বরিশাল: ঘনিয়ে আসছে মুসলমানদের ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল আজহা। এরইমধ্যে বরিশাল তথা গোটা দক্ষিণাঞ্চলজুড়ে কোরবানির পশুর চাহিদা পূরণে বসেছে পশুর হাট।
যদিও স্থানীয়ভাবে পশুর উৎপাদন কম থাকায় অন্যজেলা থেকে আমদানি নির্ভর হয়েই পশুর হাটগুলো পরিচালিত হবে বলে মনে করছেন প্রাণিসম্পদ বিভাগ। যদিও প্রতিবছর কুষ্টিয়া, যশোর, ঝিনাইদহ, বাগেরহাট, গোপালগঞ্জ, মাদারীপুরসহ নির্ধারিত কিছু জেলার গরু ব্যবসায়ীদের নিয়ন্ত্রণেই থাকে বরিশালের পশুর হাটগুলো এমনটাই দাবি ইজারাদারদের।
তবে ক্রেতারা বলছেন, স্থানীয় পশুর দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে আশপাশের জেলা থেকে হাটে গরুর আমদানি করাটা যৌক্তিক। তবে বিক্রেতারা বলছেন, বাইরের জেলার নামে ভারতীয় গরু হাটে প্রবেশ করলে তাদের লোকসান ছাড়া আর কিছুই হবে না।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের বরিশাল আঞ্চলিক কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত বছর করোনাকালের শুরুতে ঈদুল আজহা অর্থাৎ কোরবানির ঈদ উদযাপিত হয়। ওই বছর বরিশাল বিভাগের ছয়টি জেলায় ৪ লাখ ৯৮ হাজার ১৭১টি পশু কোরবানি হয়। যার মধ্যে ষাঁড়/বলদ ৩ লাখ ৮ হাজার ৭৬৬টি, মহিষ এক হাজার ১০৯টি, গাভী/বকনা ২৩ হাজার ৪০১টি, ছাগল এক লাখ ৬৩ হাজার ৫২৯টি এবং ভেড়া এক হাজার ৩৬৬টি।
তবে করোনার সংক্রমণ চলমান থাকায় নানান কারণে এবারের ঈদে কোরবানির পশুর চাহিদা গত বছরের থেকে কিছু কমতে পারে। তার পরেও যে চাহিদা রয়েছে তা বরিশাল অঞ্চলের খামারিদের পক্ষে শতভাগ পূরণ করা সম্ভব হবে না।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের বরিশাল বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক ডা. মনমথ কুমার সাহা বলেন, এ বছর দক্ষিণাঞ্চলের খামারগুলোতে পশুর উৎপাদন কিছুটা কম। তবে গত বছর যেসব পশু বিক্রি হয়নি সেগুলো এবার পুনরায় হাটে তোলা হবে।
তিনি জানান, বরিশাল বিভাগে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তালিকাভুক্ত ২০ হাজার ৩৮৭ জন খামারি রয়েছেন। করোনাকালিন যাদের চাষাবাদের জন্য সরকারিভাবে প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে। ওইসব খামারে ১৫ জুলাই পর্যন্ত (নিরাপদ গবাদি পশুর মাংস উৎপাদনে) ১ লাখ ৩৮ হাজার ৩৭৪টি গবাদি পশুর হৃষ্ট-পুষ্ট (মোটা-তাজা) করা হয়েছে।
হৃষ্ট-পুষ্টকরণ গবাদি পশুর মধ্যে ৭৪ হাজার ৪০৩টি ষাঁড়, ১৮ হাজার ৩টি বদল, ১৩ হাজার ৪২৪টি গাভী, ৩ হাজার ১৮০টি মহিষ, ২৭ হাজার ৮৪০টি ছাগল, এক হাজার ৫০৬টি ভেড়া এবং ১৮টি অন্যান্য গবাদি পশু রয়েছে।
তবে এর মধ্যে কোরবানিতে জবাই করার জন্য ১ লাখ ২৪ হাজার ৯৩২টি ষাঁড়/বলদ, মহিষ, ছাগল এবং ভেড়া উপযুক্ত পশু হিসেবে দেখা হচ্ছে। কেননা যে ১৩ হাজার ৪২৪টি গাভী রয়েছে সেগুলো খামারে মোটাতাজা করা হলেও তা দুগ্ধ উৎপাদনের জন্য উপযুক্ত বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
প্রাণিসম্পদ দপ্তর জানিয়েছে, বরিশাল অঞ্চলের খামারে যে গবাদি পশু উৎপাদন হয়েছে তার মধ্যে বরিশাল জেলায় ৪৬ হাজার ৬১৯টি, পিরোজপুরে ১৩ হাজার ২৮৪টি, পটুয়াখালীতে ২৭ হাজার ৫০৪টি, বরগুনায় ১৭ হাজার ২০টি, ঝালকাঠিতে ১১ হাজার ৫১৯টি এবং ভোলা জেলায় ২২ হাজার ৪২৮টি।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের বরিশাল জেলা কর্মকর্তা ডা. মো. নুরুল আলম জানিয়েছেন, বরিশাল অঞ্চলে খামারগুলোতে যে পশু উৎপাদন হচ্ছে তা দিয়ে এই অঞ্চলে কোরবানির পশুর চাহিদা পূরণ করা সম্ভব নয়। এর বাইরে বরিশাল অঞ্চলে কিছু সৌখিন চাষিরা রয়েছেন, কিছু সময় আগে গরু এবং ছাগল কিনে তা কোরবানিতে বিক্রি করছে। এর পাশাপাশি গৃহস্থালির কিছু গরু রয়েছে। এরপর কিছু পশু আশপাশের জেলাসহ উত্তরাঞ্চল থেকে আসবে।
যদিও এভাবে চাহিদা পূরণের পরেও বিক্রি করতে না পেরে প্রতি বছর বরিশাল বিভাগের বিভিন্ন হাট থেকে পশু ফেরত যাচ্ছে। গত বছরেও ২৩ হাজার ৪৮৩টি গরু এবং ছাগল হাটে বিক্রি করতে পারেনি বলে ফেরত গেছে।
বাংলাদেশ সময়: ০৭ ৩০ ঘণ্টা, জুলাই ১৭, ২০২১
এমএস/আরএ