ঢাকা: ডাইসোডিয়াম সালফেট (শিল্প লবণ) আমদানির বাড়তি শুল্ক আরোপ করা হলে বহুল ব্যবহৃত নিত্যপণ্য ডিটারজেন্টের অস্বাভাবিক দাম বাড়বে। চাপ পড়বে ভোক্তার ওপর।
দাম কম হওয়ায় খাওয়ার লবণের সঙ্গে মিশিয়ে ডিটারজেন্ট তৈরির অন্যতম কাঁচামাল শিল্প লবণ বাজারজাত করছে এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী। বিষয়টি সরকারের দৃষ্টিগোচর হওয়ায় আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ডাইসোডিয়াম সালফেটের আমদানি শুল্ক বর্তমানের চেয়ে তিনগুণ বাড়ানো হয়েছে।
ফলে অতিরিক্ত শুল্কের চাপ পড়েছে এ পরিষ্কারক পণ্যের কাঁচামালে, যা সাধারণ মানুষের ডিটারজেন্ট কেনার খরচ বাড়াবে। শুল্ক প্রত্যাহার ও অবৈধ ব্যবহার বন্ধে তদারকি জোরদার করার দাবি জানিয়েছে ডিটারজেন্ট উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলো।
ডিটারজেন্ট উৎপাদকরা বলছেন, বর্তমানে অনেক পণ্য আমদানির আগে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ বা দপ্তর থেকে অনুমোদন নিতে হয়। আমদানিকারক কী কাজে কত পরিমাণ আমদানি করতে চান, তা উল্লেখ করে আমদানির আবেদন করেন। সংশ্নিষ্ট কর্তৃপক্ষ আবেদন যাচাই-বাছাই করে অনুমোদন করে থাকে। এমনকি খাওয়ার লবণ আমদানির আগে আবেদন করে অনুমোদন নেওয়ার নিয়ম চালু রয়েছে। ফলে ডাইসোডিয়াম সালফেটের যথার্থ ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য শুল্ক বাড়ানোর পরিবর্তে আমদানির আগে অনুমোদন নেওয়ার বিধান চালু করা যেতে পারে। কিন্তু শুল্ক বাড়ালে পণ্যমূল্য বাড়বে, যা কোটি কোটি গ্রাহকের খরচ বাড়িয়ে দেবে। করোনা মহামারির মধ্যে এমন একটি নিত্যপণ্যে সাধারণ মানুষের খরচ বাড়াবে। স্থানীয় শিল্পের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা কমে যাবে। অন্যদিকে করোনার সময়ে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার ওপর জোর দিচ্ছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু ডিটারজেন্টের মতো পরিষ্কারকের দাম বেড়ে গেলে জীবাণুমুক্ত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন কাপড়-চোপড় পরা দরিদ্রদের জন্য চ্যালেঞ্জ হতে পারে।
ডাইসোডিয়াম সালফেট আমদানিতে বর্তমানে ১৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক রয়েছে। আগামী অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাবে এ হার বাড়িয়ে ২৫ শতাংশ করা হয়েছে। নতুন করে ২০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক ও ৩ শতাংশ রেগুলেটরি ডিউটি আরোপ করা হয়েছে। সব মিলিয়ে আমদানিতে কার্যকর শুল্ক দাঁড়িয়েছে ৫৪ শতাংশ। এতে প্রতিকেজি আমদানিতে বাড়তি খরচ প্রায় ৩০ শতাংশ। ডিটারজেন্ট উৎপাদনে ২০ থেকে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত ডাইসোডিয়াম সালফেট ব্যবহার করা হয়ে থাকে। ফলে প্রতিকেজি ডিটারজেন্টের দাম ন্যূনতম ৭ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে জানা গেছে, শিল্প লবণ ডাইসোডিয়াম সালফেট দেখতে প্রায় খাওয়ার লবণের মতো। কম শুল্ক থাকার কারণে এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী শিল্পে ব্যবহারের কথা বলে এ লবণ আমদানি করে খাওয়ার লবণের সঙ্গে মিশিয়ে বাজারজাত করছে। খোলা অবস্থায় বাজারে সাধারণ খাওয়ার লবণ ২২ থেকে ২৩ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়। আর প্রতিকেজি ডাইসোডিয়াম সালফেট আমদানিতে খরচ পড়ে এর থেকে ৩০ শতাংশ কম। এটা যেমন শুল্ক ফাঁকি, তেমনি স্বাস্থ্যের জন্যও ঝুঁকিপূর্ণ। এজন্য এর শুল্ক হার বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।
রিন পাউডার, হুইল, ঘড়ি, ফাস্ট ওয়াশ, সার্ফ এক্সেল, চাকা, ইউনিওয়াশ, কেয়া, কেয়া হোয়াইট প্লাসসহ বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ডিটারজেন্টের বছরে দুই লাখ ৮০ হাজার মেট্রিক টনের চাহিদা রয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৫৭ ঘণ্টা, জুন ২৯, ২০২১
এসই/আরবি