ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

সুবাতাস বইছে পুঁজিবাজারে

এস এম এ কালাম, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৪৫ ঘণ্টা, মে ২২, ২০২১
সুবাতাস বইছে পুঁজিবাজারে ...

ঢাকা: দীর্ঘ মন্দা ও আস্থা সংকট কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়িয়েছে দেশের পুঁজিবাজার। সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় সুবাতাস বইছে পুঁজিবাজারে।

ঈদুল ফিতরের আগ থেকে ঈদ পরবর্তী সময়ে ইতিবাচক রয়েছে বাজার। দীর্ঘ সময় ধরে বাজার স্থিতিশীল থাকায় বিনিয়োগকারীদের মধ্যে স্বস্তি ফিরেছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।  

ঈদের আগে ও পরে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সব সূচক বেড়েছে। শুধু তাই নয় ঈদের আগের সপ্তাহে ৩ কার্যদিবসে ডিএসইর বাজার মূলধন ১২ হাজার কোটি এবং ঈদ পরবর্তী (১৬-২০ মে) সময়ে বাজার মূলধন ২ হাজার কোটি টাকা বেড়েছে। সব মিলিয়ে গত দুই সপ্তাহে ডিএসইর বাজার মূলধন ১৪ হাজার কোটি টাকা বেড়েছে।

ডিএসই ও সিএসই সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে লকডাউনের মধ্যে ২০২০ সালের ১৭ মে শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বিএসইসির চেয়ারম্যান হিসেবে দ্বায়িত্ব গ্রহণ করেন। এরপর থেকেই গত এক বছরে নানামুখী পদক্ষেপে ঘুরে দাঁড়িয়েছে দেশের পুঁজিবাজার বলে মনে করছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা।

তাদের মতে, নতুন চেয়ারম্যান বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়েছেন। তার শক্ত অবস্থানের কারণে বাজারে সুদিন ফিরেছে সুতরাং এটি অব্যাহত থাকবে বলে মনে করছেন তারা।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী সম্মিলিত জাতীয় ঐক্যের সভাপতি আতাউল্লা নাইম বলেন, দীর্ঘ খরার পর বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরেছে। ওভারঅল মার্কেট মুভমেন্ট ভালো রয়েছে। গত এক বছরে বিএসইসির পুঁজিবাজার উন্নয়নের ক্ষেত্রে যে কমিটমেন্ট নিয়ে এসেছিল সেগুলো বাস্তবায়ন করেছেন। ফলে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা ফিরেছে। শুধু তাই নয় বাজারে সুদিন চলছে। বিনিয়োগকারীরা প্রফিট গেইন করছেন। এজন্য আমরা বিএসইসিকে সাধুবাদ জানাই।

এক দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভালো অবস্থানে রয়েছে দেশের পুঁজিবাজার বলে মনে করছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক বাংলানিউজকে বলেন, গত এক বছরে বিএসইসি যেসব পদক্ষেপ নিয়েছিল সেটি বাস্তবায়ন হওয়ায় এর সুফল ভোগ করছে বিনিয়োগকারীরা। দীর্ঘ এক দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভালো অবস্থানে রয়েছে দেশের পুঁজিবাজার। ৫০০ কোটি টাকার লেনদেন ২ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। এক কথায় সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় বাজারে সুবাতাস বইছে এবং এটি আগামীতেও অব্যাহত থাকবে।

তবে দীর্ঘ সময় পর বাজারে সুদিন ফেরায় বিনিয়োগকারী, ব্রোকারেজ হাউসসহ সংশ্লিষ্ট সকল প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের চোখে স্বপ্ন দেখা দিয়েছে। এটি অব্যাহত থাকুক এমনটাই প্রত্যাশা বাজার সংশ্লিষ্টদের।

এদিকে বাজার বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ঈদুল ফিতরের আগের সপ্তাহে (০৯-১২ মে) ডিএসই ও সিএসইতে সূচকের সঙ্গে টাকার পরিমাণে গড় লেনদেন বৃদ্ধি পায়। সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে লেনদেন শুরুর আগে ডিএসইতে বাজার মূলধন ছিল ৪ লাখ ৭৭ হাজার ৬৫৬ কোটি ৭৩ লাখ ২৬ হাজার টাকা। সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে লেনদেন শেষে বাজার মূলধন দাঁড়ায় ৪ লাখ ৮৯ হাজার ৯৪০ কোটি ৫৩ লাখ ৮৪ হাজার টাকা। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইর বাজার মূলধন বৃদ্ধি পায় ১২ হাজার ২৮৩ কোটি ৮০ লাখ ৫৮ হাজার টাকা।

সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ১৪৪.৪৮ পয়েন্ট বা ২.৫৮ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৭৫০.৫০ পয়েন্টে। অপর সূচকগুলোর মধ্যে শরিয়াহ সূচক ২২.৯৬ পয়েন্ট বা ১.৮৩ শতাংশ এবং ডিএসই-৩০ সূচক ৪৯.৫৮ পয়েন্ট বা ২.৩২ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়ে যথাক্রমে ১ হাজার ২৭৫.১৪ পয়েন্ট এবং ২১৮৬.৮৭ পয়েন্টে।

অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) ঈদুল ফিতরের আগের সপ্তাহে (০৯-১২ মে) ৩ কার্যদিবসে টাকার পরিমাণে লেনদেন হয় ২২৮ কোটি ৩৪ লাখ ৬২ হাজার ৬৫৭ টাকার। সপ্তাহটিতে সিএসইর সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ৪৪৯.৩২ পয়েন্ট বা ২.৭৭ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৬ হাজার ৬৫৮.২০ পয়েন্টে।

অপরদিকে ঈদুল ফিতরের পরবর্তী সপ্তাহেও (১৬-২০মে) উত্থান হয়েছে শেয়ারবাজারে। সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে লেনদেন শুরুর আগে ডিএসইতে বাজার মূলধন ছিল ৪ লাখ ৮৯ হাজার ৯৪০ কোটি ৫৩ লাখ ৮৪ হাজার টাকা। আর সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস লেনদেন শেষে বাজার মূলধন দাঁড়ায় ৪ লাখ ৯২ হাজার ২৯২ কোটি ৯ লাখ ৬৬ হাজার টাকা। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে বিনিয়োগকারীরা ২ হাজার ৩৫১ কোটি ৫৫ লাখ ৮২ হাজার টাকা বাজার মূলধন ফিরে পেয়েছে।

বিদায়ী সপ্তাহে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) ৮ হাজার ৪২৪ কোটি ৪৬ লাখ ২৩ হাজার ৬৪০ টাকার লেনদেন হয়েছে। আর আগের সপ্তাহে লেনদেন হয়েছিল ৪ হাজার ২০৮ কোটি ৯৫ লাখ ৮৮ হাজার ২৮১ টাকার। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইতে লেনদেন ৪ হাজার ২১৫ কোটি ৫০ লাখ ৩৫ হাজার ৩৫৯ টাকা বা ১০০ শতাংশ বেড়েছে।

সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৬২.৫৭ পয়েন্ট বা ১.০৯ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৮১৩.০৭ পয়েন্টে। অপর সূচকগুলোর মধ্যে শরিয়াহ সূচক ২.৩৩ পয়েন্ট বা ০.১৮ শতাংশ এবং ডিএসই-৩০ সূচক ৮.৪০ পয়েন্ট বা ০.৩৮ শতাংশ কমে দাঁড়িয়ে যথাক্রমে ১ হাজার ২৭২.৮১ পয়েন্ট এবং ২১৭৮.৪৭ পয়েন্টে।

অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) বিদায়ী সপ্তাহে (১৬-২০ মে) টাকার পরিমাণে লেনদেন হয়েছে ৪৭৩ কোটি ৮৬ লাখ ১৪ হাজার ৪৬৮ টাকার। আর আগের সপ্তাহে লেনদেন হয়েছিল ২২৮ কোটি ৩৪ লাখ ৬২ হাজার ৬৫৭ টাকার। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে সিএসইতে লেনদেন ২৪৫ কোটি ৫১ লাখ ৫১ হাজার ৮১১ টাকা বা ১০৮ শতাংশ বেড়েছে। সপ্তাহটিতে সিএসইর সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ১৭৯.৪৪ পয়েন্ট বা ১.০৭ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৬ হাজার ৮৩৭.৬৪ পয়েন্টে।

বাংলাদেশ সময়: ২১৪৪ ঘণ্টা, মে ২২, ২০২১
এসএমএকে/এইচএডি/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।