ঢাকা: কোনো দ্বিধা-দ্বন্দ্ব নয় কঠোর লকডাউনের মধ্যেও খোলা থাকছে দেশের পুঁজিবাজার বলে জানিয়েছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে, কঠোর লকডাউনে ব্যাংক খোলা থাকবে আর ব্যাংক খোলা থাকলে পুঁজিবাজারও খোলা থাকছে।
রোববার (২৭ জুন) একাধিক স্টেকহোল্ডার ও বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে আলাপকালে তারা বাংলানিউজকে এমনটি জানিয়েছেন।
এদিকে ১ জুলাই থেকে ৭ জুলাই পর্যন্ত মোট সাত দিন পূর্ণাঙ্গ লকডাউনে থাকবে গোটা দেশ। এ সময় জরুরি পরিষেবা ছাড়া সব সরকারি-বেসরকারি অফিস বন্ধ থাকবে। জরুরি পণ্যবাহী ছাড়া সব প্রকার যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকবে বলে সরকার ঘোষণা করেছে। এমন ঘোষণার পর রোববার পুঁজিবাজারে সূচকের বড় পতন হয়েছে। লকডাউনে অর্থের প্রযোজন হতে পারে বলে অনেকেই শেয়ার বিক্রি করছেন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে কঠোর লকডাউনেও ব্যাংক খোলা রাখার সিদ্ধান্ত রয়েছে সরকারের। সুতরাং কোনো দ্বিধা-দ্বন্দ্ব না পড়তে বিনিয়োগকারীদের পরামর্শ দিয়েছেন তারা।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক বলেন, কিছুটা দ্বিধা দ্বন্দ্ব ও আতঙ্কে বিনিয়োগকারীরা শেয়ার বিক্রি করে টাকা ক্যাশ করছেন। তবে কিছুদিন আগেও যখন লকডাউনের সবকিছু বন্ধ ছিল শেয়ারবাজারে লেনদেন চলেছে। বাজারে তারল্য বৃদ্ধি পেয়েছে সুতরাং ব্যাংক খোলা থাকলে পুঁজিবাজার খোলা থাকছে। এতে আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই।
তিনি আরো বলেন, গত এক দশকে সবচেয়ে ভালো অবস্থানে রয়েছে দেশের পুঁজিবাজার ৫০০ কোটি টাকার লেনদেন এখন দুই হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। এতে করেই বোঝা যাচ্ছে দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে ভাল অবস্থায় রয়েছে পুঁজিবাজার বলে তিনি উল্লেখ করেন।
শেয়ারের প্রফিট তুলতেই শেয়ার বিক্রি করছেন বিনিয়োগকারীরা বলে জানিয়েছেন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের ব্রোকারদের সংগঠন ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ডিবিএ) সভাপতি শরীফ আনোয়ার হোসাইন।
তিনি বাংলানিউজকে বলেন, কঠোর লকডাউন নিয়ে অনেকের মধ্যে দ্বিধা-দ্বন্দ্ব থাকলেও শেয়ারের ফ্লোর প্রাইস তুলে দেওয়ায় বিনিয়োগকারী প্রফিট তুলছেন এ কারণেই হয়তো সূচক কিছুটা নেতিবাচক ছিল বলে তিনি মনে করেন।
তিনি আরো বলেন, কোভিডের মধ্যে সবকিছু যখন বন্ধ ছিলো সে সময়ও পুঁজিবাজারে লেনদেন চলেছে। তাই কঠোর লকডাউনে পুঁজিবাজারে লেনদেন চলবে এ নিয়ে দ্বিধা-দ্বন্দ্বে থাকার কোনো সুযোগ নেই।
সূচক কমা-বাড়া এটা স্বাভাবিক ঘটনা এর সঙ্গে আতঙ্কিত হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। বাজারে লেনদেন কেমন হচ্ছে সেটাই বড় কথা। ৫০০ থেকে ৭০০ কোটি টাকার লেনদেন দুই হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে বাজারে তারল্যের কোন সংকট নেই। একই সঙ্গে ফ্লোর প্রাইস তুলে নেওয়ায় যার যার শক্তিতে সে দাঁড়াচ্ছে। এতে করে বাজার আরো সমৃদ্ধ হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পরিচালক রকিবুর রহমান।
তিনি বাংলানিউজকে বলেন, বাজারের ভলিউম কমে গেলে বুঝতে হবে অনেকে বের হয়ে যাচ্ছেন কিন্তু বাজারের ভলিউম আগের চেয়ে অনেক ভাল অবস্থানে রয়েছে সুতরাং সূচক কমা বা বাড়াতে কোন কিছু যায় আসে না।
তিনি আরো বলেন, বিনিয়োগকারীদের আতঙ্কিত বা দ্বিধা-দ্বন্দ্বে পড়ার কোনো সুযোগ নেই। করোনার মধ্যে বিশ্বের কোথাও পুঁজিবাজার বন্ধ হয়নি সুতরাং বাংলাদেশেও এটা বন্ধ হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। ব্যাংকিং ব্যবস্থা চালু থাকলে পুঁজিবাজারের লেনদেন চালু থাকবে তবে এক্ষেত্রে টাইমের হেরফের হতে পারে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
রকিবুর রহমান বলেন, টাকা তুলতে বা জমা দিতে ব্যাংকে গিয়ে গ্রাহকদের লাইন দিতে হলেও পুঁজিবাজারে এসবের কোনো প্রয়োজন নেই। অ্যাপসের মাধ্যমে ঘরে বসে থেকেই সহজে লেনদেন করা যায় সুতরাং পুজিবাজার বন্ধ হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। দেশের অর্থনীতি চাকা সচল রেখেছে পুঁজিবাজার। পুঁজিবাজার খোলা থাকা মানেই দেশের অর্থনীতি সচল থাকা বলেও তিনি জানান।
অপরদিকে, কঠোর লকডাউন ঘোষণার পর বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন ব্যাংক লেনদেন চালু থাকলে পুঁজিবাজারের লেনদেনও চলবে। সুতরাং কঠোর লকডাউনে ব্যাংক থাকার সঙ্গে সমন্বয় রেখে পুঁজিবাজারেও লেনদেন চলবে।
বাংলাদেশ সময়: ২০৫৩ ঘণ্টা, জুন ২৭, ২০২১
এসএমএকে/এনটি