ঢাকা, বুধবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

টাইলস বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ৩৯ কোটি টাকার ভ্যাট ফাঁকির মামলা

নিউজ ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩০১ ঘণ্টা, জুলাই ৬, ২০২১
টাইলস বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ৩৯ কোটি টাকার ভ্যাট ফাঁকির মামলা

একটি টাইলস বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে তদন্ত করে প্রায় ৩৯ কোটি টাকার ভ্যাট ফাঁকির প্রমাণ পেয়েছে ভ্যাট গোয়েন্দা অধিদপ্তর। প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে ভ্যাট আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে।

মোহাম্মদ ট্রেডিং নামের ওই প্রতিষ্ঠানের ঠিকানা আরএকে টাওয়ার (৭ম তলা), প্লট -১/এ, জসিমউদ্দীন এভিনিউ, সেক্টর-৩, উত্তরা, ঢাকা-১২৩০ (মূসক নিবন্ধন নং: ০০১০৭৩৩৩৭-০১০২)।  

প্রতিষ্ঠানটি আরএকে সিরামিকস ও স্টার সিরামিকের কাছ থেকে বিভিন্ন সাইজের টাইলস এবং স্যানিটারি পণ্য কিনে তা স্থানীয় বাজারে সরবরাহ করে থাকে।

প্রতিষ্ঠানটি তাদের ভ্যাটযোগ্য সেবার বিপরীতে প্রযোজ্য রাজস্ব যথাযথভাবে সরকারি কোষাগারে জমা না দিয়ে ও বিক্রয় তথ্য গোপন করে ঘোষণা বহির্ভূত স্থানে মূসক সংক্রান্ত দলিলাদি সংরক্ষণ করে ভ্যাট ফাঁকি দিচ্ছে, এমন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ভ্যাট গোয়েন্দার একটি দল গত ৩ অক্টোবর প্রতিষ্ঠানটির নিবন্ধন বর্হিভূত স্থানে (নর্দান পল্লী ৮৯, গাউসুল আজম এভিনিউ সেক্টর #১৪, উত্তরা, ঢাকা) আকস্মিক অভিযান পরিচালনা করে। এতে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়। এতে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানটির ভ্যাট সংক্রান্ত মূল দলিলপত্র ধ্বংস করার জন্য ঐ স্থানে স্তূপ করা হয়েছিল। অভিযানে জানা যায়, ভ্যাট গোয়েন্দাদের নজর এড়াতে প্রতিষ্ঠানের প্রধান কার্যালয় থেকে এগুলো গোপনে ধ্বংস করার জন্য সরিয়ে ফেলা হয়েছিল।  

গোয়েন্দা দল তাৎক্ষণিকভাবে প্রতিষ্ঠানটির প্রধান কার্যালয় আরএকে টাওয়ার (৭ম তলা), প্লট -১/এ, জসিমউদ্দীন এভিনিউ, সেক্টর-৩, উত্তরা, ঢাকা-১২৩০ এ একইসাথে অভিযান পরিচালনা করে।

সংস্থাটির  উপপরিচালক তানভীর আহমেদ অভিযানটিতে নেতৃত্ব দেন।  

প্রতিষ্ঠানটির প্রধান কার্যালয়ে অভিযানকালে দেখা যায়, এটি নিবন্ধনের ঘোষণা বহির্ভূত স্থান। অভিযানের পর উক্ত কার্যালয়ের কর্মকর্তাগণ তাদের প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়ার চেষ্টা করেন। পরে ঘটনাস্থলে মালিক পক্ষকে অনুরোধ করলে তারা প্রতিষ্ঠান খুলে গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের সহযোগিতা করেন।  

এসময় অভিযানে অংশ নেওয়া কর্মকর্তাদের চাহিদা মোতাবেক প্রতিষ্ঠানের উপস্থিত কর্মকর্তারা ভ্যাট সংক্রান্ত নথিপত্র প্রদর্শন করেন। একইসঙ্গে প্রতিষ্ঠানে ব্যবহৃত কম্পিউটারসহ অন্যান্য বাণিজ্যিক দলিলাদি তল্লাশি করা হয়। এর সূত্র ধরে পরবর্তীতে মূসক সংক্রান্ত সকল দলিলাদি জব্দ করা হয়।

তদন্তকালে প্রতিষ্ঠানের বার্ষিক অডিট প্রতিবেদন, দাখিলপত্র (মূসক-১৯) এবং বিভিন্ন সময়ে প্রতিষ্ঠান কর্তৃক জমাকৃত ট্রেজারি চালানের কপি ও অন্যান্য দলিলাদি হতে প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত আড়াআড়ি যাচাই করে তদন্ত প্রতিবেদন প্রস্তুত করা হয়। তদন্তের মেয়াদ ছিল জানুয়ারি ২০১৮ থেকে এপ্রিল ২০১৯ পর্যন্ত।

