ঢাকা: কৃষি যান্ত্রিকীকরণের দিকে যাচ্ছে ও যান্ত্রিকীকরণের সুফল পাওয়া যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান সরকার কৃষিকাজে যন্ত্রের ব্যবহার বাড়িয়ে কৃষিকে আধুনিক ও লাভজনক করতে নিরলস কাজ করছে।
সোমবার (১৪ জুন) রাজধানীর খামারবাড়িতে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন (কেআইবি) মিলনায়তনে ‘সমন্বিত ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে কৃষি যান্ত্রিকীকরণ প্রকল্পের’ জাতীয় কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, এ বছরে বোরোতে ধান কাটার যন্ত্র কম্বাইন হারভেস্টার, রিপার বেশি ব্যবহৃত হওয়ায় দ্রুততার সঙ্গে সফলভাবে ধান ঘরে তোলা সম্ভব হয়েছে। ‘কৃষি যান্ত্রিকীকরণ’ প্রকল্পের মাধ্যমে অঞ্চলভেদে ৫০ শতাংশ থেকে ৭০ শতাংশ ভর্তুকিতে কৃষকদের কৃষিযন্ত্র দেওয়া হচ্ছে। এটি সারা বিশ্বের একটি বিরল ঘটনা। এ প্রকল্পের মাধ্যমে কৃষিতে নতুন অধ্যায় সূচিত হলো। এর মাধ্যমে ফসল উৎপাদনে সময় ও শ্রম খরচ কমবে। কৃষক লাভবান হবে। বাংলাদেশের কৃষিও শিল্পোন্নত দেশের কৃষির মতো উন্নত ও আধুনিক হবে।
কৃষিযন্ত্রের প্রাপ্তি, ক্রয়, ব্যবহার ও মেরামত সহজতর করতে অত্যন্ত গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে জানিয়ে কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক আরও বলেন, আমরা পর্যায়ক্রমে স্থানীয়ভাবে কৃষিযন্ত্র তৈরি করতে চাই। বর্তমানে বেশির ভাগ যন্ত্রপাতি বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। তা আমরা কমিয়ে আনতে চাই। ইতোমধ্যে আমরা ইয়ানমার, টাটাসহ অনেক কোম্পানির সঙ্গে কথা বলেছি, তাদের অনুরোধ করেছি যাতে তারা বাংলাদেশে কৃষিযন্ত্র তৈরির কারখানা স্থাপন করে।
তিনি বলেন, যন্ত্র সরবরাহকারীদের যন্ত্রের মেইনটেন্যান্সে সহায়তা ও বিক্রয়োত্তর সেবা দিতে হবে। এছাড়া, কৃষকদের জন্য প্রশিক্ষণে জোর দেওয়া হচ্ছে। যাতে তারা নিজেরাই যন্ত্র চালনা ও মেরামত করতে পারেন।
তিনি বলেন, কৃষিযন্ত্র প্রস্তুতকারী, নির্মাতা ও আমদানিকারকদের দেশে কৃষিযন্ত্র তৈরিতে এগিয়ে আসতে হবে। ভর্তুকি পাওয়ার পরও যাতে কৃষক কৃষিযন্ত্র কিনতে পারে, সেজন্য কৃষককে ঋণ দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছেও বলে জানান তিনি।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সিনিয়র সচিব মো. মেসবাহুল ইসলাম বলেন, কৃষিতে যন্ত্রের ব্যবহারের মাধ্যমে কৃষক লাভবান হওয়ার পাশাপাশি স্থানীয় পর্যায়ে কর্মসংস্থান তৈরি হবে। একই সঙ্গে, ফসলের নিবিড়তা বাড়বে ও সমলয়ে চাষ ত্বরান্বিত হবে। সময় বাঁচার ফলে আলাদা একটা ফসল করা যাবে। এর ফলে কৃষিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে। কৃষি দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাবে ও কৃষিপণ্যের রপ্তানি বাড়বে। কৃষির ওপর ভিত্তি করে উন্নত বাংলাদেশ হবে।
প্রসঙ্গত, ৩ হাজার ২০ কোটি টাকার ‘কৃষি যান্ত্রিকীকরণ’ প্রকল্পের মাধ্যমে ২০২০-২০২১ অর্থবছর থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত প্রায় ৫২ হাজার কৃষি যন্ত্রপাতি সারাদেশে ৫০ শতাংশ ও হাওর-উপকূলীয় এলাকায় ৭০ শতাংশ ভর্তুকিতে কৃষকদের মধ্যে বিতরণ করা হবে। চলমান ২০২০-২০২১ অর্থবছরে এ প্রকল্পের অধীনে বরাদ্দপ্রাপ্ত ২০৮ কোটি টাকার মাধ্যমে সারাদেশে ১ হাজার ৭৬২টি কম্বাইন হারভেস্টার, ৩৭৯টি রিপার, ৩৪টি রাইস ট্রান্সপ্লান্টারসহ প্রায় ২ হাজার ৩০০টি বিভিন্ন ধরনের কৃষিযন্ত্র কৃষকের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে। আগামী অর্থবছরে এ প্রকল্পে বরাদ্দ রয়েছে ৬৮০ কোটি টাকা।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. আসাদুল্লাহর সভাপতিত্বে কর্মশালায় আরও বক্তব্য রাখেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মেসবাহুল ইসলাম, অতিরিক্ত সচিব (সম্প্রসারণ) মো. হাসানুজ্জামান কল্লোল, অতিরিক্ত সচিব ওয়াহিদা আক্তার, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক মো. হামিদুর রহমান, বিএআরসির নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. শেখ মো. বখতিয়ার, ব্রির মহাপরিচালক ড. শাহজাহান কবীর প্রমুখ।
কর্মশালায় প্রকল্পের কার্যক্রম তুলে ধরেন প্রকল্প পরিচালক বেনজীর আলম।
বাংলাদেশ সময়: ১৯০০ ঘণ্টা, জুন ১৪, ২০২১
জিসিজি/আরআইএস