সিলেট: দ্বিতীয় দফায় ফের নিলামে উঠলো সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জের ন্যাচারাল গ্যাস ফার্টিলাইজার ফ্যাক্টরি লিমিটেড (এনজিএফএফএল)। গত বছরের ২ সেপ্টেম্বর সার কারখানাটি বিক্রির জন্য দরপত্র আহ্বান করে কর্তৃপক্ষ।
মেসার্স আতাউল্লাহ গ্রুপ সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে ১০৩ কোটি ৭৫ হাজার টাকা দিয়ে কারখানাটি স্ক্র্যাপ হিসেবে কিনে নেয়। কিন্তু নিয়মমাফিক টাকা জমা না করায় এটি আদালত পর্যন্ত গড়ায়। আদালতের বেঁধে দেওয়া সময়েও টাকা জমা দিতে পারেনি দরদাতা প্রতিষ্ঠানটি। অবশেষে পুনরায় নিলামের সিদ্ধান্ত নেয় শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীনস্ত বিসিআইসি।
বিসিআইসির অধীনস্ত ফেঞ্চুগঞ্জ সার কারখানার মহাব্যবস্থাপক (বাণিজ্যিক) সেরনিয়াবাত রেজাউল বারী গত মঙ্গলবার (২৫ মে) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ওমর ফারুকের পক্ষে দরপত্র আহ্বান করেন। বুধবার দরপত্র আহ্বান করে বিভিন্ন গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি প্রচার করা হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, কারখানার বিভিন্ন স্ক্র্যাপ এক লট যেখানে যে অবস্থায় আছে সেভাবেই নিলাম হবে। দরপত্র প্রতি লট মূল্য অফেরতযোগ্য ১০ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ মোট দরের আড়াই শতাংশ জামানত সরকারি সংশ্লিষ্ট দফতরে জমা দিতে হবে।
দরপত্র গ্রহণের শেষ তারিখ আগামী ৫ জুলাই সকাল সাড়ে ১১টা পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়। দরপত্র খোলার সময় ওই দিন বেলা আড়াইটায় ফেঞ্চুগঞ্জ সার কারখানায় মহাব্যবস্থাপকের (বাণিজ্যিক) কার্যালয়ে। দরপত্র জমা দেওয়া যাবে মহাব্যবস্থাপকের (বাণিজ্যিক) দফতর, এসএফসিএল ফেঞ্চুগঞ্জ, জেলা প্রশাসকের কার্যালয় সিলেট ও মৌলভীবাজার।
এর আগে গত বছরের ২ সেপ্টেম্বর (এনজিএফএফএল) বিক্রির জন্য দরপত্র আহ্বান করে কর্তৃপক্ষ। এতে ৯টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়। দরপত্র খোলা হয় গত ১৪ অক্টোবর। এর মধ্যে ১০৩ কোটি ৭৫ হাজার টাকা দিয়ে সর্বোচ্চ দরদাতা নির্বাচিত হয় সিলেটের ‘মেসার্স আতাউল্লাহ’ নামের প্রতিষ্ঠান। ভ্যাটসহ টাকার পরিমাণ দাঁড়ায় ১১৫ কোটি ৮৮ লাখ ৩৪ হাজার ৩৭৫ টাকা।
কিন্তু দরদাতা প্রতিষ্ঠান মেসার্স আতাউল্লাহ গ্রুপ নির্দিষ্ট সময়ে টাকা জমা না দিতে পারায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বরাবরে সময় বর্ধিতের আবেদন করেন। এর প্রেক্ষিতে শর্তভঙ্গ দেখিয়ে উচ্চ আদালতে রিট পিটিশন করেন দ্বিতীয় দরদাতা প্রতিষ্ঠান রিমি নির্মাণ সংস্থা ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. জিল্লুর রহমান।
গত বছরের শেষ কর্মদিবসে উচ্চ আদালতের বিচারপতি মো. মুজিবুর রহমান ও বিচারপতি মহি উদ্দিন শামীমের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ (৩১ ডিসেম্বর) এক আদেশে শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব, বিসিআইসির চেয়ারম্যান ও শাহজালাল সার কারখানার ব্যবস্থাপনা পরিচালককে সেসার্স আতাউল্লাহর পক্ষে বিক্রির আদেশ না দিতে নির্দেশ দেন।
পাশাপাশি ১৫ দিনের মধ্যে জবাব না দিলে আদালত তা নিষ্পত্তি করবেন বলে রুলনিশি জারি করেন। এর ফলে সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ ন্যাচারাল গ্যাস ফার্টিলাইজার ফ্যাক্টরি লিমিটেডের (এনজিএফএফএল) বিক্রয় প্রক্রিয়া আটকে যায়।
কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের চেম্বার জজ থেকে আতাউল্লাহ গ্রপের পক্ষে সময় বাড়িয়ে দেওয়া হয়। এ যাত্রাও টাকা দিতে ব্যর্থ হয় তারা।
ফেঞ্চুগঞ্জ ন্যাচারাল গ্যাস ফার্টিলাইজার ফ্যাক্টরি লিমিটেডের যন্ত্রপাতি বিকল থাকা ও অব্যাহত লোকসানের মুখে রাষ্ট্রায়ত্ত সার কারখানাটির মালামাল বিক্রির উদ্যোগ নেওয়া হয় এবারও।
কাগজপত্রে দেখা গেছে, সর্বোচ্চ দারদাতা প্রতিষ্ঠানটি গত বছরের ১৮ নভেম্বরের মধ্যে ব্যাংক নিরাপত্তা জামানতের ১০ ভাগ হিসেবে ১০ কোটি ৩০ লাখ ৭ হাজার ৫শ’ টাকা জমা দেওয়ার কথা। ওই সময়ের মধ্যে টাকা জমা না দিলে শর্ত মোতাবেক দরপত্র জামানতের ২ কোটি ৫০ লাখ টাকা বাজেয়াপ্ত হবে। কিন্তু সময় অতিবাহিত হওয়ার পরও তার দরপত্র জামানত বাতিল না করে তাকে নোটিফিকেশন অব অ্যাওয়ার্ড (নোয়া) দেয় সার কারখানার কর্তৃপক্ষ। এ অবস্থায় সময় বৃদ্ধি করা হলেও সমুদয় অর্থ দিতে ব্যর্থ হয় আগের দরদাতা প্রতিষ্ঠানটি। ফলে পুনরায় পুরাতন সার কারখানার দরপত্র আহ্বান করা হলো।
পুনরায় দরপত্র আহ্বান করায় নড়েচড়ে বসেছেন স্ক্র্যাপ ঠিাকাদারি ব্যবসায়ীরা। টেন্ডারে অংশ নিতে প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলেও জানিয়েছেন অনেকে।
বাংলাদেশ সময়: ১৮২৪ ঘণ্টা, মে ২৮, ২০২১
এনইউ/এমজেএফ