ঢাকা: বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতে নিয়োজিত নারী শ্রমিকের জীবন-জীবিকা রক্ষায় উদ্ভাবনী পদ্ধতির ওপর গুরুত্বারোপ করে তিন দিনব্যাপী ভার্চ্যুয়াল বৈশ্বিক কনফারেন্স শুরু হচ্ছে। ‘স্টিচ ফর আরএমজি গ্লোবাল ইনোভেশন কনফারেন্স’ শীর্ষক এই কনফারেন্স শুরু হচ্ছে আগামী ২২ জুন।
এতে যোগ দেবেন সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন খাতের দেশ এবং বিদেশের বিশেষজ্ঞরা। এই খাতে অটোমেশনের কারণে নারী শ্রমিকদের চাকরিচ্যুতি থেকে রক্ষা এবং শিল্প প্রতিযোগিতা কমে আসার বিষয়ে তারা আলোচনা করবেন।
কনফারেন্সে যোগ দেবেন এইচঅ্যান্ডএম-এর প্রধান নির্বাহী হেলেনা হেলমারসন এবং বাংলাদেশ পোশাক রফতানিকারক ও মালিক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি ফারুক হাসান। এতে অংশ নিতে আগ্রহীরা রেজিস্ট্রেশন করতে পারবেন stitchforrmg.brac.net এই ঠিকানায়। কোনো খরচ ছাড়াই কনফারেন্সে অংশ নেওয়া যাবে, তবে ধারণক্ষমতা সীমিত। ১৯ জুন শনিবার বিকাল ৫টা পর্যন্ত রেজিস্ট্রেশন করা যাবে।
ব্র্যাক এবং এইচঅ্যান্ডএম ফাউন্ডেশন ২০২০ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশে এই খাতের নারী শ্রমিকদের জীবিকা রক্ষায় পাইলট প্রকল্প পরিচালনা করছে। একাধিক ক্রস সেক্টর ডায়ালগের মাধ্যমে ক্রেতা, সরবরাহকারী এবং উদ্ভাবকদের মধ্যে সংযোগ তৈরি এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য। এছাড়াও ভবিষ্যতে স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রের বহুল ব্যবহারের মধ্যেও নারীর কর্মসংস্থানের নতুন পথ তৈরি, তাদের দক্ষতা ও জ্ঞানের বিকাশের লক্ষ্যে একই প্রকল্পের আওতায় আয়োজন করা হবে বৈশ্বিক উদ্ভাবনী চ্যালেঞ্জের।
বাংলাদেশের মোট রপ্তানি আয়ের ৮৩ শতাংশ (২০২০) তৈরি পোশাক শিল্পের দখলে হলেও নতুন উদ্ভাবনের অভাবে ক্রমান্বয়ে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ছে এই খাত। সারা বিশ্বে দক্ষতা এবং মান উন্নয়নে প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়লেও বাংলাদেশ প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ায় ঝুঁকিতে পড়ছে এর ওপর নির্ভরশীল কোটি মানুষ। এই অবস্থায় অনুমান করা হচ্ছে, ২০৪১ সাল নাগাদ প্রায় ৬০% গার্মেন্টস কর্মী চাকরি হারাবেন যার সিংহভাগই নারী। এদের মধ্যে নিজ কর্মক্ষেত্রে টিকে থাকার সক্ষমতা আনাই এই পাইলট প্রকল্পের উদ্দেশ্য।
মূলত দুই ধাপের পাইলট প্রক্রিয়ার প্রথম অংশ হচ্ছে এই কনফারেন্স। এ মাধ্যমে সংগৃহীত জ্ঞান কাজে লাগানো হবে দ্বিতীয় ধাপে আয়োজিত বৈশ্বিক উদ্ভাবনী চ্যালেঞ্জের আয়োজনে। সেই চ্যালেঞ্জে বিজয়ী ৬ টি আইডিয়াকে বাস্তবে রূপান্তরের জন্য এই প্রকল্প থেকে মোট ১ লাখ ৮০ হাজার ডলার সহায়তা এবং তত্ত্বাবধান করা হবে।
এইচঅ্যান্ডএম ফাউন্ডেশনের স্ট্র্যাটেজি লিড শার্লট ব্রানস্ট্রম বলেন, ব্র্যাকের সঙ্গে যৌথ এই যাত্রার মাধ্যমে ভবিষ্যতে গার্মেন্টস শিল্পে নারীদের কী ধরনের দক্ষতার প্রয়োজন হতে পারে তা খুঁজে বের করার বিষয়ে আমরা উচ্চাশা প্রকাশ করছি। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এবং অটোমেশনের মধ্যেও নারীরা যাতে সফলভাবে তাদের কাজ চালিয়ে যেতে পারেন সেজন্য তাদের তৈরি এবং দক্ষতা বৃদ্ধি এবং এর মাধ্যমে তাদের জীবন জীবিকা রক্ষাই আমাদের দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্য। অর্থনৈতিক জীবনে নারীর অংশগ্রহণ উন্নতি এবং তাঁদের সামাজিক স্বায়ত্তশাসনকে উন্নত করার বিষয়ে নতুন প্রযুক্তি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারে। একইসাথে, কিছু প্রযুক্তির ব্যবহার নারীদেরকে চিরাচরিত বাধা উৎরে গতিশীলভাবে কাজ করায় সহযোগিতা করতে পারে। আমরা তাই বিশ্বাস করি উদ্ভাবন এবং ডিজিটাল টুলস ব্যবহারের বিভিন্ন পদ্ধতির মধ্য দিয়ে সাম্যতার অগ্রগতিতে মনোযোগ দেওয়া জরুরি।
ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ বলেন, বাংলাদেশের ধারাবাহিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে নারীরা বড় ভূমিকা রেখে চলেছেন। তৈরি পোশাক খাতের উত্থানে নারীদের অংশগ্রহণকে এজন্য এককভাবে বড় কারণ হিসেবে দেখা যেতে পারে। পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাওয়া এই খাতের নারী কর্মশক্তিকে পিছনে ফেলে রাখলে চলবে না। এই প্রকল্পের মাধ্যমে উদ্ভাবনকে মূলধারায় সংযুক্ত করে তাদের (নারীদের) দক্ষতা আরও বাড়াতে হবে। আমরা আশাবাদী এটা হবে প্রযুক্তিনির্ভর এবং সাম্যতাপূর্ণ।
বাংলাদেশ সময়: ১৬২১ ঘণ্টা, জুন ১৭, ২০২১
এসই/এমজেএফ