ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

করোনায় নাটোরে বেড়েছে বাতাবি লেবুর চাহিদা

মো. মামুনুর রশীদ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৪৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৪, ২০২০
করোনায় নাটোরে বেড়েছে বাতাবি লেবুর চাহিদা

নাটোর: করোনাকালীন সময়ে নাটোরে বেড়েছে বাতাবি লেবুর চাহিদা। সুযোগ পেলেই দেশীয় অন্যান্য ফলের সঙ্গে পুষ্টি ও ভিটামিন ‌‘সি’ সমৃদ্ধ এ ফল কিনছেন ক্রেতাসাধারণ।

জ্বর-সর্দিসহ বিভিন্ন রোগ বালাই থেকে নিজেকে সুরক্ষায় মানুষেরা ব্যাপকভাবে বাতাবি লেবু খাচ্ছেন। হাট-বাজারসহ সর্বত্রই বাতাবি লেবুর ব্যাপক উপস্থিতি জানান দিচ্ছে। এছাড়া উৎপাদন ও ব্যবহারের নিরিখে জেলায় জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে দেশীয় সহজলভ্য, নিরাপদ ও উপকারী এ ফলটি।

নাটোর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার জেলায় বাতাবি লেবুর চাষাবাদ অনেকাংশে  বেড়েছে। চলতি মৌসুমে জেলায় মোট ১৮৬ হেক্টর জমিতে বাতাবি লেবু চাষ হয়েছে। এরমধ্যে নাটোর সদর উপজেলায় সর্বাধিক ৬০ হেক্টর, সিংড়া উপজেলায় ৩৬ হেক্টর, বাগাতিপাড়ায় ৩০ হেক্টর, গুরুদাসপুরে ২৫ হেক্টর, লালপুরে ২০ হেক্টর, নলডাঙ্গায় ১০ হেক্টর এবং বড়াইগ্রাম উপজেলায় ৫ হেক্টরে বাতাবি লেবুর চাষ হয়েছে।

গত বছরে জেলায় আবাদ করা জমির পরিমাণ ছিল ১৩১ হেক্টর এবং এর আগের বছরে ছিল ১০০ হেক্টর। চাহিদা মাফিক বাতাবি লেবুর উৎপাদন দিনদিন বাড়ছে। বিশেষ করে এ বছর করোনার কারণে ভিটামিন ‌‘সি’ সমৃদ্ধ এ ফলটির চাহিদা অনেকাংশে বেড়ে গেছে। পাশাপাশি  দামও বেড়ে গেছে। এক একটি ফল ৭০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে হাটে বাজারে। তবে স্থানভেদে কিছু কিছু এলাকায় এ ফলটির দাম কিছুটা কম-বেশি রয়েছে।

জেলার পথে, ঘাটে, মাঠে, বিভিন্ন হাট-বাজারে এখন বাতাবি লেবুর বিপণন হতে দেখা যাচ্ছে। তবে নাটোর সদর, সিংড়া এবং বাগাতিপাড়া উপজেলায় আধিক্য একটু বেশি। জেলার প্রধানতম বাজার-নাটোর শহরের নীচাবাজার এলাকায় বিগত প্রায় এক মাস যাবৎ বাতাবি লেবু বিপণন হচ্ছে। অন্যান্য বছরের চেয়ে এবার এ বিপণনের পরিধি ব্যাপক বলে মনে হচ্ছে। প্রতিদিন অন্তত বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা শতাধিক ব্যবসায়ী বাতাবি লেবু বিক্রি করছেন।

নিয়মিত বিক্রেতা শরৎ কুমার জানান, নিজের গাছের ছাড়াও হাট থেকে কিনে এনে প্রতিদিন বাতাবি লেবু বিক্রি করেন। এবছর ফলন ভালো হওয়ায় সরবরাহও অনেক বেশি। একই কথা জানান সিংড়া উপজেলার হাতিয়ানদহ হাটের ফল ব্যবসায়ী ফজের আলী। তিনি  বলেন, শুধু খুচরা ক্রেতাই নয়, শহরের ফল বিক্রেতারা একসঙ্গে অনেক লেবু পাইকারি কিনে নিয়ে যান। দাম দেন প্রতি পিস লেবু ৩০ টাকা থেকে ৪০ টাকা।

নলডাঙ্গা বাজারের বাতাবি লেবু বিক্রেতা প্রতিবন্ধী আনোয়ার হোসেন জানান, তিনি গড়ে প্রতিদিন ১০০ থেকে ১৫০ পিস পর্যন্ত বাতাবি লেবু বিক্রি করে থাকেন। লাভও ভালো হয়। বিগত বছরগুলোতে এমনভাবে কখনও বাতাবি লেবু বিক্রি করতে দেখা যায়নি। কিন্তু এবার তার ব্যতিক্রম ঘটনা ঘটেছে। ক্রেতারা দোকানে এসেই বাতাবি লেবু সন্ধান করে। দাম একটু বেশি হলেও ক্রেতারা কিনতে দ্বিধাবোধ করছেন না।

