রাঙামাটি: রূপ বৈচিত্র্যের শহর খ্যাত পাহাড়ি জেলা রাঙামাটিতে পার্বত্য শান্তি চুক্তির পর থেকে পর্যটকদের আগমন হু হু করে বাড়তে থাকে। ঘটতে থাকে পর্যটন ব্যবসার ব্যাপক পরিধি ও প্রসার।
পর্যটন স্পটগুলোতে দোকানে-দোকানে টেক্সটাইলের কাপড়ের পসরা সাজানো। এসব কাপড় উৎপাদন করতে গড়ে তোলা হয়েছে কারখানা। এ পেশার সঙ্গে কয়েকশ ব্যবসায়ী জড়িত। কাজ করছে কয়েক হাজার শ্রমিক।
দৃষ্টিনন্দন ডিজাইনে তৈরি পার্বত্য চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী পাহাড়িদের পোশাকের প্রতি দেশ বিদেশের পর্যটকদের বেশ চাহিদা রয়েছে। জেলার বাইরেও এসব বস্ত্র বিকিকিনি করা হয়। সাশ্রয়ী মূল্য এবং আকর্ষণীয় বুননের কারণে পাহাড়িদের তৈরি পোশাকের প্রতি মানুষের আগ্রহ বেশি।
করোনার কারণে বছরজুড়ে রাঙামাটিতে পর্যটক না আসায় পাহাড়ি বস্ত্র বিপনীবিতানগুলোতে বেচা বিক্রি নেই। বাইরের অর্ডারও বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পাহাড়ি তাঁতবস্ত্র ব্যবসায় ধস নেমেছে। কারণ পর্যটকদের উপর নির্ভরশীল এই ব্যবসা। পর্যটক না এলে ব্যবসাও নেই।
চলতি বছরে কিছুদিন পর্যটক আসায় সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার চেষ্টা চালায়। কিন্তু দেশে ফের করোনার সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় পর্যটক আসা বন্ধ হয়ে যায়। এ কারণে টেক্সটাইল ব্যবসায়ীরা মুখ থুবড়ে পড়েন। তাদের চোখে-মুখে হতাশা। আয় না থাকায় কমে গেছে উৎপাদন, বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে অনেক কারখানা। ছাঁটাই করা হয়েছে কর্মচারী।
টেক্সটাইল ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কারখানাগুলোতে ন্যায্য মজুরি না পাওয়ায় রাঙামাটি শহরের ১২টি তাঁত কারখানায় প্রায় তিনশ শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছে। অনেক শ্রমিকই পেটের দায়ে এখন অন্য পেশায় চলে গেছে। ব্যবসা না থাকায় মালিকরা উৎপাদন কমিয়ে দিয়েছেন।
বয়ান টেক্সটাইলের শ্রমিক বকুল সিকদার বাংলানিউজকে বলেন, ব্যবসা নেই; তাই মালিকপক্ষ আমাদের ঠিকমতো বেতন দিতে পারছেন না। আমাদের অনেক কর্মীকে বিদায় করে দেওয়া হয়েছে। করোনার এ কঠিন সময়ে আমরা খুব কষ্টে আছি। সরকার আমাদের মতো অসহায় শ্রমিকদের সহায়তা দিলে অনেক উপকার হতো।
এন আর হ্যান্ডিক্রাফ্টস এর শ্রমিক কুশনো মারমা বাংলানিউজকে জানান, বিকিকিনি না থাকায় দোকান খুলে বেকার বসে আছি। কোনো ক্রেতা নেই। বেতন পাচ্ছি না ঠিকমতো। দীর্ঘ বছর এ পেশার সঙ্গে জড়িত থাকার কারণে অন্য কোনো পেশায় যেতে পারিনি। পরিবার নিয়ে চলতে অনেক কষ্ট হচ্ছে। তাই সরকারের কাছে সহযোগিতা কামনা করছি।
বয়ান টেক্সটাইলের ম্যানেজার মো. রফিক বাংলানিউজকে জানান, আমরা কিভাবে কারখানা চালু রাখবো। উৎপাদন করা না গেলে কি ভাবে ব্যবসা করবো। যাদের ঘিরে আমাদের ব্যবসা গড়ে উঠছে তারাও নেই। তাই আয়ও নেই। নিদারুন কষ্টে আছি। কাউকে কিছু বলতে পারছি না।
তিনি আরও জানান, পাহাড়ি ঐতিহ্যবাহী ব্যবসা ঠিকিয়ে রাখতে হলে সরকারি সহযোগিতা দরকার। তা না হলে এই বস্ত্র শিল্প হারিয়ে যাবে বলে আমরা আশঙ্কা করছি।
এন আর হ্যান্ডিক্রাফ্টস এর স্বত্ত্বাধিকারী অনুপম ত্রিপুরা বাংলানিউজকে হতাশার কণ্ঠে বলেন, আমরা বস্ত্র উৎপাদন বন্ধ করে দিয়েছি। কারখানা এবং শোরুম থেকে শ্রমিক বিদায় করে দিয়েছে। পুঁজি কমে যাচ্ছে। কিভাবে ব্যবসা টিকিয়ে রাখবো তা মাথায় আসছে না।
বনানী টেক্সটাইল এর সত্ত্বাধিকারী বাবলা মিত্র বাংলানিউজকে বলেন, লুঙ্গি, পাঞ্জাবি, থ্রি-পিস ও গামছাসহ তাঁতের তৈরি নানা পোশাকের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। তবে আয় না থাকায় শ্রমিক ছাঁটাই করা হয়েছে। অর্থের অভাবে বস্ত্র তৈরির কাঁচামাল সরবরাহ করা যাচ্ছে না।
তিনি আরও বলেন, আমরা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। ব্যবসা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করি। আমাদের এ ব্যবসার ওপর কয়েক হাজার শ্রমিকের ভাগ্য জড়িত। আয় না থাকার কারণে তাদেরও চালাতে পারছি না।
বাংলাদেশ সময়: ১৬০০ ঘণ্টা, জুন ১৯, ২০২১
আরএ