ঢাকা: আন্তর্জাতিক বাজারে চিনির দাম বেড়ে যাওয়ায় স্থানীয় বাজারেও খুচরা মূল্য আপাতত ৭৫ থেকে ৮০ টাকা রাখার সুপারিশ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্যসচিব তপন কান্তি ঘোষ।
বুধবার (২৫ আগস্ট) দুপুরে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলনকক্ষে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মজুদ, সরবরাহ, আমদানি, মূল্য পরিস্থিতি স্বাভাবিক ও স্থিতিশীল রাখাতে স্টেকহোল্ডার, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এ কথা জানান তিনি।
বৈঠক শেষে বাণিজ্য সচিব বলেন, আমরা ব্যবসায়ীদের নিয়ে বাজার পরিস্থিতি পর্যালোচনা করেছি। এটি ছিল বছরের প্রথম বৈঠক, তাই ওইভাবে কোনো সিদ্ধান্তের কথা বলা যাচ্ছে না। তবে, আমরা ব্যবসায়ীদের নিয়ম-নীতি মেনে ব্যবসা করার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছি। ওনারাও আমাদের কাছে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
আন্তর্জাতিক বাজারমূল্য বেড়ে যাওয়ার কারণে চিনি ও ভোজ্যতেলের দাম বেড়ে যাচ্ছে। বৈঠকে চিনির দাম প্রতি কেজি ৭৫ থেকে ৮০ টাকার সুপারিশ করা হয়েছে। টিসিবির মাধ্যমে আমরা ৫৫ টাকা কেজি দরে চিনি দিচ্ছি-যোগ করেন তিনি।
বাণিজ্য সচিব বলেন, আমাদের সরবরাহে কোনো ঘাটতি নেই, যথেষ্ট আছে। কোন কোন ক্ষেত্রে আমাদের যে বার্ষিক চাহিদা তার থেকেও বেশি সরবরাহ আছে। কিন্তু যেহেতু অনেকগুলো পণ্য আমদানি নির্ভর, তাই আমদানি মূল্য বৃদ্ধিকে কাজে লাগিয়ে যেন স্থানীয়ভাবে মূল্য বৃদ্ধি ও মজুদ করা না হয় সে উদ্দেশ্যে আজকে আমরা ব্যবসাযী নেতাদেরকে ডেকেছি। সবখাতের ব্যবসায়ীরা এখানে এসেছেন। তারা আজকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, আমদানি মূল্য যেটা বাড়বে সেই অনুযায়ী হিসাব করে যতটুকু বৃদ্ধি অভ্যন্তরীণ বাজারে হওয়া উচিত সেটুকুই তারা করবেন।
তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বৃদ্ধির সুযোগ নিয়ে কেউ যদি অন্যায়ভাবে দাম বাড়িয়ে ভোক্তাদের কষ্ট দেন বা অতি মুনাফা করেন, মজুদ করে রাখেন সেক্ষেত্রে আমাদের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী, মোবাইল কোর্ট, ভোক্তা অধিকার প্রতিযোগিতা কমিশনসহ যারা আছেন তারাও সর্বত্র সতর্ক থাকবেন। এই কোভিডকালীন সময়ে মানুষকে প্রশান্তির জন্য যা যা করা দরকার সে ব্যবস্থা নেবেন। সরকার এবং ব্যবসায়ীদের সমন্বয় আমরা যদি সাপ্লাই চেইন ঠিক রাখতে পারি তাহলে আমাদের যেহেতু সরবরাহে ঘাটতি নেই, প্রয়োজনের তুলনায় বেশি আছে তাই দ্রব্যমুল্য অবশ্যই স্থিতিশীল থাকবে।
দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে টিসিবির তৎপরতা আরও জোরদার করা হবে উল্লেখ করে সচিব বলেন, আমরা জেলা ও উপজেলা কমিটির ক্ষেত্র বিস্তৃত করব। প্রান্তিক জনগোষ্ঠী বা স্বল্প আয়ের মানুষদের কষ্ট লাঘবে আমরা টিসিবির অপারেশন গত বছরের তুলনায় আড়াই গুণ বাড়িয়েছি। টিসিবি আরও কয়েকটি পণ্য বিক্রয় করছে এবং আগামী মাস থেকে পেঁয়াজসহ আরও পণ্য বিক্রি শুরু করবে।
তিনি বলেন, চালের বিষয়টি খাদ্য মন্ত্রণালয় দেখছেন। ইতোমধ্যে চাল আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়েছে। ২৫ শতাংশ শুল্ক কমানো হয়েছে। সাত লাখ টনের বেশি আমরা অনুমতি দিয়েছি, আশা করি চালের বাজারে দাম কমে আসবে। ভোজ্য তেল এবং চিনির বিষয়ে আলোচনা করেছি। এই দুটি পণ্যের দাম বেড়েছে, বাকিগুলোর কমেছে। যেহেতু আন্তর্জাতিক বাজারে চিনির দাম বেড়েছে, এখানেও সেটার প্রতিফলন হবে, তবে সেটা বাজারের নিয়মেই হবে। তার বেশি যাতে না হয় ব্যবসায়ীরা সেই প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
এ বিষয়ে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, আগামী দুই-এক দিনের মধ্যেই বেসরকারিভাবে আমদানি করা চাল দেশে প্রবেশ করবে। ইতোমধ্যেই চালের দাম পড়তে শুরু করেছে। প্রায় সাত লাখ টন চাল আমদানি হচ্ছে।
গত মে মাসের সর্বশেষ ঘোষণা অনুযায়ী, প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেল ১২৯ টাকা, বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৫৩ টাকা, পাম সুপার তেল ১১২ টাকা এবং ৫ লিটার সয়াবিন তেলের বোতল ৭২৮ টাকা নির্ধারণ করা হয়।
এদিকে আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁচামালের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে দেশের বাজারে চিনির দাম বাড়ছে। গত এক মাসে খুচরায় চিনির দাম অন্তত ১২ শতাংশ বেড়ে ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এ বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আমদানি ও অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য (আইআইটি) অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব এএইচএম সফিকুজ্জামান বলেন, ভোজ্যতেলের দাম আগে যেটা নির্ধারণ করা হয়েছিল সেটাই থাকবে। আগস্ট মাস শোকের মাস বিবেচনায় এ মাসেই নতুন করে দাম বাড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়ালেও সেটা পরে বিবেচনা করা হবে। এছাড়া চিনির খুচরা মূল্য আপাতত ৭৫ টাকা থেকে ৮০ টাকার মধ্যেই থাকবে বলে আলোচনা হয়েছে।
বাণিজ্য সচিবের সভাপতিত্বে এ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন টিসিবির চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আরিফুল হাসান, সিটি গ্রুপের পরিচালক বিশ্বজিৎ সাহা, টিকে গ্রুপ, এস আলম গ্রুপ, মেঘনা গ্রুপের প্রতিনিধি, বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন, ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি গোলাম মাওলাসহ অন্যান্য ব্যবসায়ী নেতারা।
বাংলাদেশ সময়: ১৮০৩ ঘণ্টা, আগস্ট ২৫,২০২১
জিসিজি/এএটি