হবিগঞ্জ: হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলায় লকডাউনের কারণে দুধের দাম কম ও গরুর খাবারের মূল্য বেড়ে যাওয়ায় লোকসানে পড়ছেন উদ্যোক্তারা। এ কারণে দীর্ঘ হচ্ছে তাদের ঋণের তালিকা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মাধবপুরে ১২টি নিবন্ধিত গরুর খামার রয়েছে। নিবন্ধনের বাইরেও ছোট-বড় খামারের সংখ্যা প্রায় ২শ। মিষ্টির দোকানে তারা দুধ সরবরাহ করে থাকেন। কিন্তু লকডাউনে জেলাজুড়ে মিষ্টির দোকানগুলো বন্ধ থাকায় কেউ খামারের দুধ নিচ্ছে না। তাই অনেকে বাড়ি বাড়ি গিয়ে অল্প মূল্যে দুধ বিক্রি করছেন।
উপজেলার আন্দিউড়া গ্রামের পিওর অ্যান্ড অর্গানিক ডেইরি ফার্মের মালিক মোত্তাকিন চৌধুরী বলেন, চাকরি ছেড়ে গ্রামে গরুর খামার করে উদ্যোক্তা হয়েছিলাম। আমার এখানে কর্মসংস্থান হয়েছে আরও ২০ জন বেকার তরুণের। প্রতি মাসে খামারের আয় ছিল লাখ টাকা। কিন্তু এখন গুণতে হচ্ছে লোকসান। কঠোর লকডাউনে মিষ্টির দোকান বন্ধ। চলে না যানবাহনও। এজন্য দুধ বিক্রি করা যাচ্ছে না।
মোত্তাকিন চৌধুরী আরও বলেন, সড়কে যানবাহন বের হলে প্রশাসনের বাধার মুখে পড়তে হয়। এ অবস্থায় প্রতিদিন তার খামারের প্রায় ৪শ’ লিটার দুধ গ্রামে গ্রামে হেঁটে বিক্রি করতে হচ্ছে। দাম বেড়েছে গো খাদ্যের, তাই তাদের লোকসান গুণতে হচ্ছে। প্রতি মাসেই ঋণের পরিমাণ বাড়ছে।
দুর্গাপুর গ্রামের জগন্নাথ ডেইরি ফার্মের স্বত্ত্বাধিকারী কৃপা কান্ত সরকার বলেন, গো খাদ্যের দাম এখন বেশি। দুধ বিক্রি করতে না পারলে খাদ্য কেনা মুশকিল। আগে দুধ বিক্রি হতো ৫০ থেকে ৬০ টাকা লিটার। কিন্তু এখন বাড়ি বাড়ি হেঁটে ১৫-২০ টাকা দরে দুধ বিক্রি করতে হচ্ছে।
কড়রা গ্রামের এনআর এগ্রো ফার্মের স্বত্ত্বাধিকারী এএসএম রাব্বি বলেন, কঠোর লকডাউনে দুধ বিক্রি প্রায় বন্ধ। আশপাশের মানুষকে বিনা মূল্যে দুধ দিয়ে দিতে হচ্ছে। গো খাদ্য কেনা, বিদ্যুৎ বিল, শ্রমিকের মজুরিসহ নানা খরচের বিপরীতে ন্যায্য মূলে বিক্রি হচ্ছে না দুধ। তার খামারে প্রতিদিন ৯৪টি গরুর খাদ্য প্রয়োজন। আগের মতো দুধ বিক্রি করতে না পারলে ঋণের বোঝা বড় হবে বলেও তিনি জানিয়েছেন।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ মিলন মিয়া বলেন, খামারিরা আগে মিষ্টির দোকানে দুধ বিক্রি করতেন। এখন তা পারছেন না। তবে প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে একটি নির্দেশনা এসেছে। লকডাউনে মৎস্য ও প্রাণিজাত খাদ্য এবং এ খাতে উৎপাদনে ব্যবহৃত সামগ্রী পরিবহন সরবরাহ এবং বিপণন অব্যাহত থাকবে। নির্দেশনা মোতাবেক মিষ্টির দোকান খোলা থাকতে পারে। আমি দোকানগুলোকে চিঠি দিয়েছি। এছাড়া খামারিদের প্রণোদনা দেওয়ার বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানিয়েছি।
বাংলাদেশ সময়: ০৯০২ ঘণ্টা, আগস্ট ০৭, ২০২১
আরএ