ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

সরগরম বাগেরহাট কেবি বাজার, মাছ কম পাওয়ায় হতাশ জেলেরা

এস এস শোহান, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২০০ ঘণ্টা, জুলাই ২৫, ২০২১
সরগরম বাগেরহাট কেবি বাজার, মাছ কম পাওয়ায় হতাশ জেলেরা ঝুড়িভর্তি ইলিশ। ছবি: বাংলানিউজ

বাগেরহাট: সাগরে মাছ ধরার ৬৫ দিনের অবরোধ (নিষেধাজ্ঞা) শেষে ফের সরগরম হয়ে উঠেছে দক্ষিণাঞ্চলের বৃহত্তম সামুদ্রিক মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র বাগেরহাটের কেবি বাজার। এদিকে সাগরে মাছ কম পাওয়ায় হতাশা প্রকাশ করছেন জেলে ও ব্যবসায়ীরা।

 

অবরোধের সময় বাংলাদেশি জেলেরা সাগরে না গেলেও, ভারতীয় জেলেদের মাছ ধরা বন্ধ থাকে না। আবার বৈরি আবহাওয়ায় মাছ না ধরে ফিরে আসতে হয় জেলেদের। এর কারণে অবরোধের পরে কাঙ্ক্ষিত মাছ পাওয়া যায় না বলে দাবি করেছেন জেলেরা।
রোববার (২৫ জুলাই) ভোরে বাগেরহাট দড়াটানা নদীর তীরে শহররক্ষা বাঁধ সংলগ্ন কেবি বাজারে জেলে, পাইকার, আড়তদার ও মাছ ক্রেতাদের হাঁকডাক শোনা যায়। কেউ ট্রলার দিয়ে ঝুড়িতে করে মাছ নিয়ে আসছে। কেউ আবার পাইকার ডাকছে, কেউ মাছ ক্রয় করে ফিরছেন গন্তব্যে। বৃহত্তম এই সামুদ্রিক মাছের আড়তে ক্রেতা-বিক্রেতা ও জেলেদের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধির কোনো বালাই ছিলো না। কাক ডাকা ভোর থেকে শুরু হওয়া এই সামুদ্রিক মাছ বিক্রয় কেন্দ্রে প্রতিদিন কোটি টাকার মাছ বিক্রি হয়। এর মধ্যে সব থেকে বেশি বেচা-কেনা হয় ইলিশের। ইলিশের পাশাপাশি কাউয়া, চেলা, ঢেলা, লইট্টা, ভোল, কঙ্কন, কইয়া ভোল, জাবা ভোল, মোচন গাগড়া, মেইদ, টেংড়া, রুপচাঁদা, বোতলসহ প্রায় ৫০ প্রজাতির মাছ বিক্রি হয় এখানে। সাগর থেকে আহরিত কেজি কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে এক হাজার থেকে এক হাজার একশ টাকা করে। পাঁচশ গ্রাম ওজনের প্রতিকেজি ইলিশ বিক্রি হচ্ছে পাঁচশ টাকা দরে। ৪ থেকে ৬টায় কেজি মাছ বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৪৫০ টাকা কেজি দরে। তবে সরাসরি সাগর থেকে আহরিত মাছের পাশাপাশি বিদেশি হিমায়িত মাছও বিক্রি হয় এই হাটে। যার ফলে দেশীয় সামুদ্রিক মাছের কাঙ্ক্ষিত দাম পায়না বলে দাবি জেলেদের। সাগর থেকে মাছ ধরে কেবি বাজারে বিক্রি করতে আসা জেলে কবির হোসেন বলেন, অবরোধের সময় বাংলাদেশি জেলেরা সাগরে মাছ ধরে না। কিন্তু ভারতীয় বড় বড় ফিসিং ট্রলারগুলো কিন্তু নিয়মিত মাছ ধরে থাকে এই সময়ে। যার ফলে দীর্ঘদিন মাছ আহরণ বন্ধ থাকলেও সেই সুবিধা আমরা পাই না। এবার অবরোধের পরে সাগরে গিয়ে তেমন মাছ পাইনি আমরা।

জেলে মো. শুকুর তালুকদার বলেন, সরকারের অবরোধকে আমরা সমর্থন করি। কিন্তু এই অবরোধের সময় ভারতীয়রা এসে জাল দিয়ে বাংলাদেশি সীমানার মাছ ধরে নিয়ে যায়। তাদেরকে আমরা কিছু বলতে পারি না। যখন অবরোধে থাকে না, তখনও ভারতীয় জেলেদের তাণ্ডব থাকে আমাদের সীমানায়।  ভারতীয় জেলেদের তাণ্ডব বন্ধে বাংলাদেশি সমুদ্র সীমায় নৌবাহিনীর টহল বাড়ানো দাবি জানান ওই জেলে।
এবাদুল নামে আরেক জেলে বলেন, অবরোধের পর সাগরে যেয়ে তেমন মাছ পাইনি। যে মাছ পাইছি, তাতে হয়তো খরচটা উঠবে। আর লকডাউনের কারণে মাছের দামও ভালো না।

কেবি বাজারে শ্রমিকের কাজ করা সুশান্ত-মনিরুল বলেন, ট্রলার থেকে মাছ ওঠানো, বাছাইসহ বিভিন্ন কাজ করে আমরা খাই। কিন্তু অবরোধ, মাছ ও দাম কমসহ বিভিন্ন কারণে আমদের আয় দিন দিন কমছে। এভাবে চলতে থাকলে কেবি বাজারের কাজ বন্ধ করা ছাড়া উপায় থাকবে না। বাগেরহাট উপকূলীয় মৎস্যজীবী সমিতির সভাপতি শেখ ইদ্রিস আলী বলেন, সামুদ্রিক মাছ আহরণ ও বিক্রির সাথে বাগেরহাটের লক্ষাধিক মানুষ জড়িত। এবার অরোধের পরে জেলেরা সমুদ্রে তেমন মাছ পায়নি। আবার বৈরি আবহাওয়ার কারণে অনেকের ফিরে আসতে হয়েছে। বেশিরবাগ ট্রলার মালিককে এই দফায় লোকসান গুনতে হবে বলে দাবি করেন মৎস্য জীবী সমিতির এই নেতা।

বাংলাদেশ সময়: ১১০৫ ঘণ্টা, জুলাই ২৫, ২০২১
এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।