ঢাকা: একটি প্রস্তাবিত প্রকল্পের আওতায় সাত দশমিক ৬১ কিলোমিটার নদীর তীর সংরক্ষণ বাবদ মোট ৪৭৯ কোটি ১৪ লাখ ২৩ হাজার টাকা ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে। ফলে প্রতি মিটার বাবদ ৬ লাখ ২৫ হাজার টাকা চেয়েছে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়।
এজন্য প্রকল্পটি নিয়ে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভার জন্য কার্যপত্র তৈরি করেছে পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, পানি সম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগ। সামনে অনুষ্ঠিত পিইসি সভায় ব্যয় প্রাক্কলনের ব্যাখ্যা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবে কমিশন।
পরিকল্পনা কমিশনে ‘মেঘনার শাখা নদীর ভাঙন থেকে হিজলা উপজেলাধীন পুরাতন হিজলা, বাউশিয়া ও হরিনাথপুর এলাকা রক্ষা’ প্রকল্পের প্রস্তাব করেছে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়। প্রকল্পের বাস্তবায়নকারী সংস্থা বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। প্রকল্পের মোট প্রস্তাবিত ব্যয় ৫৪৯ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। মার্চ ২০২১ থেকে ২০২৩ সালের জুন নাগাদ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে।
এদিকে প্রস্তাব অযৌক্তিক মনে করে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়। এ কারণে পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, পানি সম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের সদস্য (সচিব) রমেন্দ্র নাথ বিশ্বাসের সভাপতিত্বে প্রকল্পটি নিয়ে পিইসি সভা অনুষ্ঠিত হবে। ব্যয় নির্ধারণের বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের কাছে জানতে চাইবে পিইসি সভা। পিইসি সভায় পরিকল্পনা কমিশন, অর্থ বিভাগ ও বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগের প্রতিনিধি সভায় উপস্থিত থাকবেন।
কৃষি, পানি সম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের প্রধান (অতিরিক্ত সচিব) মো. মতিউর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, তারা নিজেরা (পাউবো) প্রকল্প তৈরি করলে হবে না। তৃতীয় পক্ষ দিয়ে সঠিকভাবে ফিজিবিলিটি স্টাডি করে প্রকল্পের ডিপিপি প্রণয়ন করতে হবে। এ বিষয়ে পিইসি সভায় আলোচনা হবে। প্রকল্পের ডিপিপিতে বেশ কিছু খাতের ব্যয় নিয়ে প্রশ্ন আছে। এগুলোর যৌক্তিকতা নিয়ে আলোচনা করে ব্যয় যৌক্তিকভাবে নামিয়ে আনা হবে।
প্রকল্পের আওতায় ৩টি মোটরযান (মোটরসাইকেল ১৫০ সিসি, রেজিঃসহ) ক্রয় বাবদ ৫ লাখ ৪০ হাজার টাকা এবং ১টি ডাবল কেবিন পিকআপ বাবদ ৪৯ লাখ টাকার সংস্থান রাখা হয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় এসব ব্যয়ের বিষয়ে সভায় আলোচনা করে পরিমাণ ও ব্যয় যৌক্তিকভাবে নির্ধারণ করা যেতে পারে বলে জানায় কমিশন। প্রকল্পের আওতায় বৃক্ষ, শস্য ও উদ্ভিদ সম্পদ উৎপাদনকারী আবর্তক পণ্য বাবদ ২০ লাখ টাকার সংস্থান রাখা হয়েছে। এ ব্যয় প্রাক্কলনের ভিত্তি পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে জানতে চেয়েছে কমিশন। এছাড়া এ কাজের প্রকৃতি এবং এর প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে পিইসি সভায় আলোচনা করা যেতে পারে বলে মত দিয়েছেন তারা।
