ঢাকা: মুঘলদের পৃষ্ঠপোষকতায় এ উপমহাদেশে শিল্প, সংস্কৃতি, ভাষা, খাদ্যাভ্যাস ইত্যাদিতে ঘটেছে পরিবর্তন। মুঘলদের হাত ধরে এ অঞ্চলে আসে বিভিন্ন মজাদার খাবারও।
লিজি কলিংয়ের লেখা ‘Curry: A Tale of Cooks and Conquerors’ বইটি পড়ে জানা যায়- বাবরপুত্র হুমায়ুন শেরশাহ যুদ্ধে কোণঠাসা হয়ে পারস্যে আশ্রয় নিয়েছিলেন। তারপর যুদ্ধে জয়লাভের পর পারস্য থেকে বগলদাবা করে আনেন কয়েকজন পারসি বাবুর্চি। তারপর সম্রাট জাহাঙ্গীরের স্ত্রীর তত্ত্বাবধানে মোঘলদের রান্নাঘরে ঢোকে আরও বহুজাতিক বাবুর্চি। মসলার গুণেই হোক কিংবা মুঘলদের রসুইঘরের বাবুর্চিদের হাতের জাদুতেই হোক, সেই সময় থেকেই মুঘল রান্না জগৎজুড়ে সুখ্যাতি অর্জন করে।
নামে-বেনামে সেই সুখ্যাতিকে উপজীব্য করে বাংলাদেশে, বিশেষ করে ঢাকায় প্রচলিত মুঘলদের বিভিন্ন রকমের খাবারে ঠাসা। কিন্তু এর অধিকাংশই মানহীন এবং মুঘল মর্যাদার বিপরীত, ক্ষেত্রবিশেষে বিলুপ্ত প্রায়।
রাজধানীর ৩০০ ফিট সংলগ্ন ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরা (আইসিসিবি) চেষ্টা করেছে হারানো সেই ঐতিহ্য ধারণ করতে। মুঘলদের প্রকৃত খাদ্যাভ্যাস সবার কাছে পরিচিত করাতে। সেই লক্ষ্যেই সোমবার (২১ জুন) আইসিসিবি হেরিটেজ রেস্টুরেন্টের রাজসিক উদ্বোধন করা হয়েছে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নন্দিত কথাসাহিত্যিক ও দৈনিক কালের কণ্ঠের সম্পাদক ইমদাদুল হক মিলন। অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন আইসিসিবির চিফ অপারেটিং অফিসার এমএম জসিম উদ্দিন।
উদ্বোধনী বক্তব্যে এমএম জসিম উদ্দিন বলেন, মুঘল রাজ পরিবারের পোশাক-আশাক ও খাদ্যাভ্যাস যেন এক হিরণ্ময় স্মৃতি। একেকটি রহস্যে ঘেরা গল্প। সেই জৌলুসময় জীবনাচরণের ইতিহাস আজ বিলুপ্তপ্রায়। মুঘলদের খাদ্যাভ্যাস নিয়ে জানতে চেষ্টা করেছি। চেষ্টা করেছি, তাদের ঐতিহ্যকে ধারণ করতে। আইসিসিবি হেরিটেজ রেস্টুরেন্টে ঢাকার মানুষ পরখ করতে পারবেন সেসব অসাধারণ খাবারের আয়োজন এবং উপলব্ধি করতে পারবেন রাজসিক জীবন। ঢাকার বুকে মুঘল ঐতিহ্যের ধারক হিসেবে এ রেস্টুরেন্ট রয়ে যাবে যুগযুগ।
দৈনিক কালের কণ্ঠের সম্পাদক ইমদাদুল হক মিলন বলেন, আইসিসিবিতে চালু হওয়া হেরিটেজ রেস্টুরেন্ট বাংলাদেশের একটি বিশেষ রেস্টুরেন্ট হিসেবে চিহ্নিত হবে। এতে আমার কোনো সন্দেহ নেই। কারণ শুধু মুঘল খাবারের কোনো রেস্টুরেন্ট এখনও বাংলাদেশে হয়নি। পুরো রেস্টুরেন্টটি সাজানো হয়েছে মুঘল ঐতিহ্যকে ধারণ করে। বসুন্ধরা যা করে মুঘলদের মতো বিশাল আয়োজনেই করে। মুঘলরা দিল্লিতে মসজিদ, আগ্রার তাজমহল করেছেন বিশাল এলাকা নিয়ে। বসুন্ধরাও ছোট কাজে বিশ্বাসী না।
তিনি আরও বলেন, মুঘলদের রান্নার স্বাদ ও রাজকীয়তার মেলবন্ধন যুগের পর যুগ মানুষের রসনাকে তৃপ্তি দিয়ে আসছে। আজও আমরা সে লোভনীয় খাবারের রসাস্বাদন করি। কিন্তু সত্যিকার সেই স্বাদ আয়োজনের ঘাটতি বর্তমানে লক্ষণীয়। ধন্যবাদ বসুন্ধরা কর্তৃপক্ষকে এবং আইসিসিবিকে এ রাজসিক পদক্ষেপের জন্য। আইসিসিবি হেরিটেজ রেস্টুরেন্ট কেবল উদরপূর্তির মাধ্যম হওয়ার জন্য আসেনি, এসেছে একটি শিল্পকে একটা ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর এক ঢাকাইয়া কাওয়ালি সঙ্গীতের আয়োজন করা হয়।
বাংলাদেশ সময়: ২১২৪ ঘণ্টা, জুন ২১, ২০২১
এসই/ওএইচ/