ঢাকা, সোমবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

কলমানি রেট দুই বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন

শাহেদ ইরশাদ, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৫৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২২, ২০২০
কলমানি রেট দুই বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন ফাইল ফটো

ঢাকা: গত একমাস ধরে দেশের ব্যাংকিং খাতে আন্তঃব্যাংক লেনদেন সুদের হার (কলমানি রেট) ২ শতাংশের নিচে রয়েছে। মহামারি করোনা ভাইরাস থেকে অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে কেন্দ্রীয় ব্যাংক অতিরিক্ত তারল্য সরবরাহ করায় এবং ব্যাংকগুলোর ঋণ প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়ায় এই অবস্থার তৈরি হয়েছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, অতিরিক্ত তারল্য সরবরাহের কারণে ব্যাংকগুলো মুনাফা ধরে রাখতে আমানতের সুদহার কমিয়ে এনেছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যমতে ২০১৮ সালের ৯ আগস্টের পরে চলতি বছরের ৫ নভেম্বর গড় কলমানি রেট ১ দশমিক ৯২ শতাংশের নিচে নেমে এসেছিল।

পরবর্তীতে কলমানি রেট ১৪ নভেম্বর পর্যন্ত আবার ২শতাংশে ফিরে গেলেও ১৫নভেম্বর আবার ১ দশমিক ৮৪শতাংশে নেমে আসে এবং এখন পর্যন্ত ২ শতাংশের নিচেই রয়েছে। এ সময়ের মধ্যে সুদহার সর্বোচ্চ ৫ দশমিক ২৫শতাংশ এবং সর্বনিম্ন ১শতাংশের মধ্যে দাঁড়িয়েছে।

চলতি বছরের ১৫ নভেম্বর হতে ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকগুলো দৈনিক কলমানি মার্কেট থেকে ৩হাজার ৬শ কোটি থেকে ৫হাজার ৩শ কোটি টাকা পর্যন্ত ধার করেছে। আগস্ট মাসে দৈনিক ব্যাংকগুলো কলমানি মার্কেট থেকে ধার নিয়েছে ৭ হাজার কোটি থেকে ৯ হাজার ২শ কোটি টাকা পর্যন্ত।

ব্যাংকাররা বলেছেন, মার্চ মাসে করোন ভাইরাস প্রাদুর্ভাবের পরে ব্যবসায়ীদের তহবিলের চাহিদা কম ছিল, যার ফলে বিনিয়োগকারীরা নতুন বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে উদ্বেগজনক হয়ে ওঠে।

এই সময়ে দেশের ব্যবসার অবস্থা খুব খারাপ হওয়ার কারণে ঋণের চাহিদাও কমে গিয়েছিল। দেশে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আসায় রপ্তানি বাণিজ্যে ধস নামাই ঋণের চাহিদা কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ।

চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরে বেসরকারিখাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি ১৪ দশমিক ৮শতাংশ ধরা হলেও অক্টোবর শেষে ঋণ প্রবৃদ্ধি কমে ৮দশমিক ৬১শতাংশে নেমে এসেছে।

বেসরকারি খাতে অর্থের চাহিদা কমার পাশাপাশি ব্যাংকিং খাত থেকে সরকার চলতি  ২০২০-২০১২ অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রার ৮৮ হাজার ৯৮০ কোটি টাকা নেয়নি।

লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে চলতি অর্থবছরের জুলাই-নভেম্বর পর্যন্ত সরকার ব্যাংকিংখাত থেকে ২৯৫০ কোটি ৪৯লাখ টাকা ঋণ নিয়েছে। ২০১৯-২০ অর্থবছরে সরকার ব্যাংকিংখাত থেকে ৮৫হাজার কোটি টাকার বেশি ঋণ নিয়েছে।

বিশ্লেষকরা বলেছেন, দেশের ব্যাংকিংখাতে অতিরিক্ত তারল্য থাকায় ব্যবসায়ীরা সুবিধা পেলেও সমস্যায় পড়েছেন নিদিষ্ট আয়ের মানুষ এবং অবসর গ্রহণকারী পেশাজীবিরা। যারা ব্যাংক সুদের আয়ের ওপর নির্ভরশীল।

চলতি বছরের জুন শেষে দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রির্জাভ ৯ বিলিয়ন বৃদ্ধির পাশাপাশি বাজারে ৬৫ থেকে ৭০ হাজার কোটি টাকা সরবরাহ হয়েছে।

অন্যদিকে প্রণোদনা প্যাকেজের ৭০ হাজার কোটি টাকাও বাজারে সবরাহরাহ হয়েছে। দেশের ব্যবসায়ীরা বিদেশি ব্যাংক থেকে ৩ দশমিক ৫শতাংশ সুদে ঋণ নেওয়ায় দেশি ব্যাংকের পাশাপাশি বিদেশি ব্যাংকও বাজারে অতিরিক্ত তারল্য় সরবরাহে ভূমিকা রেখেছে।

ব্যাংকিং খাতে অতিরিক্ত তারল্য থাকার কারণে অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর শেষে আমানতের সুদহার ৪ দশমিক ৭৯ শতাংশে নেমে এসেছে। অক্টোবর শেষে সুদহার ছিল ৪ দশমিক ৭৩শতাংশ।

যদিও আমানতের গড় সুদহার ৪দশমিক ৭৩শতাংশে নেমে এসেছে। মুল্যস্ফীতির কারণে মূলধন ক্ষয়ে যাওয়ার ভয়ে অনেক ব্যাংক আমানত পণ্যের জন্য ২শতাংশ সুদ অফার দিচ্ছে। অক্টোবর শেষে  মুল্যস্ফীতির হার ৬ দশমিক ৪৪শতাংশ। যা গত সাত বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।

চলতি বছরের আগস্ট শেষে দেশের ব্যাংকিংখাতে অতিরিক্ত তারল্যের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে  ১লাখ ৬০ হাজার ৯৭৮ কোটি ৮৬লাখ টাকা। আগের বছরের মে মাসে অতিরিক্ত তারল্য ছিল ৬০ হাজার ৫৪৯ কোটি ৭লাখ টাকা।

এবিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বলেন, সুদহার বাজার ব্যবস্থার ওপর ছেড়ে না দিলে এই অবস্থা থেকে উত্তরণের কোনো সম্ভাবনা নেই। ঋণ এবং আমানতের সুদহার অতীতে সব সময় বাজারই নির্ধারণ করে দিয়েছে। এটা ম্যানুপুলেট করা ঠিক হয়নি।

বাংলাদেশ সময়: ০৮৫৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২২, ২০২০
এসই/এমএমএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।