ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

আর্থিক প্রতিষ্ঠানে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ২৬.৫১ শতাংশ

শাহেদ ইরশাদ, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮১৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৯, ২০২০
আর্থিক প্রতিষ্ঠানে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ২৬.৫১ শতাংশ

ঢাকা: চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে নন ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের খেলাপি ঋণ বেড়েছে ২৬ দশমিক ৫১ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের যথাযথ পর্যবেক্ষণের অভাবে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে কর্পোরেট সুশাসন না থাকায় ক্রমাগত খেলাপি ঋণ বেড়েছে।

চলতি বছরের জুন শেষে দেশের ৩৩টি নন ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের খেলাপি ঋণের পরিমান দাঁড়িয়েছে ৮ হাজার ৯০৫ কোটি ৬২ লাখ টাকা, যা মোট বিতরণকৃত ঋণের ১৩ দশমিক ২৯ শতাংশ।

২০১৯ সালের ডিসেম্বর শেষে খেলাপি ঋণের পরিমান ছিল ৬ হাজার ৩৯৯ কোটি বা ৯ দশমিক ৫৩ শতাংশ।  

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জালিয়াত চক্র জাল নথি ব্যবহার করে বিপুল পরিমান ঋণ নেওয়ার কারণে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের খেলাপি ঋণ বেড়েছে।  

যদিও বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, ডিসেম্বর পর্যন্ত কিস্তি না দিলেও কোনো ঋণ খেলাপি হবে না। তবে খেলাপি ঋণের শ্রেণিকরণ অপরিবর্তিত রয়েছে। অনেক প্রতিষ্ঠান তথ্য গোপন করায় খেলাপি ঋণ অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে।  

কোম্পানির আর্থিক ব্যবস্থাপকরা তথ্য গোপন করার কৌশল অবলম্বন করে নিজেদের পছন্দমত আর্থিক প্রতিবেদন তৈরি করে।  

তথ্য গোপন অবৈধ বা প্রতারণামূলক হলেও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ভিভ্রান্ত করার জন্য এটি করা হয়।  

জুন শেষে ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসের খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৩৫৬ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। ছয় মাস আগের তুলনায় খেলাপি ঋণ বেড়েছে ২৫৬ দশমিক ৪৭ শতাংশ।

এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক ও রিলায়েন্স ফাইন্যান্সের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রশন্ত কুমার হালদার চারটি নন ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রায় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা আত্মসাত করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। যে কারণে পুরো নন ব্যাংক আর্থিক খাতের অব্যবস্থাপনা তৈরি হয়েছে।

যে চারটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে প্রশান্ত কুমার হালদার টাকা নিয়েছেন। সেগুলো হলো, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস, পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস, ফাস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্ট এবং বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানি।  

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিদর্শনে উঠে এসেছে, পরিচালক ও শেয়ারহোল্ডাররা নিয়মনীতি ভঙ্গ করে ৪৮টি প্রতিষ্ঠানের হিসাবে ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস থেকে ১ হাজার ৫৯৬ কোটি টাকা নিয়েছে।  

আমানতকারীদের টাকা ফেরত দিতে ব্যর্থ পিপলস লিজিংয়ের অর্থ নগদায়ন করার প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশ ব্যাংক।  

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পিপলস লিজিংয়ের খেলাপি ঋণের পরিমান ৬ থেকে ৭শ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানির খেলাপি ঋণ ৭৮৩ কোটি ৯৭ লাখ টাকা, যা প্রতিষ্ঠানটির বিতরণকৃত ঋণের ৯৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গর্ভনর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বলেন, ৫-৭টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানে বড় ধরনের দুর্নীতির কারণে ভাবমূর্তি সংকটে পড়েছে দেশের আর্থিক প্রতিষ্ঠানখাত।

তিনি আরও বলেন, এই সংকটের জন্য প্রশান্ত কুমার হালদার সবচেয়ে বেশি দায়ী এবং অর্থ লুটের এই বিষয়ে চুপ থেকে দায় এড়াতে পারে না বাংলাদেশ ব্যাংক।  

এসব অর্থ উদ্ধারে প্রশান্ত কুমার হালদারকে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করা উচিত বলে মনে করেন তিনি। প্রশান্ত এখন কানাডায় অবস্থান করছেন।

ইব্রাহিম খালেদ বলেন, জালিয়াত চক্রের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ব্যাংক এবং সরকারের কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার উদ্যোগ প্রয়োজন।

বাংলাদেশ সময়: ০৮১০ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৯, ২০২০
এসই/এজে
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।