রাঙামাটি: পাহাড়ি জেলা রাঙামাটির আপন রূপ-লাবণ্যের জন্য যেমন আলাদা পরিচিতি রয়েছে তেমেনি এ অঞ্চলে উৎপাদিত ফলমূলেরও সুখ্যাতি রয়েছে দেশজুড়ে। পাহাড়ের ফল বললেই জেলার বাইরের মানুষ একবার হলেও উঁকি দিয়ে দেখবে, এতে তাদের আগ্রহের শেষ নেই।
রাঙামাটিতে উৎপাদিত আম্রপালি এবং রাংগুই জাতের আমের কদর রয়েছে দেশজুড়ে। দেশের বাইরেও এর ব্যাপক চাহিদা। বাইরের ব্যবসায়ীরা মৌসুম এলে এই জাতের আমগুলো কিনতে প্রতিযোগিতায় মেতে ওঠেন।
অনেক ব্যবসায়ী আবার আগেই বাগানে পুঁজি বিনিয়োগ করে থাকেন। তবে করোনার কারণে গত বছর চাষিরা ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। ব্যবসায়ীরা না আসায় উৎপাদিত ফলের বেচা-বিক্রি ছিলো খুবই কম। এ বছর আমের ফলন ভালো হলেও বিক্রি হচ্ছে কম দামে। করোনার কারণে বাইরের ব্যবসায়ীরা না আসায় ভালো দাম পাচ্ছেন না চাষি এবং স্থানীয় বিক্রেতারা।
জানা গেছে, পাহাড়ের ক্ষতি এবং পরিবেশ দূষণকারী জুম চাষ রোধ করতে মূলত কৃষিবিভাগ গত এক দশক ধরে পাহাড়ের ঢালুতে উন্নত জাতের আম চাষে কৃষকদের সহায়তা করে আসছে। বলতে গেলে কৃষিবিভাগ অনেকাংশে সফলও হয়েছে। অনেক চাষি বেশি লাভের আশায় জুম চাষ বন্ধ করে পাহাড়ে আম্রপালি এবং রাংগুই জাতের আম চাষের দিকে ঝুঁকে পড়েছেন।
বরকল উপজেলার সুবলং গ্রামের আম বাগানের মালিক ও চাষি চিত্র রঞ্জন চাকমা বাংলানিউজকে বলেন, এ বছর আমের অনেক ভালো ফলন হয়েছে। জুনের মাঝামাঝি আম সংগ্রহ শুরু করা হয়। করোনার কারণে বাইরের ব্যবসায়ীরা না আসায় বাগানে উৎপাদিত আম স্থানীয় বিক্রেতাদের কাছে বিক্রি করেছি কম দামে। খরচ অনুযায়ী লাভের মুখ দেখছি না।
শহরের কলেজগেট এলাকার আম ব্যবসায়ী মো. আসাদুজ্জামান বাংলানিউজকে বলেন, বাজারে ভালো জাতের রাঙ্গু বিক্রি করছি কেজিপ্রতি ৪৫-৫০ টাকা। আম্রপালি বিক্রি করছি ৫০-৫৫ টাকা। এছাড়াও মল্লিকা এবং রূপালী ৪০-৫০ টাকা কেজিপ্রতি বিক্রি করছি।
বনরূপা বাজারের আম ব্যবসায়ী মো. সাইফুল বাংলানিউজকে বলেন, গত দুই বছর ধরে করোনার কারণে ব্যবসায় লাভের মুখ দেখছি না। ব্যবসা করতে হচ্ছে তাই করছি।
তিনি আরও বলেন, ভালো মানের রাঙ্গু এবং আম্রপালি বিক্রি করছি কেজিপ্রতি ৫০-৫৫ টাকায় এবং রূপালী এবং মল্লিকা বিক্রি করছি ৬০-৭০ টাকার মধ্যে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর রাঙামাটি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, রাঙামাটিতে এই বছর আমের ব্যাপক ফলন হয়েছে। সর্বমোট ৩৩৯২ হেক্টর বাগানে আম্রপালি এবং রাংগুই জাতের আমের চাষ করা হয়েছে। পাহাড়ে বৃষ্টিপাত কম হওয়ার পরও এবার কাপ্তাই, বিলাইছড়ি, বরকল, নানিয়ারচর ও রাঙামাটি সদর উপজলোর বিভিন্ন স্থানে আমের ফলন চাহিদা অনুযায়ী বেশ ভালো হয়েছে।
কৃষিবিভাগ রাঙামাটি কার্যালয় বলছে, বাগানের প্রতি হেক্টরে প্রায় ১১ টন করে আমের ফলন এসেছে। অধিকাংশ বাগানের আম পাকতে শুরু করেছে। প্রান্তিক চাষিরা বাগানের আম সংগ্রহ শুরু করেছেন। ১৫ জুন থেকে রাঙামাটির গুরুত্বপূর্ণ হাটগুলোতে আম্রপালি ও রাংগুই আম বিক্রি শুরু হবে বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর রাঙামাটি অঞ্চলের উপ-পরিচালক কৃষ্ণ প্রসাদ মল্লিক বাংলানিউজকে জানান, অন্যান্য মৌসুমের তুলনায় এবারের মৌসুমে রাঙামাটিতে আমের ব্যাপক উৎপাদন হয়েছে। এর মধ্যে- আম্রপালি এবং রাংগুই জাতের আম অন্যতম। কারণ জেলার বাইরে এই দুই জাতের আমের চাহিদা বেশি রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, চাষিরা নিজেদের বাগান থেকে আম সংগ্রহ শুরু করে দিয়েছেন। ব্যবসায়ীরাও এই দুই জাতের আম কিনতে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
কৃষি কর্মকর্তা আরও জানান, বেশ কয়েক বছর ধরে এই দুই জাতের আম জেলার চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ১১০০ ঘণ্টা, জুন ২৩, ২০২১
আরএ