয় সব ধরনের সাপোর্ট দেবে। এজন্য পরামর্শক প্রতিষ্ঠানটিকে ২৩৪ কোটি টাকা দেওয়া হবে। ওরিয়েন্টাল কনসালটেন্ট গ্লোবাল কোম্পানি প্রকল্পের (বন্দর সংযোগ সড়ক অংশ) সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগের কার্যক্রম সংক্রান্ত পরামর্শ দেবে। এজন্য পরামর্শক প্রতিষ্ঠানটিকে ৪৬৬ কোটি টাকা দেওয়া হবে।

পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, মাতারবাড়ী বন্দর নির্মাণের মাধ্যমে বঙ্গোপসাগরে আমাদের অধিকার আরও বেশি শক্তিশালি হবে। সুনীল অর্থনীতির ধারাকে অব্যাহত রাখতে মাতারবাড়ী বন্দর নতুন উচ্চমাত্রায় নিয়ে যাবে।

নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী বলেন, সমুদ্র সম্পদ ও বঙ্গোপসাগরের বিশাল সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে মাতারবাড়ী বন্দর সহায়ক হিসেবে কাজ করবে। মাতারবাড়ী বন্দরের বাস্তবায়ন একটি মাইলফলক হয়ে থাকবে। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা নির্মাণে প্রকল্পের কাজ যথাসময়ে সম্পন্ন করতে হবে।

নৌ মন্ত্রণালয় আরও জানায়, মাতারবাড়ী বন্দরের প্রথম পর্যায়ের কার্যক্রম ২০২৬ সালে সম্পন্ন হবে। নির্মাণ সম্পন্ন হলে মাতারবাড়ী বন্দরে ১৮.৫ মিটার গভীরতার জাহাজ ভিড়তে পারবে এবং প্রায় আট হাজার টিইইউ’স কন্টেইনার (বিশ ফুট দৈর্ঘের কন্টেইনার) নিয়ে জাহাজ ভিড়তে পারবে। ফলে সামগ্রিক পরিবহন ব্যয় হ্রাস পাবে আনুমানিক ১৫ শতাংশ। মাতারবাড়ী বন্দর সড়ক, রেল ও নদীপথ দিয়ে সংযুক্ত থাকবে। বন্দরকে কেন্দ্র করে একটি সুপরিকল্পিত কানেক্টিভিটি গড়ে ওঠবে। ফলে যেকোনো পণ্য সহজে এবং কম খরচেই পৌঁছে যাবে আমদানি-রপ্তানিকারকদের দোরগোড়ায়। এ বন্দর দিয়ে কয়লা, লিকুইড ন্যাচারাল গ্যাস (এলএনজি), অপরিশোধিত তেল ও তেল পণ্য, সিমেন্ট, ক্লিঙ্কার, সার, খাদ্যশস্য, স্টিলপণ্য এবং স্ক্র্যাপ লোহা আমদানি সহজতর হবে।

জাইকা অর্থায়নে কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলায় মাতারবাড়ী ও ধলঘাট এলাকায় বন্দরটি নির্মিত হবে। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের আওতায় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ ‘মাতারবাড়ী বন্দর উন্নয়ন প্রকল্প’ বাস্তবায়ন করবে। মাতারবাড়ী বন্দর উন্নয়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৭ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকা। এরমধ্যে জাইকার ঋণ ১২ হাজার ৮৯২ কোটি, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের (নিজস্ব তহবিল) দুই হাজার ২১৩ কোটি এবং বাংলাদেশ সরকারের দুই হাজার ৬৭১ কোটি টাকা।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ মাতারবাড়ী বন্দরের অংশ এবং সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগ মাতারবাড়ী বন্দর উন্নয়ন প্রকল্পের সড়ক অংশ বাস্তবায়ন করবে।

জাইকার অর্থায়নে মাতারবাড়ী বিদ্যুৎ বিভাগের একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গিয়ে গভীর সমুদ্রবন্দরের সুযোগ তৈরি হয়। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে মাতারবাড়ী বন্দর দেশের গভীর সমুদ্র বন্দরের অভাব ঘুচিয়ে দিতে যাচ্ছে। বিষয়টির গুরুত্ব বিবেচনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এটিকে ফাস্ট ট্র্যাক প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত করেন। প্রকল্পটি ২০২০ সালের ১০ মার্চ একনেক সভায় অনুমোদিত হয়।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৫৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৩, ২০২০
এমআইএইচ/টিএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।