ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

বান্দরবানে তামাক ছেড়ে তুলা চাষে আগ্রহী হচ্ছেন চাষিরা

কৌশিক দাশ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০১৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৭, ২০২১
বান্দরবানে তামাক ছেড়ে তুলা চাষে আগ্রহী হচ্ছেন চাষিরা পাহাড়ের তুলার চাষ। ছবি: বাংলানিউজ

বান্দরবান: পার্বত্য জেলা বান্দরবানের বেশিরভাগ এলাকা একসময় তামাকের আগ্রাসনে ভরপুর থাকলেও সময়ের পরিবর্তনে এখন বিভিন্ন এলাকায় তামাক ছেড়ে শুরু হয়েছে তুলা চাষ। আর এই তুলা চাষের ফলে চাষিদের জীবনে ফিরে এসেছে স্বচ্ছলতা।

কম খরচ আর স্বল্প শ্রমে লাভ বেশি হওয়ায় চাষিদের অনেকে ঝুঁকছেন তুলা চাষে।

একসময়ে বান্দরবানের বিভিন্ন পাহাড়ের পাদদেশে ব্যাপক তামাকের চাষ হতো। কিন্তু প্রচুর অর্থ বিনিয়োগ, শারীরিক পরিশ্রম আর তামাক বিক্রি করে প্রকৃতমূল্য না পাওয়ায় এখন অনেক চাষিই তামাক চাষ ছেড়ে নেমে পড়েছেন তুলা চাষে। বান্দরবানের বিভিন্ন স্থানে বর্তমানে পাহাড়ি ও সমভূমি তুলার চাষ হচ্ছে।  

বর্তমানে জেলার ৭টি উপজেলায় বিভিন্নস্থানে পাহাড় থেকে তুলা উত্তোলন শুরু করে দিয়েছেন চাষিরা। দেশি তুলার পাশাপাশি হাইব্রিড তুলা চাষ করেও ফলন ভাল পাওয়ায় আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন তারা। এখন জেলার মেঘলা, চিম্বুক, চড়ুই পাড়া, লেমুঝিড়ি, বালাঘাটা জয়মোহন পাড়া, মংপ্রু ছড়াসহ বিভিন্ন জমি থেকে চলছে তুলা উত্তোলন। ফলন ভালো হওয়ায় খুশি চাষিরা।  

বান্দরবান সদরের জয়মোহন পাড়ার বাসিন্দা লালন চাকমা বাংলানিউজকে বলেন, দীর্ঘ ৫ বছর ধরে আমি তুলার চাষ করছি, এতে আমার পরিবারে আর্থিক স্বচ্ছলতা ফিরে এসেছে। আগে তামাক চাষ করতাম, অনেক কষ্ট হতো, বছর শেষে অসুস্থ হতাম আর লাভ তো দূরে থাক বিনিয়োগের টাকা উঠানোও কষ্টকর ছিলো।

মংপ্রু ছড়ার বাসিন্দা মংপ্রু মারমা বাংলানিউজকে বলেন, তুলা চাষ করে আমার পরিবারে এখন আর্থিক স্বছলতা ফিরে এসেছে। পরিবারে মা-বাবা, ভাইবোন নিয়ে আমি ভালো আছি।  

তিনি আরো বলেন, গত বছর তুলা বিক্রি করে ৫০ হাজার টাকা লাভ হয়েছে এ বছর আশাকরি আরো বেশি লাভ হবে।  

তুলা উন্নয়ন বোর্ড, বান্দরবান জোনের তথ্যমতে, ২০১৯-২০ অর্থবছরে বান্দরবানে ৬১৭৫ হেক্টর জমিতে তুলার চাষ হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে তুলা উৎপাদন হয় ২০৮৮ টন। এদিকে ২০২০-২১ অর্থ বছরে  ৬২০০ হেক্টর জমিতে তুলা চাষ হয়েছে যার পরিপ্রেক্ষিতে ২১৫০ টন তুলার উৎপাদন আশা করছে কর্তৃপক্ষ।  

তুলা উন্নয়ন বোর্ড, বান্দরবান সদর ইউনিটের কটন ইউনিট অফিসার মো. শফিকুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, বান্দরবানে মূলত সমভূমি তুলা আর পাহাড়ি তুলার আবাদ হচ্ছে। আর বান্দরবান তুলা উন্নয়ন বোর্ড তুলা চাষিদের প্রশিক্ষণ, উন্নত জাতের তুলার বীজ, সার ও আর্থিক সহায়তা দিয়ে জীবনমান উন্নয়নে কাজ করছে। একসময় চাষিরা পাহাড়ে শুধু তামাক চাষ করে জীবনধারণ করলেও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এখন বেশি লাভ হওয়ায় অনেক চাষিই তামাক চাষ ছেড়ে তুলা চাষে আগ্রহী হচ্ছেন।  

কটন ইউনিট অফিসার মো: শফিকুল ইসলাম বাংলানিউজকে আরো বলেন, আমরা প্রতি সপ্তাহে একদিন করে বিভিন্ন তুলা বাগান পরিদর্শন করি এবং চাষিদের বিভিন্নভাবে পরামর্শ দিয়ে পার্বত্য জেলা বান্দরবানে তুলা চাষ বৃদ্ধিতে কাজ করে যাচ্ছি।  

তুলা উন্নয়ন বোর্ড, বান্দরবান জোন এর প্রধান তুলা উন্নয়ন কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. আলমগীর হোসেন মৃধা বাংলানিউজকে বলেন, বান্দরবান জোনের পক্ষ থেকে পার্বত্য জেলা বান্দরবানে ৭টি উপজেলায় তুলার চাষ বৃদ্ধি ও উন্নয়নে চাষিদের সহায়তা করা হচ্ছে। বান্দরবানে বর্তমানে ৬ হাজার তুলা চাষি রয়েছে।  বান্দরবানে মূলত পাহাড়ি তুলা এবং সমভূমি তুলার চাষ হচ্ছে। গত বছর তুলার টনপ্রতি দাম ছিল ৫৭ হাজার ৫শ টাকা আর এ বছর তুলার টনপ্রতি দাম ৬৫ হাজার চলছে।  

কৃষিবিদ মো. আলমগীর হোসেন মৃধা আরো বলেন, বান্দরবানের আবহাওয়া ও মাটি তুলা চাষের জন্য উপযোগী সেকারণে পার্বত্য জেলায় আগামীতে তুলার চাষ আরো বাড়বে।

বাংলাদেশ সময়: ১০১২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৭, ২০২১
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।