ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

ই-কমার্স ব্যবসায় নিতে হবে ইউনিক আইডেন্টিটিফিকেশন নম্বর

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮২৮ ঘণ্টা, জুলাই ১৮, ২০২১
ই-কমার্স ব্যবসায় নিতে হবে ইউনিক আইডেন্টিটিফিকেশন নম্বর বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ

ঢাকা: ই-কমার্স ও ফেসবুকে ব্যবসা করতে হলে এখন থেকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বিজনেস ইউনিক আইডেন্টিটিফিকেশন নম্বর নিতে হবে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ।

রোববার (১৮ জুলাই) সচিবালয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে ই-কমার্স স্টেক হোল্ডারদের সঙ্গে বৈঠক শেষে তিনি এ কথা জানান।

বাণিজ্য সচিব বলেন, এখন থেকে ই-কমার্সে ব্যবসা করতে গেলে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। এজন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে একটি উইং করা হবে। এছাড়া ফেসবুকে ব্যবসা নিয়ে তেমন কোনো আলোচনা হয়নি। তবে এখন থেকে সবাইকে বিজনেস ইউনিক আইডেন্টিটিফিকেশন নম্বর নিতে হবে। একটু সময় লাগবে। আমরা এক থেকে দুই মাস সময় নেবো। ব্যবসা বন্ধ হোক আমরা এটা চাই না।

তিনি বলেন, আজ ই-কমার্সে উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে আমরা একটি সভা করেছি। সেখানে কয়েকটি বিষয়ে একমত হয়েছি। গত ৪ জুলাই যে ই-কমার্স নির্দেশিকা প্রকাশ করেছি। তার আলোকে সব বিচার-বিবেচনা করে দেখবো কোন কোন কোম্পানি এই নির্দেশনা প্রতিপালন করতে ব্যর্থ হচ্ছে। যিনি ব্যর্থ হবেন তাকে প্রথমে কারণ দর্শানো হবে। তারা আমাদের বিজনেস প্ল্যান দেবেন। সেটা যদি বাংলাদেশের প্রচলিত আইনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ না হয় তখন তার কোম্পানির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব। বাংলাদেশের প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সচিব বলেন, কোনো ব্যক্তি বা ব্যবসায়ী ক্ষতিগ্রস্ত হলে প্রচলিত আইনানুগ মামলা করতে পারেন ও প্রতিকার চাইতে পারেন, সে ব্যবস্থা থাকছে। যেহেতু প্রতিদিন লাখ লাখ টাকার ট্রানজেকশন হচ্ছে, আমরা চাই কমপ্লেইনগুলো এক জায়গায় যদি রিসিভ করা যায়। সেটা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর এবং যে কমপ্লেইন অফিসার থাকবেন এবং ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ তাদের মাঝে একটা ই-কমার্স কমপ্লেইন সিস্টেম তৈরি করবো। সেটার জন্য সময় লাগবে। একই সাথে আমাদের নির্দেশিকা বা ডিজিটাল কমার্স নীতিমালাতে আরো একটু পরিবর্তন আনতে হবে। যেমন গ্রাহকের টাকা দিয়ে আবার গ্রাহককে মিটিয়ে দেওয়া বা গ্রাহকের টাকা অগ্রিম নিয়ে সে টাকা ব্যবসায় খাটিয়ে ব্যবসার উন্নয়ন করা, এটা যাতে না করতে পারে এ ধরনের পরামর্শ আমরা পেয়েছি। এর আলোকে আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি। দীর্ঘ মেয়াদে আমাদের আইনের কোথাও কোথাও সংস্কারের চেষ্টা করা হবে। ডিজিটাল কমার্সের জন্য একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ আইন প্রণয়নেরও একটি সুপারিশ আমাদের কাছে এসেছে।

রেজিস্ট্রেশন প্রসঙ্গে সচিব বলেন, ই-কমার্স বা ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে ব্যবসা করতে গেলে অবশ্যই বাধ্যতামূলক রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। সেজন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে সেস্ট্রাল রেজিস্ট্রেশনের ব্যবস্থা রাখা হবে। এখান থেকে প্রত্যেককে ইউনিক বিজনেস আইডেন্টিটিফিকেশন নম্বর নিতে হবে। এটি সহজ একটি প্রসেস হবে, অনলাইনে সবাই রেজিস্ট্রেশন করতে পারবেন। এটা যখন সম্পন্ন হবে তখন রেজিস্ট্রেশন বিহীন যে কোম্পানিগুলো ব্যবসা করবে তাদের বন্ধ করে দেয়ার জন্য আমরা বিটিআরসিকে অনুরোধ করবো।