নাটোর শহরের অভিজাত ফলের দোকানেও বাতাবি লেবু শোভা পাচ্ছে। কেন্দ্রীয় মসজিদের সামনে ঝিলিক ফল ভান্ডারের পরিচালক সোহানুর রহমান জানান, বাতাবি লেবুর সাইদা যেমন বেশি, আমদানিও অনেক বেশি। উৎপাদকরা বাতাবি লেবু নিয়মিতভাবে তাদের কাছে সরবরাহ করছেন। বিক্রিও ভালো হচ্ছে। সচেতন মানুষের ঝোঁক এখন সম্পূর্ণ অর্গানিক এ ফলের প্রতি।

বাতাবি লেবু সম্পর্কে লিমন হোসেন, সোহেল রানা, বিতু ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, বাতাবি লেবু সম্পূর্ণ অর্গানিক। তাই এ মৌসুমে বাড়িতে প্রতিদিন রীতিমত নিয়ম করে নিরাপদ ও সুস্বাদু এ দেশীয় ফল খাওয়া হচ্ছে। বাড়ির সব সদস্যই বাতাবি লেবু পছন্দ করে।

স্থানীয় স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. মো. মাহবুবুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, বাতাবি লেবু শরীরের রক্ত পরিশোধন করে, ত্বক, খুশকি, এসিডিটি এবং কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা খুবই দূর করে। বাতাবি লেবুতে ভিটামিন এ, সি, পাইরিডক্সিন, ফলিক এসিড, থায়ামিন, ফসফরাস, আয়রন ক্যালসিয়াম, কপার, বিভিন্ন ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট, লিমোনয়েডের উৎস রয়েছে।  

ফলে মানুষের হাড় মজবুত করে, বুড়িয়ে যাওয়া রোধ করে, রক্ত পরিষ্কার করে, অম্লরোধ করে, কিডনির পাথর হওয়া রোধ করে, মাড়ির রোগে উপকার করে, দৃষ্টিশক্তি বাড়ায়, ক্যান্সার জীবাণু ধ্বংস করে, কোলেস্টেরল হ্রাস করে, ডায়াবেটিস ও হৃদরোগের ঝুঁকি কমায় এবং ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করে বলে জানিয়েছেন অন্যান্য পুষ্টি অভিজ্ঞ ব্যক্তিরা।  

নাটোরের বিশিষ্ট ফল উৎপাদক মো. আতিকুর রহমান আতিক ও সেলিম রেজা বাংলানিউজকে জানান, সাধারণত বসতবাড়ি কেন্দ্রীক বাতাবি লেবুর চাষ হয়ে আসছে। থাইল্যান্ডের উন্নতজাত আমদানি করতে পারলে বাণিজ্যিকভাবে বাতাবি লেবু উৎপাদন করে সফল হওয়া সম্ভব।

পুষ্টি উন্নয়ন প্রকল্পের জাতীয় পরামর্শক দেশের খ্যাতনামা ফল বিজ্ঞানী এস এম কামরুজ্জামান বলেন, আগে একসময় দেশে বর্ষা উত্তর বিভিন্ন অসুখের নিরাময়ে বাতাবি লেবুর অনন্য ভূমিকা ছিল। নিরাপদ এ ফলটি ওষুধি গুনে ভরপুর। তাই বছরব্যাপী তিনি এ ফল চাষ করেন। এতে আয়ও হয় পুষ্টির চাহিদাও মিটে।

নাটোর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সুব্রত কুমার সরকার জানান, বাতাবি লেবু মৌসুমি ফল হলেও এখন সারা বছরই পাওয়া যায়। চেষ্টা করলে বাণিজ্যিকভাবে এ বাতাবি লেবু চাষ করা সম্ভব। এতে মানুষ লাভবান হবেন। এ ফলটি মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেকটা বাড়ায়। করোনাকালীন সময় নাটোরে বাতাবি লেবুর চাহিদা বেড়েছে।

তিনি বলেন, কৃষি বিভাগের উদ্যোগে জনসাধারণকে উদ্বুদ্ধকরণের মাধ্যমে বাতাবি লেবু চাষে আগ্রহ বাড়াতে সবরকম সহায়তা দেওয়া হবে।  

বাংলাদেশ সময়: ১১৪৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৪, ২০২০
ওএইচ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।