ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

এক লিটার সয়াবিন তেল এখন ১৫৩ টাকা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১১৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৫, ২০২১
এক লিটার সয়াবিন তেল এখন ১৫৩ টাকা প্রতীকী ছবি

ঢাকা: বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুরোধে সয়াবিন তেলের দামে গত জুন মাসে দেওয়া লিটারপ্রতি চার টাকা ছাড় তুলে নিয়েছে বিপণনকারী কোম্পানিগুলো। ফলে মে মাসে নির্ধারিত এক লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৫৩ টাকা দামেই সাধারণ মানুষকে খেতে হবে।

 

রোববার (০৫ সেপ্টেম্বর) বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে দেশের বিপণনকারী কোম্পানিগুলো সঙ্গে তেলের দাম নির্ধারণ সংক্রান্ত বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।  

জানা গেছে, নতুন দাম অনুযায়ী, খুচরা বাজারে পাঁচ লিটারের এক বোতল সয়াবিন তেল ৭২৮ টাকা ও এক লিটার খোলা সয়াবিন তেল ১২৯ টাকা দিয়ে কিনতে হবে। আর পাম সুপার তেলের প্রতি লিটারের দাম হবে ১১৬ টাকা।

এ বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বাংলানিউজকে বলেন, তেলের দাম নির্ধারণী বৈঠক হয়েছে আজকে। সেখানে আমরা যেটা করেছি, সেটা হলো গত মে মাসে আমরা একটা দাম নির্ধারণ করেছিলাম। এরপর জুন মাসে কোরবানি ও কোভিডের জন্য ব্যবসায়ীদের অনুরোধ করেছিলাম। তখন ব্যবসায়ীরা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুরোধে তেলের দাম প্রতি লিটারে ৪ টাকা ছাড়া দিয়েছিল।  

তিনি বলেন, বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বিবেচনা করে গত মে মাসে তেলের যে দাম নির্ধারণ করা হয়েছিল, সে দামই পুনঃনির্ধারণ করা হয়েছে। অর্থাৎ প্রতি লিটার বোতলজাত তেলের দাম ১৫৩ টাকা, ৫ লিটার বোতলজাত তেল ৭২৮ টাকা ও খোলা প্রতি লিটার ১২৯ টাকা করা হয়েছে। আর পাম সুপার তেলের প্রতি লিটারের দাম হবে ১১৬ টাকা। আমরা মে মাসের দামটাই রেখেছি। ব্যবসায়ীরা লিটারে ৪ টাকা ছাড় দিয়েছিল, সেটা উঠিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। মূলত তেলের দাম বাড়েনি, দাম পুনরায় নির্ধারণ করা হয়েছে। চার টাকা ছাড় তুলে নিয়ে মে মাসে পূর্বের দামেই নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে।  

তিনি বলেন, চিনির দাম নিয়ে শিগগিরই একটা ভালো খবর শুনতে পারবেন। আগামী দুই-এক দিনের মধ্যেই ব্যবসায়ীদের নিয়ে বৈঠকে বসব। সে বৈঠকেই চিনির দাম পুনরায় নির্ধারণ করা হবে।  

সিটি গ্রুপের পরিচালক বিশ্বজিত সাহা বাংলানিউজকে বলেন, আজ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে ব্যাবসায়ীদের নিয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে তেলের দাম লিটারে ৪ টাকা বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তেলের দাম বাড়ানোর ক্ষমতা আমাদের নেই। সরকার তেলের দাম বাড়িয়েছে। মূলত গত জুন মাসে সরকারের অনুরোধে লিটারপ্রতি চার টাকা ছাড় দেওয়া হয়েছিল। এখন আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বৃদ্ধির ফলে আমরা দাম বাড়ানোর অনুরোধ করলে সরকার আগের দেওয়া ৪ টাকা ছাড় উঠিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত দিয়েছে।  

তিনি বলেন, বৈঠকে চিনির দামও বাড়ানোর জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছিল। আমরা চিনির দাম প্রতি কেজি ৯১ টাকা নির্ধারণের কথা বলেছি। তবে এ বিষয়ে আজ কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। আগামী ৭ বা ৮ সেপ্টেম্বর আবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বসে চিনির মূল্য নির্ধারণ করা হবে বলে জানান তিনি।  

প্রসঙ্গত, ভোজ্যতেল পরিশোধন ও বিপণনকারীদের সংগঠন বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন গত ৩০ জুন সয়াবিন তেলের দাম ৪ টাকা কমানোর কথা জানিয়েছিল। তখন বলা হয়েছিল, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে পবিত্র ঈদুল আজহা, করোনাভাইরাস পরিস্থিতি ও ভোক্তার ক্রয়ক্ষমতা বিবেচনা করে সয়াবিন, পাম ও অন্যান্য ভোজ্যতেলের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে।

এর আগে গত ২৭ মে সয়াবিন তেলের দাম এক লাফে ৯ টাকা বাড়ানো হয়েছিল। তাতে বোতলজাত এক লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ১৪৪ টাকা থেকে বেড়ে লিটারপ্রতি ১৫৩ টাকা হয়। এবার আবার দর ১৫৩ টাকায় ফিরল।

দেশে গত এক দশকের মধ্যে ভোজ্যতেলের সর্বোচ্চ দাম ছিল ২০১২ সালের মাঝামাঝি। ওই বছর বোতলজাত সয়াবিনের দাম প্রতি লিটার ১৩৫ টাকায় বিক্রি হয়েছিল।

ভোজ্যতেলের দাম বাড়ার জন্য আন্তর্জাতিক বাজারকে দায়ী করছেন ব্যবসায়ীরা। তাদের দাবি, দেশের সয়াবিনের উৎস ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা ও প্যারাগুয়েতে সয়াবিনের দাম বাড়ছেই। দাম বাড়ার কারণ চীনের আগ্রাসী কেনা এবং সরবরাহে টানা। এজন্য তারা গত মাসেই দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছিল।

এদিকে, ভোজ্যতেলের দাম কমাতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কর ছাড়ের অনুরোধ জানিয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) চিঠি দিয়েছিল। তবে সরকার অগ্রিম মূল্য সংযোজন কর (মূসক/ভ্যাট) আদায় থেকে অব্যাহতি দেয়।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, এতে দামে প্রভাব পড়ার সুযোগ কম। পার্থক্য এটুকুই যে, এখন ভ্যাট পরে দিতে হচ্ছে, আগে অগ্রিম নেওয়া হতো। কোম্পানিগুলো ভ্যাট ছাড়ের দাবি করে বলছে, এখন এক লিটার তেলে ভ্যাট ২০ টাকার মতো। পাঁচ লিটারে তা ১০০ টাকা দাঁড়ায়। বিশ্ববাজারে দাম যত বাড়ে, সরকারের করের পরিমাণও বাড়ে।

বাংলাদেশ সময়: ২১১৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৫, ২০২১
জিসিজি/জেএইচটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।