পরিপত্র অনুযায়ী ১শ কোটির অধিক ব্যয়ের প্রকল্পের ক্ষেত্রে আবশ্যিকভাবে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা করার প্রয়োজন। কিন্তু প্রকল্পটি গ্রহণে পরিপূর্ণ সম্ভাব্যতা যাচাই ও সমীক্ষা করা হয়নি বলে জানায় কমিশন।
প্রকল্পের আওতায় ৫ দশমিক ৩০ কিলোমিটার বা ৩৭ দশমিক ৪৬ লাখ ঘনমিটার নদী ড্রেজিং বাবদ ৬৩ কোটি ৮৮ লাখ ৯৩ হাজার টাকার সংস্থান রাখা হয়েছে। ফলে প্রতি ঘনমিটার বাবদ ১৭১ টাকা সংস্থান রাখা হয়েছে। নদী ড্রেজিংয়ের প্রয়োজনীয়তা ও ব্যয় প্রাক্কলনের ভিত্তি পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়কে ব্যাখ্যা করতে বলা হয়েছে। নদীর তলদেশের গভীরতা পিডব্লিউডি রেভারেন্স লেভেল (পিডাব্লিউডিআরএল) থেকে বর্তমান কত মিটার এবং পিডাব্লিউডিআরএল থেকে কত মিটার গভীর পর্যন্ত ড্রেজিং করা হরব তা উল্লেখসহ নদী ড্রেজিংয়ের দৈর্ঘ্য, প্রস্থ, গড় গভীরতাসহ এর মাটির মোট পরিমাণ ও ব্যয় ডিপিপিতে উল্লেখ করা প্রয়োজন বলে জানায় কমিশন।
প্রকল্পের আওতায় কাজ চলাকালীন পরিচালন ও রক্ষণাবেক্ষণ বাবদ ২ কোটি টাকার বরাদ্দ রাখা হয়েছে, যা সভায় আলোচনা করে নির্ধারণ করার কথা বলা হয়েছে কোভিড -১৯ পরিস্থিতিতে রাজস্ব ব্যয় যতটা সম্ভব সাশ্রয় করা প্রয়োজন বলে জানায় কমিশন।
প্রকল্পের আওতায় অভ্যন্তরীণ ভ্রমণ ব্যয় বাবদ ৮ লাখ টাকা, পেট্রোল ও লুব্রিকেন্ট বাবদ ১০ লাখ টাকা, মুদ্রণ ও বাঁধাই বাবদ ৩ লাখ টাকা, প্রচার ও বিজ্ঞাপন ব্যয় বাবদ ৩ লাখ টাকা, স্ট্যাম্প ও সিল বাবদ ২ লাখ টাকা, শ্রমিক মজুরি (সরকারি কর্মচারী ব্যতীত) বাবদ ১০ লাখ টাকা, সম্মানী ভাতা (পিএসসি, পিআইসি, টিইসি, টিওসি ইত্যাদি) বাবদ ৬ লাখ টাকা, জরিপ বাবদ ৯ লাখ টাকা, সাধারণ সরবরাহ বাবদ ৩ লাখ টাকা মোটরযান মেরামত বাবদ ৩ লাখ টাকা, আবাসিক ভবন মেরামত বাবদ ৫০ লাখ টাকার সংস্থান রাখা হয়েছে।
এছাড়া মধ্যমেয়াদি মূল্যায়ন বাবদ ১০ লাখ টাকা রাখাসহ এসব ব্যয়ের বিষয়ে পিইসি সভায় আলোচনা করে পরিমাণ ও ব্যয় যৌক্তিকভাবে নির্ধারণ করার সুপারিশ করেছে পরিকল্পনা কমিশন।
প্রকল্পের আওতায় ফিজিক্যাল কন্টিনজেন্সি বাবদ ১ কোটি টাকা এবং প্রাইস কন্টিনজেন্স বাবদ ১ কোটি টাকার সংস্থান রাখা হয়েছে। এ ব্যয়ও যৌক্তিক পর্যারয় নির্ধারণ করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে সুপারিশ করা হয়েছে।
পাউবো সূত্র জানায়, প্রকল্পের অন্যতম উদ্দেশ্য হচ্ছে বরিশাল জেলার হিজলা উপজেলাধীন পুরাতন হিজলা, বাউশিয়া ও হরিনাথপুর এলাকা মেঘনার শাখা নদীর ভাঙন হতে রক্ষা করা, পরিবেশের বিরূপ প্রভাব থেকে প্রকল্প এলাকার পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করা, নদী ভাঙনের জন্য প্রকল্প এলাকার পরিবেশগত ক্ষয়ক্ষতির সঙ্গে আর্থ-সামাজিক ক্ষতি হ্রাস করা অন্যান্য ক্ষেত্রে টেকসই উন্নয়ন অব্যহত রাখা। নদীর গতিপথ পরিবর্তন প্রতিরোধ করা এবং আনুমানিক ৩ হাজার ৩৪১ কোটি ১৪ লাখ টাকার সম্পদ রক্ষা করা।
বাংলাদেশ সময়: ২০০২ ঘণ্টা, আগস্ট ২৫, ২০২১
এমআইএস/এএটি