ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

মজুরি বেশি বাড়লে কিছু চা-বাগান বন্ধ হয়ে যাবে

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৫৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৬, ২০২০
মজুরি বেশি বাড়লে কিছু চা-বাগান বন্ধ হয়ে যাবে চা-পাতা চয়ন করছেন শ্রমিকরা। ছবি: বাংলানিউজ

মৌলভীবাজার: অস্থিতিশীল হয়ে পড়েছে চা-শিল্প। শ্রমিকেরা নিজেদের মজুরি, উৎসব বোনাস প্রভৃতির দাবিতে আন্দোলনে নেমেছেন।

কর্মদিবস শুরু হওয়ার আগে নিজ নিজ বাগানের দুই থেকে তিন ঘণ্টার করে অবস্থান ধর্মঘট করছেন।

চা-বাগান মালিকপক্ষের সংগঠন বাংলাদেশ টি অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএ) এবং শ্রমিকপক্ষের সংগঠন বাংলাদেশ চা-শ্রমিক ইউনিয়ন (বাচাশ্রই) এর মধ্যে মজুরি বাড়ানোসহ নানা বিষয়ের দ্বিপাক্ষিক আলোচনা অব্যাহত রয়েছে।

বিটিএ সূত্র জানায়, চা-শ্রমিকদের এ আন্দোলন নিয়মবর্হিভুত। এর সূচনা হয়েছিল চলতি মাসে ৬ অক্টোবর। পর্যায়ক্রমে সারাদেশের ৭টি ভ্যালির প্রায় সব বাগানেই আন্দোলনের অংশ হিসেবে কর্মবিরতি পালিত হচ্ছে। অবিলম্বে চুক্তি সম্পাদন এবং দুর্গাপূজার আগে নতুন মজুরি ও বোনাস পরিশোধের দাবিতে বাগানে বাগানে অন্যায়ভাবে স্লোগানমুখর তারা।

তবে চা-বাগান কর্তৃপক্ষের দাবি চা-বাগানের শ্রমিকরা দেশের অন্যান্য শ্রমিকদের চেয়ে অপেক্ষাকৃত ভালো অবস্থানেই আছেন। সবদিক বিবেচনায় তাদের মজুরি বাড়ার দাবি অনেকটাই অযৌক্তিক।  বিশেষজ্ঞের অভিমত, মজুরি বেশি বাড়লে কিছু চা-বাগান বন্ধ হয়ে যাবে।

ফুলতলা চা-বাগানের উপ-ব্যবস্থাপক তৌহিদুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, ‘চা শ্রমিকদের বেতন ১০/ব২০ টাকা বাড়লে অনেক চা-বাগানই বন্ধ হয়ে যাবে, অথবা হাত বদল হবে। গ্রুপ বা কোম্পানির বাগানগুলো হয়তো টিকে যেতে পারবে। কিন্তু সি ক্যাটাগরি বেসরকারি চা-বাগানগুলো পড়বে মারাত্মক ঝুঁকির মুখে। করোনা সংক্রমণের কারণে চা-বিপণনে দেখা দিয়েছে মন্দাভাব। আমরা খুব খারাপ অবস্থার মধ্যে আছি। ’

চা-শ্রমিকদের অন্যান্য সুবিধার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের চা শ্রমিকদের মাত্র ২ টাকা করে চাউল / রেশন (সাবসিডি) দিচ্ছি। আপনি কোথায় পাবেন দুই টাকার চাল বা আটা? আমরা এগুলো লসে দিচ্ছি। তারপর রয়েছে তাদের হাউজিং সুবিধা। তারা ফ্রিতে বাগানের বসতভিটায় বছরের পর বছর ধরে বাস করছে। তারপর রয়েছে চা-বাগানের অনাবাদি জমিগুলোতে সম্পূর্ণ ফ্রিতে কৃষিজাত পণ্য চাষাবাদের সুযোগ। সেখানে তারা হাঁস-মুরগি, গরু-ছাগল-ভেড়া প্রভৃতি পালন করার ফ্রি সুবিধা ভোগ করছে। শুধু তা-ই নয়, প্রতি বছর কোরবানিতে একাধিক গবাদি পশু বিক্রি করে প্রচুর লাভবান হচ্ছে কোনো কোনো চা শ্রমিকপরিবার।  

এই চা-বাগান কর্মকর্তা আরো বলেন, ‘চা-বাগানের নিবন্ধিত চা-শ্রমিকসহ তাদের পুরো পরিবারের সদস্যদের চিকিৎসা-ওষুধ পুরোপুরি ফ্রি। এছাড়াও সবচেয়ে বড় যে ব্যাপারটা সেটা হলো প্রাথমিক শিক্ষা। এটাও সরকারের সঙ্গে যৌথভাবে আমরা পরিচালনা করছি। অর্থাৎ ৫টি মৌলিক অধিকারের বস্ত্র ছাড়া ৪টি-ই আমরা পূরণ করছি। ’ মাথিউরা চা-বাগানের সিনিয়র টি-প্লান্টার ইবাদুল হক বাংলানিউজকে বলেন, ‘সরকারের প্রতিনিধির উপস্থিতিতে মালিকপক্ষের সংগঠন বিটিএ প্রতিনিধি এবং প্রতিনিধিদের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক চুক্তির ভিত্তিতে চা-শ্রমিকদের মুজুরি নির্ধারিত হয়ে থাকে। এখানে আলোচনা বার বার হবে এবং অনেক যুক্তিতর্ক শেষে একটি সিদ্ধান্তে দুই পক্ষ একত্রিত হবেন এটাই নিয়ম। কিন্তু উল্টো নীতিমালা ভঙ্গ করে বাংলাদেশ চা-শ্রমিক ইউনিয়ন সারাদেশের চা-শ্রমিকদের দিয়ে ২ ঘণ্টা কিংবা কোনো কোনো চা-বাগানে ৩ ঘণ্টা করে কর্মবিরতি করাচ্ছে। ’ 

তিনি আরো বলেন, ‘আমি একজন চা-বাগানের ম্যানেজার হিসেবে শ্রমিকনেতাদের বলবো, এটা অসম শ্রমআচরণ এবং নিয়মের পরিপন্থি। বিটিএ এর সচিব ড. কাজী মোজারফ আহাম্মদ বাংলাদেশ চা-শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদককে চিঠি দিয়েছেন। এখানে তিনি উল্লেখ করেন- আলোচনা চলমান থাকা অবস্থায় চা-শ্রমিকদের কর্মবিরতিতে আশ্রয় নেওয়া অযৌক্তিক, শ্রম আইনের পরিপন্থি এবং বেআইনি বলে বাংলাদেশীয় চা সংসদ মনে করে। এহেন বিনা নোটিশে কর্মবিরতি পালনের ফলে দেশের চা-উৎপাদন বিঘ্নিত হয়, ফলে বাগান কোম্পানি আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ’ 

দেশের ১৬৭টি চা-বাগানের পঞ্চায়েত কমিটির সরাসরি ভোটে নির্বাচিত বাংলাদেশ চা -শ্রমিক ইউনিয়নের নেতারা। এখানে প্রতিটি চা-বাগানের একেক দিন একেকটি বাগানে পৃথক পৃথক আন্দোলন করার কোনো মানে হয় না। এটি চা-শিল্পের জন্য অশনি সংকেত বলেও জানান এই জ্যেষ্ঠ টি-প্লান্টার।  

 বাংলাদেশ সময়: ০৭৫০ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৬, ২০২০
বিবিবি/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।