প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ প্রকৃত বিক্রয় মূল্যের বিপরীতে ব্যবসায়ী পর্যায়ে ভ্যাট প্রদান না করে শুধুমাত্র বিক্রয়কৃত পণ্যের মূল্যের বিপরীতে প্রাপ্ত কমিশনের উপর ব্যবসায়ী পর্যায়ে মূসক প্রদান করেছেন। কিন্তু জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের এস আর ও নং ১২৪-আইন/২০১৫/৭৩০- মূসক, তারিখ: ০৪ জুন ২০১৫ এবং এস এর ও নং ১৭৪ আইন/২০১৮/৭৯৭ মূসক, তারিখঃ ০৭ জুন ২০১৮ অনুযায়ী ব্যবসায়ী পর্যায়ে প্রকৃত সরবরাহ মূল্যের বিপরীতে ৪% ও ৫% হারে মূসক প্রদানের আইনী বাধ্যবাধকতা থাকলেও প্রতিষ্ঠানটি প্রকৃত সরবরাহ মূল্য প্রদর্শন না করে কমিশনকে বিক্রয় মূল্য হিসেবে প্রদর্শন করে তার বিপরীতে মূসক পরিশোধ করেছে।  

প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ ব্যবসায়ী পর্যায়ে মূসক পরিশোধের এই আইনী বাধ্যবাধকতাকে লংঘন করেছে মর্মে তদন্তে উঠে এসেছে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী তদন্ত মেয়াদে প্রতিষ্ঠানটি দাখিলপত্রে বিক্রয় মূল্য ২১,২৪,৮৩,৯৩৮ টাকা কমিশন প্রদর্শন করেছে, যার উপর তারা ১,০০,৫৪,৬৫৫ টাকা ভ্যাট পরিশোধ করেছে।  

কিন্তু প্রতিষ্ঠানটির কমিশনসহ মোট ভ্যাটযোগ্য বিক্রয় মূল্য ছিল ৬,৩২,৩৩,০৭,৯৮২ টাকা এবং এর উপর প্রযোজ্য ভ্যাটের পরিমাণ ২৮,৩৬,৭৮,৮৭০ টাকা। এক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানটির অপরিশোধিত ভ্যাট বাবদ ২৭,৩৬,২৪,২১৫ টাকা ফাঁকি উদঘাটিত হয়। এই ফাঁকির উপর ভ্যাট আইন অনুসারে মাস ভিত্তিক ২% হারে ১১,৪৮,৪৭,৬৮২ টাকা বিলম্বজনিত সুদ হিসেবে প্রযোজ্য হবে।

অন্যদিকে, তদন্তে দেখা যায় যে, উল্লিখিত মেয়াদে প্রতিষ্ঠানটি স্থান ও স্থাপনা ভাড়ার বিপরীতে ১১,২৮,৫৭০ টাকা ভ্যাট পরিশোধ করেছে। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটির প্রদেয় ভ্যাট এর পরিমাণ ছিল ২০,৭৭,১০২ টাকা। এক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানটির অপরিশোধিত ভ্যাট বাবদ ৯,৪৮,৫৩২ টাকা ফাঁকি উৎঘাটিত হয়। এই ফাঁকির উপর ভ্যাট আইন অনুসারে মাস ভিত্তিক ২% হারে ৫,১২,৩২৫ টাকা সুদ টাকা আদায়যোগ্য হবে।  

বর্ণিত মেয়াদে প্রতিষ্ঠানটির সর্বমোট অপরিশোধিত ভ্যাটের পরিমাণ ২৭,৪৫,৭২,৭৪৭ টাকা এবং সুদ বাবদ ১১,৫৩,৬০,০০৬ টাকাসহ ৩৮,৯৯,৩২,৭৫৪ টাকা পরিহারের তথ্য উদঘাটিত হয়।

তদন্তে আরো দেখা যায় যে, প্রতিষ্ঠানটি সরকারের ভ্যাট ফাঁকির উদ্দেশ্যে মিথ্যা তথ্যসহ নানা ধরণের অনিয়মের আশ্রয় নিয়েছে, যা ভ্যাট আইন অনুসারে শাস্তিযোগ্য অপরাধ।  

সোমবার ভ্যাট আইনে এ সংক্রান্ত একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।  

তদন্তে উদ্ঘাটিত পরিহারকৃত ভ্যাট আদায়ের আইনানুগ কার্যক্রম গ্রহণের জন্য তদন্ত প্রতিবেদনটি ঢাকা উত্তর ভ্যাট কমিশনারটে প্রেরণ করা হয়েছে।

এখানে আরো উল্লেখ্য একই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ভ্যাট গোয়েন্দা ইতোপূর্বে ১২৪ কোটি টাকার ভ্যাট ফাঁকির ভিন্ন একটি মামলা দায়ের করেছিল যা বর্তমানে বিচারিক প্রক্রিয়ায় চলমান রয়েছে।  

সূত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন

বাংলাদেশ সময়: ১৩০০ ঘণ্টা, জুলাই ০৬, ২০২১
নিউজ ডেস্ক

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।