ঢাকা: ই-কমার্সে লেনদেন ও কেনাকাটা সহজ করতে ডিজিটাল কমার্স পরিচালনা নির্দেশিকা-২০২১’ এর খসড়া প্রণয়ন করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। সেই খসড়ায় এসক্রো সেবার উল্লেখ রয়েছে।
জানা যায়, এসক্রো এমন একটি সেবা যেখানে একজন ক্রেতা পণ্য ক্রয়ের সময় যে মূল্য পরিশোধ করেন তা একটি তৃতীয় পক্ষের কাছে জমা থাকে। ক্রেতা তার কাঙ্ক্ষিত পণ্য বা সেবা বুঝে পেয়েছেন এমন নিশ্চয়তা দেওয়া পর সেই তৃতীয় পক্ষ বিক্রেতাকে মূল্য পরিশোধ করেন।
সম্প্রতি ই-কমার্স নীতিমালা নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক তৈরি হলে আলোচনায় উঠে আসে এসক্রো সেবা। সর্বশেষ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক বৈঠকে ই-কমার্সের ক্ষেত্রে এ সেবা চালু করা হবে বলে জানানো হয়।
বুধবার (৩০ জুন) বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে আরও একটি সভা আয়োজন করতে যাচ্ছে। আর এই সভাতেই পাঁচটি প্রস্তাবণা তুলে ধরবে বেসিস।
বেসিস সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবীর বাংলানিউজকে বলেন, বিশ্বব্যাপী এসক্রো কখনও বাধ্যতামূলক পরিষেবা হিসেবে গণ্য করা হয় না। এটি গ্রাহকদের জন্য একটি বিকল্প পন্থা। ডিজিটাল কমার্সে লেনদেনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক অনুমোদিত এসক্রো সেবা সম্পর্কে বেসিসের পক্ষ থেকে আমি কিছু প্রস্তাবণা দিয়েছি। ফাস্ট কমার্স, যেমন রাইড শেয়ারিং, ফুড ডেলিভারি, গ্রোসারি ডেলিভারি, মোবাইল রিচার্জ, সার্ভিস ডেলিভারি বা ইউটিলিটি, অ্যাডুকেশন ফি, টিকিটিং (বাস, এয়ার, ট্রেন, লঞ্চ) বা হোটেল বুকিংয়ের সাইটগুলোর জন্য এসক্রো বাধ্যতামূলক হওয়া উচিত নয় বলে আমরা মনে করি।
অন্যান্য প্রস্তাবণাগুলো নিয়ে বেসিস সভাপতি বলেন, এই অন্তর্বর্তীকালীন ম্যানুয়াল এসক্রো উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ ই-কমার্স ব্যবসায়ীদের জন্য প্রযোজ্য হতে পারে যা বাংলাদেশ ব্যাংক, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় উল্লেখ করেছে এবং বেশিরভাগ ব্যাংক ‘ফ্ল্যাগ অফ’ (সাময়িকভাবে লেনদেন বন্ধ রাখা) করেছে। অ্যাকুয়রিং ব্যাংকগুলো এ উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ ই-কমার্স ব্যবসায়ীদের পৃথকভাবে শনাক্ত এবং নজরদারির অধীনে রাখতে পারে। আমাদের তৃতীয় প্রস্তাবনা হচ্ছে যে, শুধু ১৫ হাজার টাকার ওপরে যে কোনো লেনদেন এই এসক্রো ব্যবস্থার আওতায় আসা উচিত।
সৈয়দ আলমাস কবীর আরও বলেন, চতুর্থ হচ্ছে সেটেলমেন্ট প্রক্রিয়া। সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটি অটোমেশনে যাওয়ার পূর্বে ক্রেতারা তাদের ডেলিভারি কনফার্মেশন মার্চেন্টদের দেওয়ার পরই মার্চেন্টরা এই অর্থ অ্যাকুয়ারার্স বা অ্যাগ্রিগেটরসের কাছে দাবি করতে পারবে। তবে সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটি অটোমেশনের আওতায় এলে ক্রেতারা তাদের ডেলিভারি কনফার্মেশন মার্চেন্টদের পাশাপাশি সরাসরি অ্যাকুয়ারার্স বা অ্যাগ্রিগেটরসকে অ্যাপ্লিকেশন প্রোগ্রাম ইন্টারফেসের (এপিআই) মাধ্যমে অবহিত করতে পারবে। অ্যাকুয়ারার্স বা অ্যাগ্রিগেটররা এই বিক্রেতাদের কাছ থেকে দাবি পাওয়ার পরে তহবিল নিষ্পত্তি করবে এবং ডেলিভারি কোম্পানির সঙ্গে তা যাচাই করবে। যদি অ্যাকুয়ারার্স বা অ্যাগ্রিগেটরস ডেলিভারির ক্ষেত্রে কোনো অসঙ্গতি খুঁজে পান, তারা এই বিক্রেতাদের একটি সতর্কতামূলক নোট পাটাবেন এবং ব্যাখ্যা জিজ্ঞাসা করবেন। যদি তারা যথাযথ স্পষ্টতা না পান, তবে অ্যাকুয়ারার্স বা অ্যাগ্রিগেটরস রা এই মার্চেন্টদের গেটওয়ে পরিষেবা স্থগিত করতে পারবেন। আর সবশেষে এই অন্তর্বর্তীকালীন এবং পরবর্তীকালে স্বয়ংক্রিয় এসক্রো সার্ভিস কার্ড, মোবাইল ফিনান্সিয়াল সার্ভিসেস এবং সম্ভাব্য ক্ষেত্রবিশেষে ব্যাংক অ্যাকাউন্টগুলোর জন্যও প্রযোজ্য হবে।
আলমাস কবীর বলেন, বর্তমানে করোনা পরিস্থিতিতে মানুষ এখন সশরীরে কেনাকাটার চাইতে অনলাইনে এবং নগদ টাকা লেনদেনের পরিবর্তে ক্রেডিট বা ডেবিট কার্ডে এবং মোবাইল ফিনান্সিয়াল সার্ভিসে (এমএফএস) অর্থ পরিশোধে অভ্যস্ত হয়ে উঠছে। ই-কমার্স সাইটের মাধ্যমে এবং বিভিন্ন পণ্য বা সেবা ক্রয়ে ক্রেডিট বা ডেবিট কার্ড এবং মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস (এমএফএস) ব্যবহার বেড়েই চলেছে। এমতাবস্থায় ডিজিটাল কমার্সে লেনদেনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক অনুমোদিত ‘এসক্রো সার্ভিস’ প্রসঙ্গে বেসিসের প্রস্তাবনা গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করার জন্য আমরা সরকারের কাছে অনুরোধ করছি।
এদিকে, ই-কমার্সে কেনাকাটার ক্ষেত্রে গ্রাহক, বিক্রেতা এবং মার্কেটপ্লেসগুলোর মধ্যে সমন্বয় আনতে স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর বা স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর (এসওপি) প্রণয়ন করা হবে বলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) সেল থেকে জানানো হয়। এ লক্ষ্যে বুধবার (৩০ জুন) বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বেসিস, ই-ক্যাবসহ সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোকে নিয়ে আবারও বৈঠকে বসতে যাচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ২২৫০ ঘণ্টা, জুন ২৯, ২০২১
এসএইচএস/এসআরএস