বাণিজ্য সচিব আরও বলেন, ফেসবুকের ব্যবসা নিয়ে খুব বেশি আলোচনা হয়নি। তবে সামগ্রিকভাবে এটি যাতে সরকারি তথ্যভাণ্ডারে থাকে কে কী ব্যবসা করছেন। যারা ফেসবুকের মাধ্যমে ব্যবসা করবেন তাদেরও বিজনেস ইউনিক আইডেন্টিটিফিকেশন নম্বর নিতে হবে। সেজন্য একটু পর্যায়ক্রমে বা একটু সময় লাগবে। তারপর আমরা পত্রিকাসহ টিভিতে বিজ্ঞপ্তি দেবো। যাতে সবাই জানতে পারেন প্রত্যেকে এই নম্বর নিতে হবে বা প্রত্যেককে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে অনলাইনের মাধ্যমে। যখন এটা সবাই জানবে তখন আমরা এটি বাধ্যতামূলক করবো।

ই-কমার্সে কোন গ্রাহক যদি প্রতারিত হয় সে ক্ষেত্রে তাদের অর্থ ফেরতে কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হবে? এমন প্রশ্নের জবাবে সচিব বলেন, কোনো ব্যক্তি যদি প্রতারিত হন তাহলে তিনি প্রচলিত আইনে কোম্পানির বিরুদ্ধে মামলা করতে পারেন। সে ক্ষেত্রে আদালত ঠিক করে দেবেন তিনি কীভাবে ক্ষতিপূরণ পাবেন। আদালত থেকে একটি নির্দেশনা আসতে হবে ভোক্তাদের অর্থ কীভাবে উদ্ধার করা যাবে। কোম্পানির ব্যাংক হিসাবে যদি টাকা থাকে সেটা উদ্ধার করে ভোক্তাকে দিতে হলেও আদালতের নির্দেশনা লাগবে।

ইভ্যালি নিয়ে করা এক প্রশ্নের উত্তরে তপন কান্তি ঘোষ বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের তদন্ত দল ইভ্যালির ৬৫ কোটি টাকার সম্পদের তথ্য পেয়েছে। এর বাইরে তার সম্পদ আছে কিনা আমরা এখনো জানি না। বাইরেও সম্পদ থাকতে পারে। এ বিষয়টি আরও অধিকতর তদন্ত চলছে বাংলাদেশ ব্যাংকে। আমার মনে হয় সেই তদন্তে প্রকৃত সম্পদ কত আছে সেটা জানার পরে এটার ব্যবস্থা নেওয়া যাবে।

তপন কান্তি ঘোষ বলেন, যেসব গ্রাহক প্রতারিত হয়েছেন তারা প্রচলিত আইনের আশ্রয় নিতে পারেন। কারণ ব্যবসায়ী হোক অথবা ভোক্তা হোক তিনি যদি প্রতারিত হন দেশে কিন্তু প্রতারণার জন্য পেনাল কোড অনুযায়ী আইনগত আশ্রয় নিতে পারেন।  

সরকারের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে সচিব বলেন, আমরা দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এবং জননিরাপত্তা বিভাগকে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করেছি। আমরা জানি দুদক কিছু ব্যবস্থা নিয়েছে। জননিরাপত্তা বিভাগ কী ব্যবস্থা নিয়েছে তা আমরা জানি না।  

এ সময় ই-ক্যাবের সাধারণ সম্পাদক মো. আবদুল ওয়াহেদ তমাল বলেন, কিছু কোম্পানিকে কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠিয়েছি। আরও দশটি কোম্পানিকে কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠানো হবে, এক সপ্তাহের মধ্যে। তারা নতুন পলিসি গ্রহণ করেছে কিনা এবং কীভাবে তারা টাকা পরিশোধ করবে আমরা জানতে চেয়েছি। তাদের বিজনেস মডেল কী হবে জানতে চেয়েছি।

বাংলাদেশ সময়: ১৮২৭ ঘণ্টা, জুলাই ১৮, ২০২১/আপডেট: ১৯৫১ ঘণ্টা
জিসিজি/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।