খাগড়াছড়ি: সারা বছর কঠোর পরিশ্রম করে ফলন বাজারে তুলতেও স্বস্তিতে নেই খাড়াছড়ির আমচাষিরা। বাগান করা থেকে বাজারজাত পর্যন্ত চাঁদা, টোল ও পরিবহনকে অতিরিক্ত চার্জ দিতে দিতে প্রায় ন্যুব্জ আমচাষিরা।
খাগড়াছড়ির পাহাড়ে উৎপাদিত আম্রপালি ও রাঙ্গুইসহ বিচিত্র জাতের আমের খ্যাতি দেশজুড়ে। এখন চলছে মূলত খাগড়াছড়িতে আমের উৎসব। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে এবার গাছে আম কম হলেও উৎপাদন ছাড়িয়ে গেছে আগের সব রেকর্ড। তারপরও সুখ নেই ফল চাষিদের।
খাগড়াছড়ি থেকে সমতলের বিভিন্ন জেলায় আম পরিবহনে জেলার বিভিন্ন সংস্থার ধার্য করা টোল কয়েকগুন হারে বেশি আদায় করা হচ্ছে বলে ফল বাগানিরা অভিযোগ করেছেন। এক্ষেত্রে টোল ইজারাদারদের একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট সক্রিয় রয়েছে বলেও জানান তারা।
ফল বাগানিরা জানান, বিষমুক্ত ও ফরমালিনবিহীন হওয়ায় খাগড়াছড়ি আম্রপালিসহ বিভিন্ন জাতের আম ঢাকা, চট্টগ্রাম, ফেনীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় যাচ্ছে। এই সুযোগে পার্বত্য জেলা পরিষদ, খাগড়াছড়ি, রামগড় ও মাটিরাঙ্গা পৌরসভার টোল ইজারাদাররা অতিরিক্ত হারে ট্যাক্স (টোল) আদায় করছেন। এছাড়া বাজার ফান্ডের বাজার ইজারাদাররাও বাড়তি টোল আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। ফলে বিভিন্ন ফল-ফলাদি বাজারজাত ও দেশের অন্যান্য অঞ্চলে পরিবহনের ক্ষেত্রে ক্ষতির মুখে পড়েছেন আমচাষিরা।
ফল বাগান মালিক ও ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেছেন, প্রতিটি আম বা ফলের ট্রাক খাগড়াছড়ি থেকে ফেনী বা চট্টগ্রামে পৌঁছাতে টোল ও ট্যাক্সের নামে চাঁদা আদায় করা হয় ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকা। এর মধ্যে খাগড়াছড়ি পৌরসভা ছোট ট্রাক ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা, বাজার ফান্ড প্রতি গাড়ি ৩শ টাকার স্থলে নেওয়া হয় দেড় হাজার টাকা থেকে সাড়ে ৪ হাজার টাকা পর্যন্ত। রামগড়ের সোনাইপুল ও মানিকছড়ির গাড়িটানায় পার্বত্য জেলা পরিষদের টোলে ফলের বড় গাড়ি নির্ধারিত ৫শ টাকার স্থলে ৮ হাজার টাকা, ছোট ট্রাক ৪শ টাকার স্থলে ৬ হাজার টাকা পর্যন্ত আদায় করছে বিনা রশিদে। পৌরসভা কখনো টোল সিডিউল মানে না। শুধু তাই নয়; খুচরা আম পরিবহনকারিরাও আছেন বিপদে। নিয়ম অনুযায়ী ২০ কেজি বা ১ ক্যারেটের ট্যাক্স মাত্র ৫ টাকা ধরা থাকলেও ইজারাদাররা জোরপূর্বক নিচ্ছেন ২০-৫০ টাকা পর্যন্ত।
অপরদিকে এসএ পরিবহন ও সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিস অধিক পরিবহন চার্জ নেওয়ার অভিযোগ করেছেন অনেকে। প্রতিকেজি আম পরিবহনে নেওয়া হচ্ছে ২০ টাকা হারে।
স্থানীয়দের এমন অভিযোগে খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসন পরিবহনগুলোকে আমের চার্জ নির্ধারণ করে দিয়েছেন। তারপরও মানছেন না নিয়ম।
এদিকে পাহাড়ের বিভিন্ন আঞ্চলিক দলগুলোকে বছরব্যাপী মোটা অংকের টাকা পরিশোধ করতে হয়। না হয় বাগানে গাছ কেটে ফেলাসহ আগুন পর্যন্ত ধরিয়ে দেয়। এছাড়াও পথে পথে পুলিশকে টাকা দিতে হয় বলে অভিযোগ করেন চাষিরা।
ফলজ বাগান সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক সামির হোসেন সুজন বলেন, বাগানের আম ভাঙার থেকে ক্রেতার কাছে পৌঁছানো পর্যন্ত চাঁদা দিতে দিতে অর্ধেক লাভ চলে যায়। পথে পথে একেক টোলের অধিক টাকা দিতে দিতে আমরা শেষ হয়ে যাচ্ছি। কোনোভাবে এর প্রতিকার পাচ্ছি না। এভাবে চলতে থাকলে তো সম্ভাবনাময় এই খাত মুখ থুবড়ে পড়বে।
রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে চট্টগ্রামে পণ্য পরিবহনে যেখানে ট্রাক প্রতি ২৫০০ টাকা খরচ হয়। সেখানে খাগড়াছড়ি থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত এক ট্রাক পণ্য পরিবহনে খরচ হয় ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকা।
একটি সূত্র জানায়, জেলার গুরুত্বপূর্ণ রামগড়ের সোনাইপুল টোল কেন্দ্রের ইজারাদার হলেন খাগড়াছড়ি পৌরসভার সাবেক মেয়র রফিকুল আলম। যদিও এখন সেটির নিয়ন্ত্রণে সরকারি দলের জনপ্রতিনিধিসহ শক্তিশালী একটি সিন্ডিকেট। এ কারণে অতিরিক্ত টোল আদায় করলেও কেউ প্রতিবাদ করার সাহস করেন না।
এদিকে নতুন করে সোনাইপুল টোলের ইজারা হলেও একই সিন্ডিকেট তা পরিচালনা করবে বলে একটি সূত্র জানিয়েছে।
নাম প্রকাশে এক বাগান মালিক বলেন, দীর্ঘ বছর ধরে একটি সিন্ডিকেট সোনাইপুল টোল পরিচালনা করে আসছে। কোনো রশিদ ছাড়া তাদের ইচ্ছেমত টোল আদায় করে থাকে। সিন্ডিকেট চক্রের গডফাদারের নির্দেশে ইচ্ছেমত টোল কেন্দ্রটি চলে আসছে।
এদিকে গত ২৪ জুন খাগড়াছড়িতে উৎপাদিত আমসহ বিভিন্ন ফল পরিবহনের ওপর তিন সরকারি প্রতিষ্ঠানের অযোক্তিক টোল ও এসএ পরিবহনের মাত্রাতিরিক্ত চার্জ বন্ধ করার দাবিতে মানববন্ধন করেছেন স্থানীয় বাগান মালিকরা। তারা প্রশাসনের সু-দৃষ্টি কামনা করেছেন।
বাংলাদেশ সময়: ১০১৩ ঘণ্টা, জুন ২৯, ২০২১
এডি/এএটি