ঢাকা: করোনাভাইরাস মহামারি পরিস্থিতিতেও বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আওতায় দেওয়া বরাদ্দ থেকে চলতি অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে মাত্র ৩১ দশমিক ৩৮ শতাংশ ব্যয় করতে পেরেছে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ। চলতি অর্থবছরে ৫৩টি প্রকল্পে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগে ১১ হাজার ৯৭৯ কোটি টাকা বরাদ্দ থাকলেও ব্যয় হয়েছে মাত্র ৩ হাজার ৭৫৯ কোটি টাকা।
২০২০-২১ অর্থবছরে সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (আরএডিপি) মোট আকার ২ লাখ ৯ হাজার ৭২ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে মে মাস পর্যন্ত ১১ মাসে মোট খরচ হয়েছে ১ লাখ ২২ হাজার ১৩১ কোটি টাকা বা ৫৮ দশমিক ৩৬ শতাংশ।
বৃহৎ বরাদ্দপ্রাপ্ত ১৫টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মধ্যে সবচেয়ে বেহাল অবস্থা স্বাস্থ্যসেবা বিভাগে। সবচেয়ে কম অগ্রগতি দেখা গেছে এই বিভাগে। স্বাস্থ্যসেবা বিভাগে এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছে ৩১ দশমিক ৩৮ শতাংশ, টাকার অংকে ৩ হাজার ৭৫৯ কোটি টাকা। ৫৩টি প্রকল্পে মোট বরাদ্দ ছিল ১১ হাজার ৯৭৯ কোটি টাকা। বাকি এক মাসে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগকে ৮২২০ কোটি টাকা খরচ করতে হবে। চলতি অর্থবছর শেষ হবে ৩০ জুন। এই সময়ে শতভাগ এডিপি বাস্তবায়ন করতে হলে খরচ করতে হবে ৮৭ হাজার ১৪১ কোটি টাকা।
মঙ্গলবার (১৫ জুন) পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি) থেকে এসব তথ্য জানা গেছে। সবশেষ প্রতিবেদন ওয়েবসাইটে আপলোড করেছে সংস্থাটি।
২০২০-২০২১ অর্থবছরের ১১ মাস অতিবাহিত হলেও স্বাস্থ্যসেবা বিভাগে ৮ হাজার ২২০ কোটি রয়ে গেছে। স্বাস্থ্যসেবা বিভাগে জুন মাসে প্রতিদিন ২৭৪ কোটি টাকা খরচ করতে পারলে এই বিভাগ কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবে।
স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (পরিকল্পনা অনুবিভাগ) মো. হেলাল উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, এবার এডিপি বাস্তবায়নের হার একটু কম হয়েছে। যথাসময়ে এডিপি বাস্তবায়ন হার আরও বাড়াতে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
আইএমইডি সূত্র জানায়, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ ছাড়াও এডিপি বাস্তবায়নের হারে হতাশা দেখা গেছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে। ১১ মাসে এডিপি বাস্তবায়নের হার ৪৫ দশমিক ১২ শতাংশ, যা টাকার অংকে ৪ হাজার ৮২০ কোটি টাকা। অথচ এই মন্ত্রণালয়ে মোট বরাদ্দ ছিল ১০ হাজার ৬৮৫ কোটি টাকা।
বৃহৎ বরাদ্দপ্রাপ্ত ১৫টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মধ্যে সবচেয়ে ভালো অগ্রগতি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের। ১১ মাসে মোট এডিপি বাস্তবায়নের হার ৭৪ দশমিক ৪৩ শতাংশ, টাকার অংকে ৮ হাজার ১১৫ কোটি টাকা। এর পরেই সেতু বিভাগের মোট অগ্রগতি ৭১ শতাংশ, টাকার অংকে ৩ হাজার ৩৬৩ কোটি টাকা।
তবে সার্বিকভাবে গত বছরের তুলনায় এডিপি বাস্তবায়ন হার কিছুটা বেশি হয়েছে। গত বছর এডিপি বাস্তবায়নের হার ছিল ৫৭ দশমিক ৩৭ শতাংশ, যা টাকার অংকে ১ লাখ ১৫ হাজার ৪২১ কোটি টাকা। ২০১৯-২০ অর্থবছরে মোট এডিপি বরাদ্দ ছিল ২ লাখ ১১ হাজার ৯৯ কোটি টাকা।
আইএমইডি সূত্র জানায়, শুধু মে মাসে এডিপি বরাদ্দের ১৯ হাজার ৪০১ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। করোনা সংকটের কারণে এডিপি বাস্তবায়নে ধীরগতি দেখা গেছে। যেমন ২০১৮-১৯ অর্থবছরে মোট বরাদ্দ ছিল ১ লাখ ৭৬ হাজার ৬২০ কোটি টাকা। একই সময়ে এডিপি বাস্তবায়ন হার ছিল ৬৭ দশমিক ৯৭ শতাংশ, টাকার অংকে ১ লাখ ২০ হাজার ৪২ কোটি টাকা।
২০১৬-১৭ অর্থবছরে মোট এডিপি বরাদ্দ ছিল ১ লাখ ৫৭ হাজার ৫৯৪ কোটি টাকা। মে মাস পর্যন্ত বাস্তবায়ন হার ছিল ৬২ শতাংশ, টাকার অংকে ৯৮ হাজার ৯৭৮ কোটি টাকা।
২০১৬-১৭ অর্থবছরে মোট এডিপির আকার ছিল ১ লাখ ১৯ হাজার ২৯৬ কোটি টাকা। মে মাস পর্যন্ত বাস্তবায়ন হার ছিল ৬৪ শতাংশ, টাকার অংকে ৭৭ হাজার ২০৪ কোটি টাকা। গত ৫ বছরে শতাংশের হারে এডিপি বাস্তবায়ন কম থাকলেও টাকার অংকে বেশি বাস্তবায়ন হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৫০ ঘণ্টা, জুন ১৫,২০২১
এমআইএস/এমজেএফ