খুলনা: '২৫-২৬ বছর ধরে সুন্দরবনের কোল ঘেঁষা শিবসা নদীতে ইলিশ মাছ ধরে আসছি। এবারও অনেক স্বপ্ন নিয়ে প্রায় দুই লাখ টাকা খরচ করে নৌকা মেরামত ও জাল কিনেছিলাম।
ইলিশের ভরা মৌসুমে এমন হতাশার কথা জানালেন খুলনার পাইকগাছার উত্তর কোমখালি গ্রামের জেলে আলী হামজা।
তিনি বলেন, সুন্দরবনের নদ-নদী ইলিশের খনি হিসেবে পরিচিত থাকলেও এবার মিলছে না ইলিশ। যেটুকু মিলছে তাতে ট্রলার ও তেলের খরচ উঠছে না। ফলে অলস সময় কাটাতে হচ্ছে। মোংলার চিলা ইউনিয়নের সুন্দরতলা গ্রামের জেলে বিজন বৈদ্য বলেন, প্রতি বছর ইলিশের মৌসুমে সুন্দরবনের নদ-নদীতে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়ে কিন্তু এবার জাল ফেললে ইলিশের দেখা মিলছে না। ৪ মাস ধরে পশুর নদে ড্রেজিংয়ের কাজ চলছে। যার বিকট শব্দে নদীতে মাছ প্রবেশ করতে পারছে না। এছাড়া নদ-নদীর গভীরতা কমে গেছে। বঙ্গোসাগর থেকে পশুর নদ ও শিবসা নদীর শুরুর স্থানে ডুবোচর পরার কারণে এবার ইলিশ মাছ নদীতে আসতে পারছে না। এর কারণে জেলেরা কাঙ্ক্ষিত ইলিশ মাছ পাচ্ছে না। চিলা ইউনিয়নে প্রায় ১ হাজার জেলে পরিবারের এবার চলছে হাহাকার।
ভরা মৌসুমে ইলিশ না পেয়ে খালি নৌকা ও ফিশিং ট্রলার নিয়ে ফিরে আসছেন সুন্দরবন সংলগ্ন বিভিন্ন উপজেলার জেলেরা। চলতি মৌসুমে ইলিশ শিকারের আশায় জাল, নৌকা ও ট্রলার নিয়ে দলবেঁধে নদীতে ছুটছেন তারা। কিন্তু কাঙ্ক্ষিত ইলিশের দেখা মিলছে না।
জেলেরা জানান, ভরা মৌসুমে নৌকা নিয়ে নদীতে নেমে খালি হাতে বাড়ি ফিরতে হচ্ছে। নৌকা ও ট্রলারের জ্বালানি ও ভাগিদারের খাওয়ার খরচের টাকাই উঠছে না। এতে অনেক ক্ষতির মুখে পড়েছেন তারা।
আবার কেউ কেউ বলছেন, ঋণ নিয়ে ইলিশ শিকারে যারা নেমেছেন, অথচ জালে ধরা পড়ছে না ইলিশ। তাদের দিন দিন সুদ বাড়ছে। নদী চষে বেড়ালেও জালে মিলছে না কাঙ্ক্ষিত ইলিশ। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সুন্দরবনে পানিতে লবণাক্ততা বেড়ে গেছে। নদীগর্ভে পলিও জমছে অধিকহারে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে নদীগুলোর গভীরতা কমছে। এছাড়া সুন্দরবন সংলগ্ন শিবসা ও পশুর নদেও ডুবোচরের মাত্রা বাড়ছে। সেসঙ্গে বাড়ছে তেল ও শব্দ দূষণ। সুন্দরবন সংলগ্ন নদ-নদীতে অসাধু জেলেদের বিষ দিয়ে মাছ ধরছে। এই বিষে পানি দূষিত হয়ে যাচ্ছে। তাই নদীতে ইলিশ বড় হলেও তারা ওই পানির ভয়ে অন্য রুটে চলে যাচ্ছে। এ কারণে ইলিশের ভরা মৌসুমেও কাঙ্ক্ষিত ইলিশের দেখা মিলছে না।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী বাগেরহাট-৩ (মোংলা-রামপাল ) আসনের সংসদ সদস্য বেগম হাবিবুন নাহার বাংলানিউজকে বলেন, ইলিশ যে নিরিবিলি পরিবেশে ডিম ছাড়তে পছন্দ করে সুন্দরবনের নদ-নদীর এখন সে পরিবেশ নেই। সুন্দরবনের ওপর মানুষের অত্যাচার বেড়ে গেছে। যে কারণে বন বিভাগ কঠোর হয়েছে। নিরিবিলি পরিবেশ না পেয়ে ইলিশ অন্য দিকে চলে যাচ্ছে। এছাড়া কিছু অসাধু লোক বনের নদীতে বিষ দিয়ে মাছ শিকার করে। এতে সুন্দরবনের মাছের প্রজাতি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ১০২৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০২, ২০২১
এমআরএম/এএটি